নিষ্ক্রিয় ইসলামপন্থি দল- তর্জন-গর্জন সব নীরব বিবৃতিতেই সীমিত

একেবারে নীরব নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে ইসলামপন্থি দলগুলো। বিবৃতির মাধ্যমে সীমিত রয়েছে তাদের সব তর্জন-গর্জন। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেই তারা। এমনকি ঘরোয়া সভা-সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলনের মতো কর্মকা-েও তাদের দেখা মিলছে না। নারীনীতি, শিক্ষানীতি, নাস্তিক্যবাদসহ নানা ইস্যুতে আলোচিত ইসলামপন্থি দল এবং সংগঠনগুলোর এ নীরবতা জনমনে বেশ কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে নেতাকর্মী সমর্থকদের। সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজনৈতিক প্রতিকূলতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যায় বেশির ভাগ দল এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। ইসলামী কোন ইস্যুতেও এসব দলের মধ্যে নেই কোন সমন্বয়। বরং যে যার সুবিধামতো রাজনীতিতেই ব্যস্ত প্রায় সব দল। ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা ও পদ দখল নিয়ে অনেক ইসলামী দলের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। অনেকে আবার সরকার ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির লেজুড়বৃত্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য ইসলামী দলগুলোর সমর্থন আদায় ও নিয়ন্ত্রণে বড় দু’টি দল অনেকটা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। যদিও প্রকাশ্যে তেমন সমর্থন দিতে দেখা না গেলেও তলে তলে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে দেখা যায়। অনেক নেতা আবার একাধিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এতে ইসলামের নামে সৃষ্ট বহু ইসলামী দলের কার্যক্রম নিয়ে বিব্রত ও বিভ্রান্ত হচ্ছেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। তবে সংশ্লিষ্ট নেতাদের দাবি, ইসলামী দলগুলো আগের মতোই আছে। কিন্তু সরকার রাজপথে এসব দলের কোন কর্মকা- চালাতে দিচ্ছে না। নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। সাম্প্রতিককালে দেশে বেশ আলোচনায় উঠে আসে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। বেশ কিছু ইসলামী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে কওমি মাদরাসা ভিত্তিক অরাজনৈতিক দাবিদার এ সংগঠন ১৩ দফা দাবিতে ঢাকা অবরোধ ও মহাসমাবেশের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে ৫ই মে’র শাপলা ট্র্যাজেডির পর এ সংগঠনের কার্যক্রম গুটিয়ে যায়। ঝিমিয়ে পড়ে এর নেতাকর্মী-সমর্থক-ভক্ত অনুরাগীসহ বৃহৎ জনগোষ্ঠী। প্রথম দিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অনুগত থাকলেও তেমন কোন সফলতা না পেয়ে পরে অবস্থান পরিবর্তন করে হেফাজত। বর্তমানে সরকারের সঙ্গে আপস এবং সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা মতেই সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা চলছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরে হেফাজতের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। তবে এসব বিষয় মানতে নারাজ হেফাজতের নেতারা। তারা বলেন, হেফাজতের তৎপরতা নেই এ কথা ঠিক নয়। কওমি মাদরাসাগুলোয় বর্তমানে পরীক্ষা চলছে। সামনে রমজান। তা ছাড়া সরকার আমাদের আগের মতো কোন কাজ করতে দিচ্ছে না। গ্রেপ্তার-হয়রানি করা হচ্ছে। সরকারের সুযোগ-সুবিধা নেয়ার ব্যাপারে মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তারা। দেশের বৃহৎ ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। দলটির শীর্ষ নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারাধীন। নির্বাচন কমিশনের দেয়া নিবন্ধন বাতিল করেছে হাইকোর্ট। রাজনৈতিকভাবেও নিষিদ্ধের মুখোমুখি দলটি। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন প্রকাশ্য কোন কার্যক্রম নেই জামায়াতের। বেশির ভাগ নেতাই আত্মগোপনে। এতে দলের নেতাকর্মীদের বিরাজ করছে হতাশা। তবে অত্যন্ত গোপনে এ দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। দল ও নেতাদের রক্ষায় জামায়াত বর্তমান সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে বিভিন্ন মহলে শোনা যাচ্ছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা তা অস্বীকার করছেন। মুফতি আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোট একসময় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত থাকলেও তার মৃত্যুর পর থেকে দলটির তেমন তৎপরতা নেই। ১৯ দলীয় জোটের শরিক এ দলের অনেক নেতা বর্তমানে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দলটির কার্যক্রম অনেকটাই লালবাগ মাদরাসাকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে দলের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, এখন তো কোন তৎপরতা দেখানোর সুযোগই নেই। কোন কর্মসূচিই তো সরকার পালন করতে দিচ্ছে না। বিভিন্ন ইসলামী দলের অগোছালো অবস্থা এবং সরকারের সঙ্গে কোন কোন ইসলামী দলের নেতাদের যোগাযোগ রক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব কথা শোনা যায়, তবে বিস্তারিত কিছু জানি না। তা ছাড়া সরকার আমাদের রাজপথে কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিলেই বোঝা যেতো, আসলে তাদের সঙ্গে কোন আঁতাত আছে কিনা। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ সরকারি মহলের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেয়ার ঘটনায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেতাদের মধ্যে। একপর্যায়ে দলটির মহাসচিব হুমায়ুন কবিরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনার রেশ ধরে সম্প্রতি দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর আবদুর রব ইউসুফীসহ শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে যোগ দেন। এসব ঘটনায় বেশ স্থবির হয়ে পড়েছে এ সংগঠনের কার্যক্রম। ১৯ দলীয় জোটের অপর দুই শরিক খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামেরও প্রকাশ্য কার্যক্রম নেই বললেই চলে। জমিয়তের মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাস দীর্ঘদিন কারাভোগের পর সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন। এতে দলটি কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তবে দলটির বেশ কয়েকজন নেতা সরকারি দল ও বিএনপি জোট উভয় পক্ষের সঙ্গে সমান তালে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে জোরালো আলোচনা রয়েছে। যদিও এ অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করেন তারা। জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির কোন তৎপরতা নেই। হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কার্যক্রম এখন কামরাঙ্গীরচর মাদরাসাকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ। মাঝেমধ্যে কিছু কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিলেও পুলিশের অনুমতি না থাকার অজুহাতে নেতারা মাদরাসা থেকে বের হন না। প্রায় একই অবস্থা চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের। পুলিশ পাহারায় মাঝেমধ্যে কিছু কর্মসূচি নিয়ে তারা মাঠে নামেন। তবে সে ক্ষেত্রে সরকারের নীরব সমর্থন থাকে বলে গুঞ্জন শোনা যায়। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন বর্তমান সরকারের শরিক দল। রাজপথে তাদের কোন তৎপরতা নেই। মহাজোটের শরিক বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটও দীর্ঘদিন ধরে নীরব রয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট এবং ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, মুসলিম লীগ, গণতান্ত্রিক ইসলামী ঐক্যজোট, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টিসহ বেশ কিছু ইসলামী দল ও সংগঠনের মঞ্চ ময়দানে কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তবে ফ্যাক্স এবং ই-মেইল বার্তায় তাদের সরবতা প্রায় দেখা যায়। সরকারবিরোধী নানা রকম তর্জন-গর্জনও শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় না তার ছিটেফোঁটাও।

No comments

Powered by Blogger.