জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেছেন আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দু’টি মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ গতকাল আদালতে আংশিক জবানবন্দি দেন। মাত্র ৬ মিনিটের জবানবন্দি শুনে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৩ই অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। হারুনুর রশীদ আলোচিত এই মামলার প্রথম সাক্ষী। এর আগে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের করা ৮টি আবেদনের মধ্যে ৪টি নামঞ্জুর, ২টি মঞ্জুর ও ২টি  রেকর্ডভুক্ত করেন আদালতের বিচারক। এর মধ্যে দু’টি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাতে দুটি, সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে মামলা দু’টির কার্যক্রম বাতিলের জন্য করা লিভ টু আপিলের শুনানি আগামী ১৪ই অক্টোবর ধার্য থাকায় এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ না করার একটি আবেদন খারিজ করেন আদালত। রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে কড়া নিরাপত্তায় ঢাকার তৃতীয় মহানগর বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে দু’টি মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। গতকাল বাদীর জবানবন্দির সময় এই মামলার জামিনে থাকা চার আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল, শারফুদ্দিন আহমেদ, জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান আসামির কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা দুটি মামলায় চলতি বছরের ১৯শে মার্চ অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত। এর মধ্যে এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জন এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরো তিনজন আসামি হিসেবে রয়েছেন। এ দুই মামলায় অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আপিল বিভাগে আবেদন করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেও খালেদা জিয়া দুটি রিভিশন আবেদন করেছিলেন, যেগুলো হাইকোর্টে খারিজ হয়। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে করা খালেদার আবেদন বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পূর্ব নির্ধারিত আদালত বর্জন কর্মসূচির মধ্যে গতকাল খালেদা জিয়া নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে না এসে আইনজীবীদের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর জন্য আবারও আবেদন করেন। আদালতে আসতে না পারায় তিনি এদিন ব্যক্তিগত হাজিরা মওকুফেরও আবেদন করেন। দীর্ঘ পৌনে দুই ঘণ্টা রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে বিচারক বাসুদেব রায় সময়ের আবেদন খারিজ করে সোমবারই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করতে চাইলে হট্টগোল শুরু করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তবে এসময় খালেদা জিয়ার পক্ষে নিয়মিত মামলা পরিচালনাকারী সিনিয়র কোন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজ (গতকাল) সারা দেশে আইনজীবীদের আদালত বর্জন কর্মসূচি চলছে। এখন আমরা যদি মামলার শুনানিতে অংশ নিই তাহলে এই কর্মসূচি ও আদেশের অমর্যাদা হয়। খালেদার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার উচ্চ আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম স্থগিত করার আবেদন জানান। এসময় তিনি ১৪ বিএলসি (বাংলাদেশ ল’ ক্রনিক্যালস)-এর উদাহরণ দিয়ে বলেন এই ধারা চলতি মামলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনি বলেন, এই মামলার উদ্ভূত বিষয় নিয়ে আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন করেছি। আগামী ১৪ই অক্টোবর  চেম্বার জজ আদালতে এবিষয়ে শুনানি ও আদেশ হবে আশা করছি। সে জন্য এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হোক। পৃথক আরেকটি আবেদনে তিনি বলেন, এই মামলার আসামি বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া তিনি একজন বয়স্ক মহিলা। তার নিরাপত্তার স্বার্থে আজ তিনি আদালতে হাজির হতে পারছেন না। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার আবেদন গ্রাহ্য করে সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত করা হোক। শুনানিতে মাসুদ বলেন, হরতাল কারা দিয়েছে এটা আদালতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো এই আদালতে একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের নিরাপত্তার অভাব। তিনি বলেন, আজকে সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রেখে ১৪ই অক্টোবরের পরে যেকোন দিন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু  হোক। খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে আমি কথা দিচ্ছি পরবর্তী তারিখে মামলার আসামি বেগম খালেদা জিয়াকে সশরীরে হাজির করবো। একপর্যায়ে বিচারক বলেন, মামলাতো আজকেই শেষ হচ্ছে না। অন্তত সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা যাক। শুনানিতে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, এই মামলা শুরু হয়েছে ২০১০ সালের ১৭ই জানুয়ারি। এর মধ্যে ৩৯টি তারিখ তারা মিস করেছেন। মাত্র পাঁচদিন খালেদা জিয়া হাজির থেকেছেন। এভাবে বারবার সময়ের আবেদন করা বিচারিক প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার কৌশল। তারা (আসামি পক্ষের আইনজীবী) যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতেন তাহলে উচ্চ আদালত ও এই আদালতের কার্যক্রম একই সঙ্গে চলতে পারতো। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৯ (বি) ধারার উদাহরণ দিয়ে কাজল বলেন,  প্রয়োজনে খালেদাকে পলাতক দেখিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হোক। এসময় আদালতে হট্টগোল শুরু করেন উভয়পক্ষের আইনজীবী। এরমধ্যেই  আদালত খালেদার ব্যক্তিগত হাজিরা মওকুফের আবেদন মঞ্জুর করে সাক্ষ্য শুরুর নির্দেশ দেন। মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ ১২টা ৩৯ মিনিট থেকে ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত মাত্র ৬ মিনিটের জবানবন্দিতে মামলার প্রাথমিক ইতিহাস বলতে শুরু করার পর জবানবন্দি শুনে বিচারক বাসুদেব রায় তার খাস কামরায় চলে যান। পরে তার সহকারীর মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৩ই অক্টোবর নতুন তারিখ জানিয়ে দেন।

No comments

Powered by Blogger.