ব্রাজিল বিশ্বকাপের লড়াইয়ে চার লাতিন দল by পিন্টু আনোয়ার

গ্রুপ পর্বে ব্রাজিল তারকারা দুই ম্যাচে দেখিয়েছেন ৭ গোল। তবে এক ম্যাচে গোলশূন্যও থেকেছেন পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এবার ভুলের আর সুযোগ নেই। আজ শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড। আর নকআউট পর্বের প্রথম দিনই মাঠে নামছে চার লাতিন দেশ। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম নকআউট ম্যাচে আজ মহাদেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বী চিলির কাছে ব্রাজিলের পরীক্ষা। বেলো হরিজোন্তের মাঠে ব্রাজিল-চিলি ম্যাচটি শুরু হবে রাত ১০টায়। দ্বিতীয় রাউন্ডের অপর ম্যাচে মোকাবিলা করবে কলম্বিয়া ও দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। রিও ডি জেনিরোয় ঐতিহাসিক মারাকানা মাঠে কলম্বিয়া-উরুগুয়ে ম্যাচ শুরু রাত ২টায়। এতে আলাদা পরীক্ষা লুইস সুয়ারেজবিহীন উরুগুয়েরও। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ইতালি ডিফেন্ডার জর্জিও কিয়েলিনিকে কামড়ের দায়ে শাস্তি নিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্বকাপ শেষ সুয়ারেজের। এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম সেরা  নৈপুণ্যের দল চিলি। শুরুর দুই ম্যাচে টানা দুই জয় নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে চিলিয়ানরা। এতে তারা অস্ট্রেলিয়াকে হারায় ৩-১ গোলে আর শিরোপাধারী স্পেনের বিপক্ষে চিলির জয়টি ২-০ গোলের স্পষ্ট ব্যবধানে। এতে বিদায় নিশ্চিত হয় চ্যাম্পিয়ন স্পেনের। গ্রুপের শেষ ম্যাচে শক্তিধর দল নেদারল্যান্ডসের কাছে ০-২ গোলে হার মানলেও চিলিয়ানরা গোল দু’টি হজম করে  ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটে। চিলির আক্রমণভাগে সেরা ফর্ম দেখাচ্ছেন এফসি বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড অ্যালেক্সিস সানচেস, জুভেন্টাস তারকা আরতুরো ভিদালরাও। দ্বিতীয় রাউন্ডে মাঠে নামার আগে ব্রাজিল কোচ লুইস ফেলিপে স্কলারিও দেখাচ্ছেন চিলিকে সমীহ। বলেন, গ্রুপের ড্র দেখে এক সময় ভেবেছিলাম চিলি নকআউট পর্বের আগেই বাদ পড়বে। আসলে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে চিলিকে মোকাবিলা করতে চাচ্ছিলাম না আমি। আজ চিলির বিপক্ষে শুরুর একাদশে পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন ব্রাজিল কোচ। মাঝমাঠে পাউলিনহোর বদলে একাদশে সুযোগ নিচ্ছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ম্যানচেস্টার সিটি তারকা ফার্নানদিনহো। আজ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্রাজিল কোচকে থাকতে হচ্ছে আলাদা সতর্ক। অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা ও আক্রমণভাগের মূল ভরসা নেইমারসহ দলের চার খেলোয়াড় ইতিমধ্যে হলুদ কার্ড দেখে রেখেছেন। আজ এদের কারও হলুদ কার্ড মানে কোয়ার্টার ফাইনালে নিষেধাজ্ঞা। চিলি কোচ জর্জ সাম্পাওলির চিন্তাটা দলে ইনজুরি নিয়ে। চোটের কারণে বৃহস্পতিবার দলের অনুশীলনে দেখা যায়নি মিডফিল্ডার আরতুরো ভিদাল ও ডিফেন্স তারকা গ্যারি মেডালকে। কলম্বিয়ার বিপক্ষে উরুগুয়ের পরিসংখ্যানটা দাপুটে নৈপুণ্যের। উরুগুয়ে শেষ আট মোকাবিলায় মহাদেশীয় প্রতিপক্ষ কলম্বিয়াকে হারিয়েছে ৬ বার। এতে কলম্বিয়ার মাত্র এক জয় ও এক ড্র। বিশ্বকাপে দু’দলের মোকাবিলা দেখা গেছে একবারই। এতেও সুখস্মৃতি সেলেস্তে উরুগুইয়ানদের। ১৯৬২’র বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে কলম্বিয়ার বিপক্ষে আগে গোল খেয়েও উরুগুয়ে ম্যাচ জেতে ২-১ গোলে। তবে শীর্ষ স্ট্রাইকার সুয়ারেজের নিষেধাজ্ঞার ধাক্কাটা উরুগুয়ে কোচ অস্কার তাবারেজ কেমনে সামলান আজ এটাও দেখার বিষয়। এক্ষেত্রে ফুরফুরে স্কোয়াড নিয়েই উরুগুয়ের মোকাবিলায় নামছেন কলম্বিয়ার আর্জেন্টাইন কোচ হোসে পেকারম্যান। এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তিন জয় দেখিয়েছে মোট চার দল। আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও কলম্বিয়া। তবে ডেথ গ্রুপ থেকে উরুগুয়ের উত্তরণটাও আলাদা নৈপুণ্যের। প্রথম ম্যাচে কোস্টারিকার কাছে হারলেও পরের দুই খেলায় উরুগুয়ে হারায় দুই সাবেক চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও ইতালিকে। চলতি আসরের প্রথম পর্বে  মেক্সিকোর সঙ্গে গোলশূন্য ড্র তে পয়েন্ট ভাগাভাগি করলেও গ্রুপে বাকি দু্‌ই ম্যাচে ব্রাজিল কুড়ায় দাপুটে জয়। ক্রোয়েশিয়াকে ৩-১ ও ক্যামেরুনকে হারায় তারা ৪-১ গোলে । আর   বিশ্বকাপে চিলির বিপক্ষে ব্রাজিলের পরিসংখ্যানটা সেলেসাও ভক্তদের জন্য অভয়েরই। ফুটবলের মহাযজ্ঞে এ পর্যন্ত তিন মোকাবিলায় প্রতিবারই দাপুটে জয় দেখেছে ব্রাজিল। আর সেলেসাওরা চিলিকে এর প্রতিবারই হারিয়েছে বিশ্বকাপের নকআউট রাউন্ডে। চিলির বিপক্ষে বিশ্বকাপে সাফল্যের স্মৃতিটা ব্রাজিলিয়ানদের টাটকা। দক্ষিণ আফ্রিকায় গত বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে চিলিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যায় ব্রাজিল। ১৯৯৮’র দ্বিতীয় রাউন্ডে চিলির বিপক্ষে ব্রাজিল জয় পায় ৪-১ গোলের বড় ব্যবধানে। আর ১৯৬২’র বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জয়টি আলাদা তাৎপর্যের। সেবার সেমিফাইনালে ব্রাজিল ৪-২ গোলে হারায় স্বাগতিক চিলিকে। পরে ফাইনালে চেকোস্লাভাকিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ব্রাজিল জিতে নেয় টানা দুইবারের বিশ্বকাপ। এর আগে ১৯৫৮’র আসরে প্রথমবার বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পায় ব্রাজিল।  শেষ ৯ মোকাবিলায় চিলির জালে ব্রাজিলিয়ানরা দেখিয়েছে গোলবন্যা। ৯ ম্যাচে ৩.৭ গড়ে ব্রাজিল পেয়েছে ৩২ গোল। আর চিলির বিপক্ষে ব্রাজিল অপরাজিত রয়েছে টানা ১৪ বছর। এ সময় ১২ ম্যাচে ব্রাজিল জয় দেখেছে ১০ বার।  এবার সেরা ফর্ম দেখাচ্ছেন ব্রাজিল সেনসেশন নেইমার ডা সান্তোসও। চলতি বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে নেইমারের ৪ গোল। আসরে এ পর্যন্ত চার গোল দেখিয়েছেন শুধু আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি ও জার্মান ফরোয়ার্ড টমাস মুলার। ব্রাজিলের জার্সি গায়ে শেষ ৬ ম্যাচে আট গোলের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন নেইমার। আর গত পাঁচ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে অদম্য দেখা গেছে ব্রাজিলকে। দ্বিতীয় রাউন্ডের এ পাঁচ ম্যাচে ব্রাজিল প্রতিপক্ষ জালে ঠেলেছে ১৩ গোল। বিপরীতে পাঁচ ম্যাচে ব্রাজিল গোল হজম করেছে মাত্র একবারই। আর ব্রাজিলের মাটিতে দু’দলের পরিসংখ্যানে বিপরীত চিত্র।  নিজ মাটিতে শেষ ৪০ ম্যাচে অপরাজিত ব্রাজিল। এখানে তাদের শেষ হারটি এক যুগ আগের। ২০০২ মওসুমের আগস্টে প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিলের ১-০ গোলের হারটি ছিল মহাদেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। আর পরিসংখ্যান বলে,  ব্রাজিলের বিপক্ষে সাফল্য পেতে হলে ভেলকি দেখাতে হবে সানচেস-ভিদাল-বারগাসদের। ব্রাজিলের মাটিতে স্বাগতিক সেলেসাওদের বিপক্ষে কখনই জয় দেখেনি চিলিয়ানরা। এখানে ২৬ ম্যাচের ২০টিতেই হার দেখেছে তারা।

No comments

Powered by Blogger.