ছাত্রলীগের অস্ত্র প্রশিক্ষণ -সরকার দায় এড়াবে কীভাবে?

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচিত অস্ত্র প্রশিক্ষণের ঘটনা ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির বিপৎসীমা পেরিয়ে যাওয়ার সূচক। ছাত্রলীগের বর্তমান এক নেতা সাবেক দুই নেতাকে বনের মধ্যে পিস্তল চালাতে শেখাচ্ছেন—এমন দৃশ্যে লজ্জায় নাক কাটা পড়ার কথা সংগঠনটির। কিন্তু ছাত্রলীগের মধ্যে ভাবান্তর নেই। তাহলে জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে এদের তফাত কোথায়?
ঘটনাটি পুরোনো হলেও উন্মোচনটি নতুন। এর আগে রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্ধত পিস্তলের ব্যবহার দেশবাসী দেখেছে। ন্যক্কারজনকভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এবং এক বিসিএস ক্যাডারও ‘প্রশিক্ষিত’ হতে গেছেন; এঁরাও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগ নেতা ও তাঁর সহকারীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে; কিন্তু ওই শিক্ষক ও প্রশাসনিক ক্যাডারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্য অমার্জনীয়।
প্রায় একই সময়ে রাজধানীর তিতুমীর কলেজে কমিটি গঠন নিয়ে বিবাদে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ কলেজ গেটে তালা দিয়ে পাশের সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করেছে। ছাত্রলীগের কমিটির দায়ে কেন সাধারণ মানুষ সম্পদ ও সময়ের খেসারত দেবে—এই প্রশ্নের উত্তর কি দেবেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব? জনমতের চাপে দল থেকে, হল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের নামে এদের বাঁচিয়ে দেওয়াও কি চলতে থাকবে? এসব অস্ত্র কিনতে লাগে লাখ লাখ টাকা। সেই টাকা কারা জোগায়?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জুবায়ের হত্যা মামলার আসামিরা আদালত থেকে পালিয়ে গায়েব হয়ে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি-সন্ত্রাস করা ছাত্রলীগের নেতারা ‘দায়মুক্তির’ জোরে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীকে প্রহার করেন। ছাত্রলীগের এই ‘দায়মুক্তির’ ঘটনা আইনের শাসনকে ছুড়ে ফেলার নামান্তর। এই ইতিহাস যৌথভাবে রচিত হয়ে আসছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের স্বেচ্ছাচারিতার অবাধ লাইসেন্সের জোরে। আইনের হাতে তাদের সোপর্দ না করার দায় কীভাবে এড়াবে সরকার?
অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধার হবে না, অস্ত্রধারীরা গ্রেপ্তার হবে না, আদালতে মামলা উঠবে না; এই কি গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের স্বরূপ?

No comments

Powered by Blogger.