জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সমস্যা বলতে না দিলে সমাধান আসবে কী করে?

তিন দিনের জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনটি শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকতার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরিধি বাড়ানোর বাইরে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত হয়নি, যদিও জেলা প্রশাসকেরা তিন শতাধিক সমস্যা চিহ্নিত করেছিলেন। এ ধরনের সম্মেলনের লক্ষ্য হলো, সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কী কী সমস্যায় পড়েন, তা তাঁরা খোলাখুলি বলবেন এবং সেই আলোকে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। পত্রিকান্তরের খবর অনুযায়ী এবারের সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের খোলাখুলি কথা বলতেই দেওয়া হয়নি। এমনকি যাঁরা লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁদের ওপরও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সেন্সরশিপ আরোপ করেছে। জেলা প্রশাসকেরা নিশ্চয়ই কেউ রাজনৈতিক বক্তব্য দেননি; সমস্যার কথা জানিয়েছেন। রাজনীতিক বা জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে সেই সমস্যা এলে সেটি বলতে না দেওয়ার কী কারণ থাকতে পারে?
সংবিধানে জনপ্রতিনিধি ও জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা আছে। নিজ নিজ সীমার মধ্যে দায়িত্ব পালন করলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা যখন মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকে দিয়ে অন্যায্য ও বেআইনি কাজ করিয়ে নেন, তখন সরকারি কর্মকর্তারাও অসাধু পথ বেছে নিতে বাধ্য বা প্ররোচিত হন। বর্তমানে জনপ্রশাসনের এই জ্বলন্ত সমস্যাটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কেন আমলে নিচ্ছে না, সেটাই প্রশ্ন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়মনীতি অনুযায়ী জনগণকে সেবা দিতে বলেছেন। সেটি তখনই নিশ্চিত হতে পারে যখন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা প্রশাসনের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ রাখবেন।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসনের দু-একজন অতি উৎসাহী কর্মকর্তার কথা বলা প্রয়োজন, যাঁরা সরকারকে অসৎ পরামর্শ দিতেও দ্বিধা করেন না। সম্মেলনের আগে আলোচ্যসূচিতে ঢাকার সাবেক জেলা প্রশাসক ১৯৭৩ সালে প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস আইনের বাতিল হওয়া কালো ধারাটি পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা নিয়ে আলোচনাই হয়নি। এ জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় ধন্যবাদ পেতে পারে। এ ধরনের কর্মকর্তাদের থেকে সরকারকে সাবধান থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.