বিশেষ দূতের কাজ কি? by নিয়াজ মাহমুদ

৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় আট মাস চলে গেছে। এই সময়ে তিনি কি দায়িত্ব পালন করেছেন এ নিয়ে প্রশ্ন সর্বত্র। বিশেষ দূত হিসেবে নিজের দায়িত্ব কি তা জানতে একবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও গিয়েছিলেন এরশাদ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে সময় তাকে কিছু জানাতে পারেনি। দায়িত্ব পাওয়ার পর এরশাদ ব্যক্তিগত সফরে একবার ভারত গেছেন। পার্টি প্রধান হিসেবে চীন যাবেন। কিন্তু বিশেষ দূত হিসেবে তিনি এখন পর্যন্ত বিদেশ সফরে যাননি। নিজের দায়িত্ব নিয়ে এমন দোলাচলে থাকলেও এরশাদ শুরু থেকেই মন্ত্রী মর্যাদায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। তার পেছনে সরকারি কোষাগার থেকে মাসিক খরচ প্রায় ৫ লাখ টাকা। গত আট মাস ধরে  জাপা চেয়ারম্যান মাসিক বেতনসহ সরকারি সব  সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একজন পূর্ণমন্ত্রীর বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তিনি। নিয়মিত তুলছেন বেতন। সরকারি পাজেরো গাড়ির পাশাপাশি তার জন্য রয়েছে ৯ জন ব্যক্তিগত স্টাফ। জাতীয় সংসদে একটি অফিস। এরশাদের ব্যক্তিগত সচিব মেজর (অব.) খালেদ আক্তার এরশাদের বেতন উত্তোলনের বিষয়টি মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন। ১২ই জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পান এরশাদ। এর ৫৩ দিন পর ৫ই মার্চ তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন নিজের কাজ সম্পর্কে জানতে। যদিও মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কেউ এরশাদকে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেনি। বলা হচ্ছিল মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে সরকারের দূত হিসেবে এরশাদ সফর করবেন। এবং এসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবেন। কিন্তু এ পর্যন্ত এমন কোন উদ্যোগও দেখা যায়নি। কয়েক মাস আগে কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছিলেন মাত্র। সম্প্রতি দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নাজেহাল জাপা দৃশ্যত দুইভাগে বিভক্ত। এমন অবস্থায় বেশ কিছু দিন ধরে বিরোধী দলে থেকে সরকারের অংশ নেয়ার সমালোচনা এড়াতে দলীয় মন্ত্রীদের পদত্যাগের কথা বলা হচ্ছিল দলে। এরশাদ নিজেও একাধিকবার এ বিষয়ে কথা বলেন। মন্ত্রীদের পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা চলাকালেই দলের মন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা প্রশ্ন তুলেন মন্ত্রীদের পদত্যাগের আগে এরশাদকেই পদত্যাগ করতে হবে। কারণ, তিনিও মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে আছেন। বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের অনুসারী নেতারাও এমন যুক্তি দিচ্ছেন। এমন অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- মন্ত্রীরা নিজ নিজ দপ্তর চালালেও মন্ত্রী মর্যাদার বিশেষ দূতের কাজ কি? ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও নানা নাটকীয়তার পর গত বছর ১২ই ডিসেম্বর রাতে এরশাদকে বাসা  থেকে সিএমএইচএ নেয়া হয়। পরে রংপুর ৩ আসন থেকে এমপি হিসেবে শপথ নেন তিনি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে সিএমএইচ থেকে বাসায় ফেরেন এরশাদ। নির্বাচন বর্জন করলেও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ৪০ জন এমপি হয়েছেন। এদিকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিলেও এরশাদ ক্ষণে ক্ষণে সরকারেরই সমালোচনা করছেন। তিনি দাবি করছেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি ব্যর্থ। তিনি বলছেন, দেশে সুশাসন নেই। মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। আইনের শাসন অনুপস্থিত। এভাবে দেশ চলতে পারে না। নিজের পদ নিয়ে নিজ দলেই যখন প্রশ্নের মুখে তখন হঠাৎ করেই দলের প্রেসিডিয়াম থেকে দুই প্রভাবশালী নেতাকে বহিষ্কার করেন তিনি। তাদের একজন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এবং অন্যজন বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। এই বহিষ্কারের ঘটনা দলে নতুন করে টানাপড়েনের সৃষ্টি করে। বিরোধী দলের উপনেতা নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হলেও এখন তা রওশন এবং এরশাদের ক্ষমতার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। যদিও এরশাদ দাবি করছেন জাতীয় পার্টিতে কোন বিরোধ নেই। তার নেতৃত্বেই পার্টি চলছে।

No comments

Powered by Blogger.