সম্পর্ক জোরদারের সুযোগ ওবামার

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তো বটেই, ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার পর মোদির এটাই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে গতকাল সোমবার রাতে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল মোদির। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয়েছে। কিন্তু এশিয়ায় চীনের প্রভাব সীমিত রাখতে ভারত ও জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা ছাড়া বিকল্প কৌশল ওয়াশিংটনের হাতে নেই বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। এ কারণেই মোদির এই সফরে নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের সুযোগ ওয়াশিংটনের নেওয়া উচিত বলেন মনে করেন তাঁরা। ওবামা প্রশাসন কখনোই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়নি। নয়াদিল্লির বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি কোনো কৌশলও ছিল না ওয়াশিংটনের। বর্তমানেও ভারতের বিষয়ে মার্কিন কৌশল যেন লক্ষ্যহীন। সত্যি কথা বলতে, ওবামা প্রশাসন এখন আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও রাশিয়া নিয়েই বেশি সময় ব্যয় করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নয়াদিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক শীতল হওয়ার অন্যতম কারণ কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়ে। গত বছরের ডিসেম্বরে তাঁর বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে ভিসা জালিয়াতি ও গৃহপরিচারিকার মজুরির ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য উল্লেখের অভিযোগ ওঠে। দেবযানীকে গ্রেপ্তার ও হেনস্তা করে নিউইয়র্ক পুলিশ। ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে মুক্তি পান দেবযানী। ওই সময় নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। ভারত সরকার দেবযানীর সমমর্যাদার একজন মার্কিন কূটনীতিককে নয়াদিল্লি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
এর আগে গুজরাটে দাঙ্গার পর তো যুক্তরাষ্ট্র মোদিকে ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই দাঙ্গার সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দাঙ্গা দমনে যথাযথ ব্যবস্থা নেননি। যদিও মোদি অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। মোদি ক্ষমতায় আসার পর তাঁর ভিসার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউসে ওবামার সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে মোদির মাথায় একটা প্রশ্ন অবশ্যই আসার কথা। তা হলো যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এশিয়ায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে কি না। অনেক ভারতীয় আশঙ্কা করেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক যে পর্যায়েই নিয়ে যাক না কেন, শেষ পর্যন্ত কৌশলগত রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পৃক্ততা সীমিত পর্যায়েই রাখবে। এর কারণ হলো ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গেও কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখে ওয়াশিংটন। মোদি ক্ষমতায় আসার পর স্পষ্ট আভাস দেন, তিনি জাপানের সঙ্গে নিরাপত্তা অংশীদার জোরদারে আগ্রহী। যেটা এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের সঙ্গেও মিলে যায়। ওবামা জানেন, ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পৃক্ততার সব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তাঁর পূর্বসূরিরা কী করেছেন। ওয়াশিংটনের বিবেচনায়, ভারত মাঝেমধ্যে কঠিন ও বিতর্কিত বন্ধু হয়ে ওঠে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের এমন জটিলতা থাকলেও ভবিষ্যতে তাদের কৌশলগত সম্পৃক্ততার বিষয়টিও অনেকটা স্পষ্ট। ভারত যে যুক্তরাষ্ট্রের একুশ শতকের অন্যতম অংশীদার হতে পারে—সে বিষয়ে কিন্তু মার্কিন ডেমোক্রেটিক বা রিপাবলিক নেতাদেরও মতৈক্য রয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের এটাই সময় ওবামার।

No comments

Powered by Blogger.