তোষণে ব্যস্ত জাতীয় পার্টি

সরকারের তুষ্টি, অতুষ্টিকে প্রাধান্য দিয়ে সংসদে ভারসাম্য ভূমিকা পালন করছে জাতীয় পার্টি। বিরোধী দল হিসেবে তারা সরকারের বেশ কিছু কর্মকা-ের কঠোর সমালোচনা করছে। আবার সরকারের নেক নজরে থাকতে ভূয়সী প্রশংসা করতেও দেখা গেছে। ক্ষেত্রবিশেষে তারা সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই সুরে কথা বলেছেন। গত কয়েক দিনে সংসদে জাতীয় পার্টির নেতাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট আলোচনা ও পয়েন্ট অব অর্ডারে অংশ নিয়ে প্রতিদিনই দলটি ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যস্ত। সংসদ কার্যক্রমের পর্যবেক্ষক হিসেবে পরিচিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গতকাল মানবজমিনকে বলেন, এ ধরনের ভূমিকা পালন করে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি নিজেদের আরও বিতর্কিত করছে। তারা না পারছে সরকারের পক্ষে থাকতে আবার না পারছে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে। এটা এক রাজনৈতিক রঙ্গ। গত ১৯শে জুন সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নামে নির্মিতব্য পদ্মা সেতুর নামকরণের দাবি জানান। তার ওই দাবিতে সমর্থন জানান সংসদ উপ নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরায়জী। ওই দিন ফিরোজ রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মা মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সারাজীবন পর্দার আড়ালে থেকে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। জাতির জনকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন স্বাধীনতার জন্য। কখনও গণমাধ্যমে হেডলাইন হতে আসেননি, ক্ষমতার কাছাকাছিও যাননি। বঙ্গবন্ধু জীবনের বেশির ভাগ সময় জেলে কাটিয়েছেন। তার দীর্ঘ কারাজীবনের সময় শুধু নিজের পরিবার নয়, গোটা আওয়ামী লীগ পরিবারের দেখাশোনা করেছেন। তার নামে ঐতিহাসিক পদ্মা সেতুর নামকরণ হলে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি খুশি হবে। এর আগে তিনি বাজেট আলোচনা ও পয়েন্ট অব অর্ডারে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। ১৫ই জুন সংসদে দেয়া বাজেট আলোচনায় তিনি বলেন, বাজেট দেখে মনে হবে- দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাবে। কিন্তু বাস্তবে দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত আর্থিক অবকাঠামো দিয়ে এত বড় বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা সম্পূর্ণ অনুমান ও প্রত্যাশা-নির্ভর। তিনি বিদেশী বিনিয়োগ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করেছেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তার হাতে নয়। আর তিনি জ্যোতিষীও নন। অথচ আমরা দেখছি- সংসদের বাইরে বলা হচ্ছে- এই সংসদ অবৈধ। বাজেট দেয়ার অধিকার নেই। আমরা আজ পর্যন্ত দেশে গণতন্ত্রের ভিত রচনা করতে পারিনি। গোটা দেশ আজ বিভক্ত। সব শ্রেণী-পেশার মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। এদিকে নির্বাচন প্রশ্নে জাতীয় পার্টির এমপিরা সরকারে সঙ্গে তাল মিলিয়ে বক্তব্য  দেন। তারা বলেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে জাতীয় রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। জাতীয় পার্টির কাছ থেকে তাদের শেখা উচিত কিভাবে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হয়। ওদিকে সরকারি দলের এমপিরা প্রতিদিনই সংসদে বিএনপি, দলের চেয়ারপারসন ও তার পরিবারের কঠোর সমালোচনা করছেন। ৮ই জুন বাজেট আলোচনায় জাতীয় পার্টির অপর এমপি পীর ফজলুর রহমান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১১৯৩ কোটি টাকার সম্পূরক বরাদ্দ দাবি করেছে। অথচ এই মন্ত্রণালয় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পারে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত দাবি করেছে; কিন্তু জেলা সদরে চিকিৎসক নেই। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৪৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত দাবি করেছে। অথচ পুঁজিবাজারে নিঃস্ব হওয়া লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেই। পুঁজিবাজারে লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেই। খালিদ ইব্রাহিমের সুপারিশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। দলের অপর এমপি আবদুল মতিন চৌধুরী ১১ই জুন বলেন, বাজেট বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ গণতন্ত্রের অর্থ যদি হয় জ্বালাও-পোড়াও তাহলে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’দলই নির্বাচন বর্জন করেছে। কিন্তু গণতন্ত্রের স্বার্থে জাতীয় পার্টি সব সময়ই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সর্বশেষ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারকে আরও শক্ত অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে একই দিন আলতাফ আলী বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধের বিষয়টি আরও স্পষ্ট করতে হবে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করা হলে সরকারের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। ১৫ই জুন প্রশাসনের উদাসীনতায় রাজধানীর মিরপুরের কালশীতে বর্বর হত্যাকা- ঘটেছে বলে দাবি করেন পীর ফজলুর রহমান। এ নিয়ে ক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। জাপা এমপি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে দেশের একটি সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে রাজধানীবাসী। আমরা দেখেছি এই রাজনৈতিক গোষ্ঠী কিভাবে সাধারণ মানুষকে বাসের মধ্যে পুড়িয়ে মেরেছে। পোড়া মানুষের ঝলসানো শরীর এখনও আমাদের চোখে ভেসে ওঠে।

No comments

Powered by Blogger.