‘সরকারের সব কাজকেই মানুষ দুরভিসন্ধিমূলক মনে করছে’ -আসম আবদুর রব by কাজী সুমন

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব বলেছেন, ৫ই জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় জনগণ সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তাই বর্তমান সরকারের সব কাজই এখন দুরভিসন্ধিমূলক মনে করছে। মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সেক্টর কমান্ডারদের পাকিস্তানের চর আখ্যায়িত করে মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব ও মর্যাদা নষ্টের জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। জেএসডি সভাপতি বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগ জোটের বিরুদ্ধে নতুন রাজনৈতিক ‘বিকল্প শক্তি’র অপেক্ষায় আছে। বিকল্প জোট এবং সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে জনগণ আন্দোলন সংগঠিত করবে এবং ভোটের রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন হবে। নতুন রাজনৈতিক ধারা গণমুখী ধারার উন্মেষ ঘটবে। মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনাপতি এ কে খন্দকারের সদ্য প্রকাশিত বই সম্পর্কে আসম রব বলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন যা জাতির জন্য গৌরবের। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে ব্যাপক কর্মকাণ্ডের এবং সমগ্র জনগোষ্ঠীর যৌথ ফসল। সুতরাং প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে কত অসংখ্য ঘটনা, বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতিরত স্রোতধারাগুলি একই স্রোতধারায় একত্রিত হয়েছে-একই লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি ‘জাতি রাষ্ট্র’ নির্মিত হয়েছে। অনেকের পক্ষেই অনেক কিছু জানা সম্ভব নয়। কারও অজ্ঞতা বা সীমাবদ্ধতা ইতিহাসের দায় নয়। আর ভিন্নমত হলেই ‘দেশদ্রোহী’ ‘পাকিস্তানের চর’ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ নিজেদের দুর্বলতাই প্রকাশ করে। তিনি বলেন, সেক্টর কমান্ডারদের ‘পাকিস্তানি চর’ বলে মুক্তিযুদ্ধকে চূড়ান্ত অপমান করা আওয়ামী সংস্কৃতি কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ সব করে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব ও মর্যাদা বিনষ্ট করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি ও আওয়ামী লীগ দায়ী। আওয়ামী লীগ অন্যের অবদানকে স্বীকার করার মতো উন্নততর নৈতিক শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে না। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার সমালোচনা করে আসম রব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার হচ্ছে গণমাধ্যম তথা গণবিরোধী। গণমাধ্যম যেন সত্য প্রকাশ করতে না পারে-সেজন্য এ নীতিমালা। এ সরকার সত্য এবং জনগণ দু’টো বিষয়কে বিসর্জন দিয়েছে। তারা মিথ্যার আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত। ৫ই জানুয়ারি সকল গণমাধ্যম বললো-৫ ভাগ ভোট পড়েনি সেখানে সরকার বলছে-৪০ ভাগ ভোট পড়েছে। এটা কত বড় প্রতারণা! সুতরাং এই সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চায়-তা হাস্যকর। তিনি বলেন, এটা শুধু গণমাধ্যম নয়, জনগণের ভোটচুরি, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়-বিনা নির্বাচনে অস্ত্র-প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ক্ষমতা জবরদখলের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তিবিশেষও যাতে সমালোচনা না করতে পারে, সেজন্য ১৬ কোটি মানুষের মুখে তালা ঝোলানো।
বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধান সংশোধন সম্পর্কে আসম রব বলেন, সরকারের যে কোন কাজ এখন জনগণের কাছে দুরভিসন্ধিমূলক প্রতীয়মান হচ্ছে। কারণ সরকার জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এ সরকার দিন দিন স্বৈরাচারীই হতে পারবে, গণতান্ত্রিক হতে পারবে না। রাজাকারদের যেমন রাজাকারি করা ছাড়া বিকল্প নেই তেমনি আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক রাস্তায় তারা প্রাচীর দিয়ে দিয়েছে। সুতরাং আওয়ামী লীগ আর গণতান্ত্রিক রাস্তায় চলতে পারবে না আপাতত। স্বৈরাচারী হওয়া-গণবিচ্ছিন্ন হওয়া আওয়ামী লীগের জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়তি। মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। চুরি-হাইজ্যাক ও প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। সুতরাং জনগণের রায় নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য নতুন নির্বাচন জরুরি।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন ফ্রন্ট গঠন সম্পর্কে আ স ম রব বলেন, ফ্রন্ট গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রচলিত ও ধ্বংসগ্রস্ত শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা। আওয়ামী লীগ বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করে রাষ্ট্রকে চরম প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। রাষ্ট্র এখন জনগণের ওপর নিপীড়ন এবং নির্যাতনের হাতিয়ার। রাষ্ট্রকে ‘জনগণের রাষ্ট্রে’ রূপান্তর করার জন্যই মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল অথচ আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিসর্জন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে। আমরা রাষ্ট্রকে জনগণের মালিকানায় ফেরত দিতে চাই। রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন এনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে চাই। এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নতুন ফ্রন্টে বিকল্পধারা ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের না থাকার বিষয়ে আসম রব বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই- অপরাজনীতির বিরুদ্ধে বিকল্প শক্তি গড়ে তুলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের বাইরের সকল গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল শক্তিকে নিয়েই বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটবে। আমরা কাউকে বাদ দেবো না। বর্তমান সরকার পতনের দাবিতে নতুন ফ্রন্ট রাজপথে কর্মসূচি দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি-জনগণের সপক্ষের শক্তি তারা নিশ্চয়ই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামবে। যে দেশের মানুষ আইয়ুব-ইয়াহিয়াকে বুকের রক্ত দিয়ে বিতাড়িত করেছে সে দেশে জনগণকে প্রতারিত করে যারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আন্দোলন করবে।

No comments

Powered by Blogger.