বিজ্ঞাপনাটক by মো. সাইফুল্লাহ pic আঁকা: জুনায়েদ

ঈদ অনুষ্ঠানমালার প্রধান আকর্ষণ বিজ্ঞাপন। কিন্তু দর্শকের চাপে বিজ্ঞাপনের ফাঁকে টিভি চ্যানেলগুলোকে মাঝে মাঝে নাটকও দেখাতে হয়। কীভাবে নাটকের ভেতরেই বিজ্ঞাপন দেখানো যায়, সে উপায় বাতলে দিচ্ছি আমরা।

দৃশ্য ১
‘তেল কিনব, টাকা দে।’ ঘুমকাতুরে গলায় বলল মিমি।
‘ঝামেলা করিস না তো।’ মুমুর কণ্ঠে ঝাঁজ।
‘দেখাচ্ছি’ বলে মিমি ততক্ষণে মুমুর পার্সটা হাতিয়ে নিয়েছে।
‘অ্যাই, আমার ব্যাগ ধরবি না...মিমি, ইটস টু মাচ!’ বোনকে বাধা দিয়েও কোনো লাভ হলো না। টাকাগুলো হাতিয়ে নিয়ে মিমি ততক্ষণে দাঁতের দোকান খুলে বসেছে।
‘শোন, কিছু দিবি আর কিছু পাবি না, তাই কি হয়? গ্যারাইম্যা ফোনের অফারটাই দেখ, যত টাকার কথা বলবি, ঠিক তত টাকা বোনাস। তুই আমাকে টাকা দিলি, বিনিময়ে আমিও তোকে কিছু দিই। এই নে, ছাতা। বাইরে যা রোদ, ছাতা মাথায় দিয়ে অফিসে যা। আমরা আমরাই তো!’ বলে ফিচিক হাসে মিমি।
‘হুহ, রোদ! আমার আছে ডিভাইস ট্যালকম পাউডার। রোদে কিচ্ছু হবে না!’ পাউডারের বোতল হাতে মুমু কিছুটা সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করে।
(সতর্কতা: পুরো দৃশ্যে নীল রঙের প্রকোপ থাকতে হবে। বিছানার চাদর নীল, জানালার পর্দা নীল। কোথাও লাল অথবা কমলা রং থাকা চলবে না।)

দৃশ্য ২
ঘরে নীল জামা পরে থাকলেও মিমি বাইরে বেরিয়েছে লাল জামা গায়ে। লাল রঙের একটা রিকশায় চড়ে সে ভার্সিটিতে পৌঁছায়।
রিকশাভাড়া দিতে গিয়ে হলো বিপত্তি। রিকশাওয়ালার কাছে ভাঙতি নেই। ৩৫ টাকার জায়গায় ৫০ টাকা ভাড়া দিতে হলো। রিকশাওয়ালা হলুদ দাঁত বের করে বলল, ‘আফা, আমার মুখে তো হাসি ফুটাইলেন। আজকে আর কার মুখে হাসি ফুটাইবেন?’
হাসি ফোটানোর কথা শুনে মিমির মাথায় বোম ফুটে যাচ্ছিল। রিকশাভাড়ার রাগ সে ঝাড়ে জামিলের ওপর, ‘হ্যালো, কোথায় তুমি? তোমার না গেটে থাকার কথা?’
‘আর বোলো না, অবস্থা খুবই খারাপ। এখনো বিছানায়।’ ওপাশে জামিলের কণ্ঠটা কাহিল শোনায়। কিন্তু হঠাৎই পাশ থেকে ‘আজিমপুর আজিমপুর...’ শুনতে পেয়ে মিমির রাগ সপ্তমে ওঠে।
‘একটু চেপে শোও। নইলে আজিমপুরের টেম্পো তোমার বিছানায় উঠে যাবে। মিথ্যুক কোথাকার! তুমি জানো না আমি কবি সিম ব্যবহার করি। ক্লিয়ার নেটওয়ার্কে তোমাকে একটা ক্লিয়ার কথা বলি, তোমার সাথে আমার সব শেষ। মামলা ডিসমিস।’ মোবাইল ফোন তো ‘ঠাস’ করে রাখা যায় না, তাই টুস করে লাইনটা কেটে দেয় মিমি।

দৃশ্য ৩
‘হ্যালো, হ্যালো...’ মনটাই খারাপ হয়ে যায় জামিলের। কী মুশকিল! তাকে পুরো কথা শেষও করতে দিল না। জামিলের বলা হলো না, সে শুয়ে আছে রাস্তার পাশে। বাসের টিকিটের জন্য অনেক লোকের সঙ্গে সে-ও মাঝরাত থেকে টিকিট কাউন্টারের সামনে বিছানা পেতেছে। ধ্যাত!

যাক, কাউন্টার খুলেছে। এতক্ষণে টিকিট দেওয়া শুরু হয়েছে।
কিন্তু এ কী! ওরা সবাই রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, অথচ এক লোক কি না পেছন থেকে এসে সুড়সুড় করে টিকিট নিয়ে চলে যাচ্ছে? হইহই করে সবাই তেড়ে গেল। কাছে গিয়ে আরও বড় চমক, আরে, এ তো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড়!
‘ঘটনা কী ভাই, আপনি কীভাবে টিকিট পেলেন?’ সবার আগে জামিলই জানতে চায়।
ক্রিকেটার হাসে, ‘ক্রিকেটারদের কত কিছুই না পটাতে হয়। কখনো বোলার, কখনো আম্পায়ার। মাঝে মাঝে টিকিট কাউন্টারের লোককেও পটাতে হয়। এই নিন, পেয়ার অ্যান্ড পাগলি ম্যাক্স ফেয়ারনেস। এটা মাখলেই সবাইকে পটাতে পারবেন।’ যেতে যেতে সে আবার পেছনে ফিরে তাকায়, ‘বয়স তো মাত্র ২৩, এখন না পটালে কখন?’
মাঠে ভদ্রলোকের পারফরম্যান্সের যে দশা, কেউই তার কথায় খুব একটা ভরসা পায় না। সবাই আবার লাইনে গিয়ে দাঁড়ায়।

দৃশ্য ৪
অবশেষে কাউন্টারের সামনে পৌঁছাল জামিল। টিকিট হাতে নিয়ে যখন টাকা দেবে...একি, টাকা গেল কই? হায় হায়! জামিল পকেট হাতড়ায়। সঙ্গে করে আনা বিছানা-বালিশও হাতড়ে দেখে।
‘অ্যাকাউন্ট বালিশে খুলছেন নাকি?’ পাশ থেকে একটা চেনা কণ্ঠ শুনে ফিরে তাকায় জামিল। ওমা, এ তো একজন জনপ্রিয় অভিনেতা।
‘বালিশে অ্যাকাউন্ট না খুলে কিউ ক্যাশে অ্যাকাউন্ট খোলেন। ভালো থাকুক আপনার টাকা।’ বলতে বলতে অভিনেতা হাসে।
‘আরে ভাই সেইটা তো পরের হিসাব। এখন আমি টাকা কই পাব, সেইটা বলেন।’
অভিনেতা দেখলেন ভাবগতিক বেশি সুবিধার না। শেষে তাঁর কাছেই জামিল টাকা ধার চেয়ে বসতে পারে। তিনি সুড়সুড় করে ভিড়ের মধ্যে মিশে গেলেন।

দৃশ্য ৫
লোকজনের ঝাড়ি-ধাক্কা খেয়ে জামিল লাইন থেকে ছিটকে পড়েছে। মনটা তাঁর বড়ই বেজার। জামাকাপড় ময়লা হয়ে একশেষ। এমন সময় সামনে দেখা গেল এক রূপসী নারীকে। আরে, চেনা চেনা লাগে, এ যেন কে? মেঘলা না বৃষ্টি, কী যেন নাম! আজ দিনটা তো বেশ, একের পর এক সেলিব্রেটির সঙ্গে দেখা হচ্ছে!
জামিল হাসিমুখে এগিয়ে যাচ্ছিল কথা বলতে। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই রূপসী জামিলকে একটা ঘুষি মেরে বসল! তারপর শার্টের কলার ধরে সে কী মার! মার খেয়ে জামিল বেচারা দু–একটা দাঁতও হারাল।
‘আরে আমি কী করলাম, আমাকে মারছেন কেন?’ সে এবার কেঁদেই ফেলল।
রূপসী এবার বেশ ভাব নিয়ে দাঁড়ায়, ‘ময়লাকে দিন স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ ধোলাই! এই নিন, বাঁকা ওয়াশিং পাউডার!’
‘আরে ময়লা তো আমার জামা, আমি কী দোষ করলাম?’
‘ও, জামার ভেতর যে আপনিও ছিলেন, খেয়াল করিনি!’ রূপসীর সরল জবাব।

No comments

Powered by Blogger.