গাজায় পড়ে বোমা, দেখে ফুর্তি করে তারা! by গোলাম মর্তুজা

প্রতিদিন সূর্যটা যখন ভূমধ্যসাগরে হেলে পড়ে, তখন একদল ইসরায়েলি গাজা সীমান্তসংলগ্ন একটি পাহাড়ের ওপরে ওঠে। কয়েক মাইল দূরে গাজার ওপর যখন বোমা বর্ষণ শুরু হয়, তখন তারা সে দৃশ্য রীতিমতো উপভোগ করে। তারা পৈশাচিক উল্লাসে ফেটে পড়ে। আনন্দধ্বনি করে, চিত্কার করে, শিস বাজায়।

>>গাজায় বোমা পড়ার দৃশ্য আয়েশি ভঙ্গিতে দেখছে তিন ইসরায়েলি: গার্ডিয়ান
এমন কিছু ইসরায়েলির নৃশংস হামলার দৃশ্য উপভোগ করা নিয়ে গার্ডিয়ান একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সাংবাদিক হ্যারিয়েট শেরউডের ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ইসরায়েলিদের ধর্ষকাম মনোবৃত্তির কুিসত চেহারা।

>>সোফা পেতে ধ্বংসদৃশ্য দেখতে বসেছেন এক ইসরায়েলি: ছবি : গার্ডিয়ান
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই পাহাড়ের ওপরে কিছু পুরোনো সোফা, গাড়ির জীর্ণ আসন, গার্ডেন চেয়ার ও ওল্টানো ক্রেট ‘দর্শনার্থীদের’ বসার জন্য রাখা হয়েছে। পাহাড়ের ওপরে পাইন গাছের ডালে দোলনাও টাঙানো হয়েছে, যাতে এখানে আসা লোকজন স্নিগ্ধ বাতাসে দোল খেতে খেতে গাজার ধ্বংসদৃশ্য ‘উপভোগ’ করতে পারেন। অনেকে বিয়ার অথবা কোমল পানীয়ের বোতল ও হালকা খাবার নিয়েও আসেন।
প্রতিবেদনে শেরউড বলেছেন, শনিবার একদল লোককে একটি সিসার পাইপ নিয়ে ভিড় জমাতে দেখা গেল। তাদের প্রায় সবারই স্মার্ট ফোন রয়েছে। (জ্বলন্ত গাজার) কালো ধোঁয়া পেছনে রেখে তারা হাসিমুখে সম্ভবত জয়সূচক চিহ্ন দেখিয়ে সেলফির জন্য পোজ দিচ্ছিল।
গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, হামাসের রকেটের ভয়ে লাখ লাখ ইসরায়েলি সন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে এসব কিছুই এই পাহাড়চূড়র ‘যুদ্ধ দর্শক’দের দমাতে পারেনি। যদিও তারা সবচেয়ে প্রাথমিক বা অনগ্রসর প্রযুক্তির মিসাইলের আওতার মধ্যেই রয়েছে। এমনকি এদের কেউ কেউ তাদের শিশুদেরও সঙ্গে এনেছে।
সীমান্ত শহর সেরতে বিগত বছরগুলোতে গাজা উপত্যকা থেকে প্রচুর রকেট হামলা হয়েছে। এখানকার একটি বাড়ির সবচেয়ে ওপরের তলার ব্যালকনিতে ইসরায়েলি পতাকা আর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ঐতিহ্যবাহী গোলানি ব্রিগেডের ব্যানার হাতে একটি পরিবার (যুদ্ধ দেখতে) জড়ো হয়েছিল। এখনকার দিনে যুদ্ধ দেখা যায় এমন বাড়ির দামও বেশি প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ বদলে যায়। একটা প্রত্যাশিত উত্তেজনাময় পরিস্থিতি তৈরি হয় এই আশায় যে, হামাস ‘জঙ্গি’রা সন্ধ্যায় ইফতারি করে রকেট ছুঁড়তে শুরু করবে আর তখনই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তার শক্তি প্রয়োগ করে পাল্টা হামলা চালাবে।
ইসরায়েলি বাহিনীর ছোড়া রকেট শেলের বিস্ফোরণ আর কুণ্ডলী পাকিয়ে ওঠা কালো ধোঁয়াকে স্বাগত জানিয়ে আশ্চর্যমিশ্রিত অনুমোদন দিয়ে একজন দর্শক বলে ওঠে, ‘আহা কী সুন্দর!’
১৯ বছরের শিমরিট পেরেজ এসেছিল তার সেনাসদস্য (ছুটিতে থাকা) বন্ধু রাজ সাসনের সঙ্গে। রাজের কাঁধে তখনও সেনাবাহিনী থেকে পাওয়া অ্যাসল্ট রাইফেলটা ঝুলছিল।
পেরেজ বলল, ‘আমরা বোমা বর্ষণ দেখতে এসেছি। এটা খুবই ইন্টারেস্টিং।’ ওই পাহাড়চূড়ায় এটা তাদের চতুর্থ ভ্রমণ। এবার তারা কয়েক ঘণ্টা এখানে থাকবে। ওই জুটি সঙ্গে থাকা ব্যাক প্যাকে কয়েক বোতল পানি ও চিপস নিয়ে এসেছিল।
পেরেজ বলল, বোমার শিকার ফিলিস্তিনের বেসামরিক মানুষদের জন্য তার কোনো উদ্বেগ নেই। তবে তার সেনাসদস্য বন্ধু এ কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে। হামলার শিকার ফিলিস্তিনের সাধারণ নাগরিকদের জন্য উদ্বেগ সত্ত্বেও ওই তরুণ সেনাসদস্য ফিলিস্তিনে অভিযানে তার সতীর্থদের সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করছিল। সে জানায়, ‘আমি ফিলিস্তিন অভিযানে যেতে চাই, আমার দেশকে সাহায্য করার জন্য সেখানে থাকা সেনাদের সাহায্য করার জন্য।’
গণমাধ্যমের কর্মীরা যুদ্ধের ছবি নিতে ওই পাহাড় চূড়ায় আসছিলেন। এর মধ্যে একটি পাহাড়চূড়ায় একটি বাজে ঘটনা ঘটল। একজন ইসরায়েলি এক ফটোগ্রাফারকে ‘বামপন্থী’ হিসেবে অভিযুক্ত করে হুমকি দিয়ে বসল। সাক্ষাত্কার চাইতে গেলে আমাদেরও সাবধান করে দেওয়া হলো, কারণ তখনই সেখানে আরেকবার উল্লাসধ্বনি শোনা গেল।

(গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অবলম্বনে গোলাম মর্তুজা)

No comments

Powered by Blogger.