যে কোন উপায়ে জয় আদৌ জয় নয় -মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, যে কোন উপায়ে জয় আদৌ কোন জয় নয়। বাংলাদেশের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে গতকাল এক টুইট বার্তায় তিনি একথা বলেন। এদিকে বিকালে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তার ব্যাপক ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। ওই বিবৃতিতে বিএনপির নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের হতাশার কথাও উল্লেখ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যেসব অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি। আইনের আওতায় থেকে কাজ করার জন্য এবং যে কোন ধরনের সহিংসতা এড়ানোর জন্য সকল পক্ষের প্রতি আহ্বানও জানানো হয় দূতাবাসের বিবৃতিতে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে কোন ধরনের সহিংসতার আশ্রয় গ্রহণের তীব্র নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিক্যাট আজ বনানী
বিদ্যানিকেতন স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ছবি: ফোকাস বাংলা
রাষ্ট্রদূতের ভোট পর্যবেক্ষণ: এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর একটি কেন্দ্রে ভোট পর্যবেক্ষণ করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে গভীর হতাশা প্রকাশ করেন। ওই সব ঘটনাকে দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সকাল সাড়ে ১১টার অল্প আগে রাষ্ট্রদূত বানানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে যান। সেখানে প্রায় ৪০মিনিট অবস্থান করেন তিনি। এ সময় কেন্দ্র-১ এর প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে আলাপ ছাড়াও পুরুষ ও মহিলা দুটি বুথ পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রদূত। ওই দুই বুথে প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করে ২ জন করে চার জন প্রার্থীর ভোট প্রদান প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করেন তিনি। রাষ্ট্রদূত বুথ দুটির নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের (বাস প্রতীক) কোন এজেন্টের দেখা পাননি তিনি। বুথ পরিদর্শন শেষে বিদ্যালয়ের আঙিনায় রাষ্ট্রদূত যখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি সেই সময়ই খবর আসে ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগে চট্টগ্রামের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। একই অভিযোগে ঢাকার দুই সিটির বিরোধী প্র্রার্থীরাও নিজের প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উপস্থিত সাংবাদিকরা বিষয়টি রাষ্ট্রদূতের নজরে এনে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাবে বার্নিকাট বলেন, আবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। জনগণও তাই চাইছে। যারা ভোট দিতে বেরিয়েছে তাদের নির্বিঘ্ন ভোট প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। আমি খুশি যে অনেকে ভোট দিতে এসেছে। আমি আশা করবো অর্থপূর্ণ একটি নির্বাচনের ওই সব ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টরা সচেষ্ট হবেন। এ সময় রাষ্ট্রদূত তার দেশের প্রসঙ্গ তুলে জানতে চান- যুক্তরাষ্ট্রে কোন নির্বাচনে ভোটাররা ভোট প্রদানে বাধা প্রাপ্ত হলে তারা পরবর্তীতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পান, বাংলাদেশে এমনটি হয় কি-না? ‘না’ সূচক উত্তর পেলে রাষ্ট্রদূত বলেন, অভিযোগের বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনের খতিয়ে দেখা উচিত। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ফলে রাজনীতিতে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি আশা করি কেউ সহিংসতার পথে যাবে না। এখানে গণতন্ত্র আছে। গণতন্ত্রে ভিন্ন মত প্রকাশের সুযোগও রয়েছে। আশা করি সবাই সেটির সদ্ব্যবহার করবেন। এর আগে সোমবার এক টুইট বার্তায় বার্নিকাট একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। আশা করি এই চেতনার একটি নমুনা হবে মঙ্গলবারের নির্বাচন।
অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের আহ্বান বৃটেনের: এদিকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের সকল অভিযোগ দ্রুত এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাই কমিশনার রবার্ট ডব্লিউ গিবসন। এ ছাড়া নির্বাচন থেকে মাঝ পথে বিএনপির সরে দাঁড়ানোয় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে এতে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সহিংসতা বা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী কোন ঘটনা ঘটবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কূটনীতিক। বিএনপির ভোট বর্জনের পরপরই ঢাকার বৃটিশ হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত। বৃটেন মনে করে সকল ভোটারের গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রদান নিশ্চিত করা সব রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমূহের দায়িত্ব। যারা নির্বাচনে জিতবেন তাদের স্ব-স্ব শহরের অধিবাসীদের প্রয়োজন এবং ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের সেবা প্রদানের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত বলেও মন্তব্য করা হয় হাই কমিশনের ওই বিবৃতিতে।
হাই কমিশনারের ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন: এর আগে গতকাল সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি বয়েজ স্কুল কেন্দ্রে ভোট পর্যবেক্ষণ করেন ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসন। সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখেন তিনি। বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। আমি প্রিজাইডিং আফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন কোন গোলযোগ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বিরোধী প্রার্থীর পালিং এজেন্টদের না থাকার বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন এটি প্রার্থীদের বিষয়। তারা ঠিক করবে কোথায় কাকে পোলিং এজেন্ট দেবে। আমি এর আগে তিনটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি এবং কিছু পোলিং এজেন্ট দেখেছি। উল্লেখ্য, কেবল যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যই নয়, ঢাকাস্থ বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত সরাসরি কিংবা প্রতিনিধি মারফত সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা নিজ নিজ দেশে রিপোর্টও পাঠাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.