দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন অধ্যায় রচিত হবে

নরেন্দ্র মোদি
পাঁচ দিনের সফরে জাপান গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল শনিবার জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে কিয়োটোয় পৌঁছালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রথা ভেঙে উপস্থিত হন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। সফর শুরুর আগে এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে ‘আমার ভালো বন্ধু’ এবং জাপানকে ‘ভারতের ঘনিষ্ঠতম সহযোগীদের অন্যতম’ সম্বোধন করে বলেছেন, এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবের মতোই নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণপন্থী রাজনীতির হোতা। দুজনেরই প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ দেশের অবরুদ্ধ অর্থনীতিকে বেগবান করা। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরসঙ্গী করেছেন মুকেশ আম্বানি, আজিম প্রেমজি, গৌতম আদানিদের মতো প্রথম সারির এক ঝাঁক শিল্পপতিকে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে জাপানের সঙ্গে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরে ভারত আগ্রহী। এই সফরে সেই বিষয়ে অগ্রগতি হবে।
এ ছাড়া অবকাঠামো নির্মাণে জাপানের সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তারে একাধিক চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় মোদি জাপান ভ্রমণ করেছিলেন। তখন থেকেই জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সখ্য শুরু। আগের সফরে জাপানের দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। মুম্বাই ও আহমেদাবাদের মধ্যে সেই ট্রেন চালাতে এই সফরে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। জাপানের কাছ থেকে নৌবহরের জন্য ছয়টি ইউএস-২ যুদ্ধবিমান কিনতে ভারত খুবই আগ্রহী। এই উড়োজাহাজগুলোর বিশেষত্ব হলো, এগুলো জল থেকে আকাশে উড়তে যেমন পারে, তেমনই পারবে লাদাখের মতো পার্বত্য অঞ্চলে ঘাঁটি গাড়তে। ভারত চায় এই যুদ্ধবিমানগুলোকে ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম করে তুলতে। বিষয়টি নিয়ে মোদির এই সফরে কথা অনেকটাই এগোনোর সম্ভাবনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের দিকে চীনও তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে জাপানের সঙ্গে চীনের তীব্র বিরোধ। এই সাগরে তেল উত্তোলনে ভিয়েতনাম-ভারত চুক্তিতেও চীন আপত্তি জানিয়েছে। জাপান ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধি পেলে চীন নিজেকে কোণঠাসা মনে করতে পারে। অন্যদিকে জাপান ও ভারতের সঙ্গে যৌথ মহড়ায় আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টিও চীন ভালো মনে নেয় না। মোদিকে পাশে পেতে চীন তাই ইতিমধ্যে ভারতকে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। জাপান যাওয়ার আগে মোদিও জানিয়েছেন, চীনের প্রস্তাব তাঁরা বিবেচনায় রেখেছেন। চীন-জাপানের লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটেও মোদির জাপান সফর গুরুত্বপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.