ভাঙনের মুখে বিএনপি জোট by সেলিম জাহিদ

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার আগেই বিএনপিকে মানসিকভাবে দুর্বল বা নিঃসঙ্গ করার লক্ষ্যে জোটে ভাঙন ধরাতে সরকারের পক্ষে তৎপরতা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জোটের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, বিএনপি জোট থেকে অন্তত পাঁচটি শরিক দলকে বের করে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এ কাজে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি অবসরে যাওয়া একাধিক সামরিক কর্মকর্তা কাজ করছেন বলে তাঁদের কাছে তথ্য আছে। এরই মধ্যে শরিক দুটি দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়াটা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে জোটনেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ওয়াকিবহাল। তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পাল্টা কৌশল নিয়েও ভাবছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও বিএনপি এবং ১৮-দলীয় জোটে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা হয়। তখন একাধিক শরিক দলকে নির্বাচনে আনতে ওই সব দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাংসদ ও মন্ত্রী করার টোপ দেওয়া হয়েছিল। সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এখন আবার নতুন করে একই তৎপরতা গতি পেয়েছে। তবে এবার বিএনপিকে সরাসরি না ভেঙে দলটির শীর্ষ নেতাদের মামলা দিয়ে বিপর্যস্ত করার কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। পাশাপাশি বিএনপিকে মানসিকভাবে দুর্বল বা নিঃসঙ্গ করতে জোটে বড় আকারে ভাঙন ধরানোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
এর মধ্যে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি যৌথভাবে আজ শনিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছে। সংবাদ সম্মেলনে এনডিপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলমগীর মজুমদার ও ইসলামিক পার্টির মহাসচিব এম এ রশীদ প্রধান জোট ছাড়ার ঘোষণা দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত রাতে এম এ রশীদ প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি জোটে অনেক দিন ধরে আছি। সেখানে আমরা উপযুক্ত সম্মান পাচ্ছি না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেও কিছুই করতে পারলাম না। এখন দেশ-জাতির কল্যাণে এবং গণতন্ত্র রক্ষায় নতুন কিছু তো করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু চিন্তাভাবনা আছে। সংবাদ সম্মেলনে সেগুলো জানাব।’
আর আলমগীর মজুমদার আজ শনিবারই জোট ছাড়ার ঘোষণা দেবেন কি না, তা নিশ্চিত করেননি। তিনি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিনেও জোটে আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর কোনো সুরাহা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারম্যান এবং জোটের প্রধান দল বিএনপির সমালোচনা করব।’
এর মধ্যে ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আবদুল মোবিন সস্ত্রীক হজে গেছেন। আর এনডিপির চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তুজাকে বাদ দিয়েই আলমগীর মজুমদারের নেতৃত্বে দলটি জোট ছাড়ছে বলে জানা গেছে। গোলাম মোর্তুজা আজকের সংবাদ সম্মেলনকে ‘২০-দলীয় জোটকে ভাঙার চক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘কেউ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জোট ছেড়ে যেতে চাইলে যেতে পারে, তবে এনডিপির নেতা-কর্মীরা বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটেই থাকবেন। এটা আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’
এ ছাড়া জোবায়দা কাদের চৌধুরী (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বোন) ও আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগও ২০-দলীয় জোট থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে গত ২৪ আগস্ট বিএনপি জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু। তারও আগে শেখ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী-ন্যাপ) ২০-দলীয় জোট ছেড়ে যায়। যদিও শওকত হোসেন জোট ছাড়ার আগেই ১১ আগস্ট জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে তাঁকে ডাকা হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে তাঁকে বৈঠকে আসতে মানা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিএনপির জোট থেকে বের হওয়া দলগুলোকে নিয়ে ‘ডেমোক্রেটিক ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট’ নামে আরেকটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শেখ শওকত হোসেন এর নেপথ্যে কাজ করছেন। ২৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে এ জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন শওকত হোসেন।
‘ডেমোক্রেটিক ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট’-এ ২০-দলীয় জোটের আরও অন্তত তিনটি দলের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। নতুন এ জোট গঠনের নেপথ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা এ কাজের তত্ত্বাবধান করছেন এবং তিনি গত কয়েক মাসে বিএনপি জোটের শরিক একাধিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মনে হয় জোটে ভাঙন ধরাতে সরকারের ইন্ধন আছে। ভবিষ্যতে আন্দোলন এবং নির্বাচনে বিএনপি জোটকে দুর্বল করতেই এটি করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, অতীতেও এ ধরনের অনেক তৎপরতা দেখা গেছে। কিন্তু শেষ বিচারে তাতে কোনো সাফল্য অর্জিত হয় না। কারণ, জনগণ এসব বুঝতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.