গাজায় গণহত্যা- ইসরায়েলকে থামানো জাতিসংঘের দায়িত্ব

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার সপ্তম দিন চলছে। এই গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকানোয় বিশ্বনেতৃত্বে ব্যর্থতা ইসরায়েলকে কার্যত আগ্রাসনের ছাড়পত্র দিয়েছে। গাজাবাসীর জীবনরক্ষা এবং ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন ভূখণ্ডের দাবি এখন বিশ্বমানবতারই দাবি। নিরীহ নিষ্পাপ শিশু হত্যা করা এখনই থামাতে হবে।
আকাশ-মাটি-সমুদ্রসহ সব দিক থেকে নারকীয় বোমাবর্ষণ এবং শিশু-নারীসহ নিরীহ মানুষ হত্যা পরিষ্কারভাবে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ। ২০১২ সালের হামলায়ও ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে বলে তদন্ত করে দেখেছিল জাতিসংঘ। ইসরায়েলি যুদ্ধমেশিনের সঙ্গে অসম যুদ্ধ গাজাকে পরিকল্পিত গণহত্যার ক্ষেত্র করে তুলেছে। সেই বধ্যভূমিতে নিহত হচ্ছে মনুষ্যত্ব ও সভ্যতা। এর দায় যতটা ইসরায়েলের, ঠিক ততটাই তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের।
তিন ইসরায়েলি অপহরণের প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালানো হলেও এর কারণ রাজনৈতিক। সম্প্রতি ফিলিস্তিনের দুই রাজনৈতিক শক্তি হামাস ও ফাতাহ ঐক্যের ঘোষণা দেয়। যেকোনোভাবে ফিলিস্তিনিদের ঐক্য ঠেকানো এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির সুবাদে হামাসের বিশ্বরাজনীতিতে প্রবেশ ঠেকানোই ইসরায়েলি হামলার উদ্দেশ্য। ২০০৫ সালের নির্বাচনে হামাস বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করার পরও তারা একইভাবে অবরোধ ও আগ্রাসন আরম্ভ করে। সাম্প্রতিক গণহত্যা তারই ধারাবাহিকতা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন, লোক দেখানো এসব আহ্বান ইসরায়েলের উন্মত্ততা বন্ধ করতে পারবে না।
ফিলিস্তিনের বন্দী, বিধ্বস্ত, নিঃসঙ্গ অস্তিত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষপাতের নির্মম দৃষ্টান্ত। যত দিন না তারা ইসরায়েলকে বাধ্য করতে পারবে সভ্য ও সহনশীল হতে, তত দিন ফিলিস্তিনের আশা নেই। আরব রাষ্ট্রগুলোর নৈতিক ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব, মুসলিম দেশের জনগণের অনৈক্য ইসরায়েলকে আরও বেশি বেপরোয়া করেছে। গাজায় ইসরায়েলের এই ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকানোর দায়িত্বটি এখন জাতিসংঘকেই নিতে হবে।
ইসরায়েলকে বুঝতে হবে, দুর্গরাষ্ট্র হয়ে থাকার মধ্যে তার নিরাপত্তা আসবে না। ফিলিস্তিনিদের ভূমি ও স্বাধীনতা ফেরত দেওয়ার মাধ্যমেই তার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সমগ্র আরবকে পদানত রাখার বাসনা আখেরে তার পতনের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.