মানবজমিনকে মনজুর- ৫০ বছরে এমন ন্যক্কারজনক ভোট দেখিনি by মহিউদ্দীন জুয়েল

এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। জোর করে জনগণের ভোট কেড়ে নেয়া হয়েছে। সারা দেশের মানুষ এই লজ্জার চিত্র দেখেছে। তারপরও আমি কিভাবে রাজনীতি করবো। যে নির্বাচন কমিশন মানুষের ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করতে পারে না সেই প্রতিষ্ঠানের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশার কিছু নেই।
গতকাল দুপুরে নিজ বাসভবনে মানবজমিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম। ভোট কারচুপির চিত্র দেখে শুধু নির্বাচন বর্জন নয়, রাজনীতি ছাড়তেও ঘোষণা দেন সাবেক এই মেয়র।
মানবজমিন: আজ (গতকাল) যে ভোট হলো সেই ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?
মনজুর: দুঃখজনক। আমি বিস্মিত। হতভম্ব। ৭১৯ ভোট কেন্দ্রের ৬৪০টির বেশিতে সরকারদলীয় প্রার্থীর লোকজন হামলা চালিয়ে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়েছে। অনেক জায়গায় জালভোটের মহোৎসব দেখা গেছে। আপনাদের মিডিয়াতে এসব চিত্র দেখেছে পুরো দেশের জনগণ। কিভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা যায় তা দেখা গেলো আজ।
মানবজমিন: এমনটা কেন মনে হচ্ছে? নাছির তো বলেছেন আপনি নিশ্চিত হার মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাড়াঁনোর ঘোষণা দিয়েছেন।
মনজুর: আমার ৫০ বছরের রাজনীতির জীবনে এমন ন্যক্কারজনক ভোট আগে কখনও দেখিনি। ৫ই জানুয়ারির ভোটের পর ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায় সূচিত হলো। সকাল ৮টা থেকে আমার মোবাইলে ফোন আসতে শুরু করে। এজেন্টরা জানায় তাদেরকে বের করে দিচ্ছে। আমি ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখি সেখানে মানুষ ভোট দিতে পারছে না। এই অবস্থায় গণতন্ত্রের সম্মান রক্ষার্থে আমি নির্বাচন বয়কট করেছি।
মানবজমিন: নির্বাচন বয়কটের ঘোষণায় আপনি বলেছেন রাজনীতি করবেন না। এমন ঘোষণা কেন দিলেন?
মনজুর: যখন শুনতে শুরু করলাম ৮০ শতাংশ কেন্দ্র দখল হয়ে গেছে, বোমাবাজি হচ্ছে, এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছে তখন আমি বিষয়টি নোমান ভাইকে (ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান) বললাম। এই সময় তিনি বললেন, অনেক কেন্দ্রে লোকজনকে মারধর করা হচ্ছে। তাদের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না। তারপর তার সঙ্গে কথা বলে নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। কলুষিত এই রাজনীতিতে গণতন্ত্রের চর্চা বৃথা। সকাল বেলায় ভোট দিতে যাওয়ার আগেই শুনলাম অনেক জায়গায় পিস্তল ঠেকিয়ে ভোট কেড়ে নেয়া হচ্ছে।
মানবজমিন: গত নির্বাচনে আপনি ৯৫,০০০ ভোটের ব্যবধানে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়েছিলেন। এবার নির্বাচন বয়কট ঘোষণার মধ্য দিয়ে ফলাফল থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দুটি ঘটনাকে কিভাবে দেখছেন?
মনজুর: ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়েছিল। এবার সেই রকম কিছু হলে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে জিততাম। কিন্তু ভোট শুরু হওয়ার আগেই ব্যালট পেপারে সিল মারা হয়ে গেছে। তাহলে এখানে সুষ্ঠু ভোট কিভাবে হলো। এবারের নির্বাচন হচ্ছে গায়ের জোরের ভোট। অস্ত্রের ভোট। ডাকাতির ভোট।
মানবজমিন: নির্বাচন কমিশনকে আপনি পরিস্থিতির বিষয়ে অবহিত করেছেন?
মনজুর: অবশ্যই। যখন শুনলাম পাহাড়তলী, পতেঙ্গা এলাকায় জাল ভোট পড়ছে তখন রিটার্নিং অফিসারকে বিষয়টি জানাই। ওই সময় তিনি বলেন, আমি ঘটনার সত্যতা খতিয়ে দেখছি। আপনি টেনশন করবেন না। এরপর বেলা ১২টা বাজতেই ৮০ ভাগ কেন্দ্রে ভোট দখল হয়ে সিল মারা শেষ।
মানবজমিন: তার মানে আপনি বলেছেন কমিশন কোন ব্যবস্থা নেয়নি?
মনজুর: অবশ্যই না। কেবল নির্বাচন কমিশন কেন, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারাও কোন কোন কেন্দ্রে নীরব ভূমিকা পালন করেছে। আবার তারাও জাল ভোটদানে সহযোগিতা করেছে। এই দুই প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় জাল ভোট হয়েছে।
মানবজমিন: নির্বাচনের আগে ৫৯১টি ভোটকেন্দ্রে নজরদারি বাড়ানোর দাবি উঠেছিল। এসব কেন্দ্রে পুলিশ প্রশাসন বলেছিল নজরদারি বাড়ানো হবে। তখন কেন নির্বাচন বয়কট ঘোষণার দাবি আসেনি আপনাদের কাছ থেকে?
মনজুর: দেখুন এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হতে পারে না। তার সর্বশেষ নজির এই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আমরা জনগণের দাবির মুখেই নির্বাচনে গিয়েছিলাম। ৫ই জানুয়ারিতে ভোট দিতে না পেরে তাদের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করছিল। এবার সেই ভোট কেড়ে নেয়ায় ক্ষোভ আর বাড়লো। কিন্তু এই ক্ষোভ বিস্ফোরিত হলে হয়তো সরকারের অস্তিত্ব থাকবে না।
মানবজমিন: আ জ ম নাছির বলেছেন, তিনি মেয়র হলে আপনার সব কাজের হিসাব প্রকাশ করবেন। আপনি কি বলবেন?
মনজুর: করপোরেশনে থাকার সময় আমি খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। সরকারের অসহযোগিতার পরও অনেক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার মধ্যে মানুষের সেবা করার চেষ্টা করেছি। যেদিন দায়িত্ব থেকে বিদায় নেবো সেদিনও সহকর্মী ও লোকজনেরা কান্না করেছে। নগরবাসীর উন্নয়ন করেছি বলে আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে বুদ্ধি পরামর্শ পেয়েছি।

No comments

Powered by Blogger.