ক্যাইলা বাবুর নেতৃত্বে ১৫ সন্ত্রাসী কিলিং মিশনে অংশ নেয়

‘টিনশেডের বাড়িতে ঢুকতেই প্রথম কক্ষে সন্ত্রাসী ক্যাইলা বাবু এলোপাতাড়ি গুলি করে। এরপর তিনতলার রান্নাঘরে একই কায়দায় গুলি করে সে। ক্যাইলা বাবুর সঙ্গে ছিল সদস্যের সন্ত্রাসী বাহিনী। ওই বাহিনীর সদস্যরা আশেপাশের বাড়ির দরজা ও জানালা ভাঙচুর করে। পরে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামির কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মগবাজারের নয়াটোলার সোনালীবাগের ৭৮ নম্বর বাড়ির পাশের হোল্ডিং নম্বরবিহীন একটি টিনশেডের বাসায় এবং ৭৮/২/ক অপর তিনতলায় আরেকটি বাসায় স্থানীয় সন্ত্রাসী বলে পরিচিত ক্যাইলা বাবু ও তার লোকজন এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। এতে রানু, মুন্না বিল্লাল ও হৃদয় নামে চারজন আহত হয়। পরে চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় নিহত রানুর ভাই শামীম ওরফে কালাচান বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে রমনা থানায় ৩০২ ধারায় পেনাল কোডে হত্যার অভিযোগে ক্যাইলা বাবুসহ ১৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি দুইজনকে শুক্রবার গভীর রাতে মগবাজারের নয়াটোলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলো- সোহেল (২৮) ও ফারুক (৩২)।  পুলিশ তাদের দুইজনকে ঢাকা মহানগর আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে আদালত তাদের উভয়কে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

গতকাল সকালে ওই টিনশেডের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাড়ির সামনে দুইজন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ছয়রুমের টিনশেডের বাড়িটিতে তালা লাগানো। তবে মূল গেট খোলা ছিল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম মিয়া জানান, ‘ট্রিপল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত রানুর ভাই থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ১৫ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা সবাই ক্যাইলা বাবুর সহযোগী। মামলার আসামিরা হলো: ক্যাইলা বাবু, শাহাদাৎ, রাজু, সিরাজ, ঠানডু, দিলীপ, অপু, ফারুক, সোহেল, মারুফ, আরিফ, বিল্লাল ও পিচ্চি রনি ও জনি। তিনি আরো বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ফারুক ও সোহেল হত্যাকাণ্ডের সময় ছিল। এছাড়াও তারা কিভাবে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ ও এজাহারভুক্ত ১৫ জন আসামি সেখানে উপস্থিত ছিল বলে গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, ক্যাইলা বাবু নিহতদের গুলি করেছে। অন্যরা কেউ বাড়ির দরজা ও জানালা ভাঙচুর করেছে। কেউবা স্থানীয়রা যেন ভিকটিমদের বাঁচাতে না আসে এ জন্য পাহারারত ছিল। গুলি ও ভাঙচুরের শব্দ শুনে আশেপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সবাই বাড়ির জানালা ও দরজা লাগিয়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয়রা অনেকেই কর্মজীবী। সন্ধ্যার পর সারাদিনের কাজ করে তারা বাড়ি ফিরছিল। বাড়িটি সরু গলির মুখে। বড় কোন গাড়ি ঢুকতে পারে না। স্থানীয় লোকজন কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে গুলি ও ভাঙচুরের শব্দ শুনে আর সরু গলি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে অনেকেই আহত হয়। ক্যাইলা বাবুর নেতৃত্বে ১৫ জন সন্ত্রাসী মাত্র ১০ মিনিটেই ঠাণ্ডা মাথায় ট্রিপল খুন করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। শুক্রবার ক্যাইলা বাবুর দুই চাচীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছিল। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এ মামলার বিষয়ে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ (দক্ষিণ)’র উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘খুনের ঘটনার মূল মোটিভ পুলিশ জানতে পেরেছে। রেলের জমি ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। এর সঙ্গে আরো কোন বিষয় আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত আসামিকে  গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খুনের ঘটনার পর মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা মগবাজার এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। খুনের প্রধান আসামিসহ অন্যদের অবস্থান শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। খুব দ্রুত মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে। এদিকে, গতকাল সকালে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহহার আকন্দের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারা খুনের স্থান ঘুরে দেখেন। আশেপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের কাছে পাওয়া তথ্য নোট নেন। তবে ওই এলাকার লোকজন সিআইডির সদস্যদের সঙ্গে বেশি কথা বলতে রাজি হয়নি।
মামলার বাদী শামীম ওরফে কালাচান জানান, ‘যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের আসামি করে থানায় একটি  মামলা  দায়ের করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলার মূল আসামি খুনি সন্ত্রাসী ক্যাইলা বাবুকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আমরা ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ক্যাইলা বাবুসহ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত আছে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের প্রতি দাবি জানান। লাশের ময়নতদন্ত শেষে নিহতদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

No comments

Powered by Blogger.