‘বিপ্লব’ ঘটাতে আবার পাকিস্তানে কাদরি

তাহির-উল-কাদরি
নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিপ্লব’ ঘটাতে আবার পাকিস্তানে ফিরেছেন আলোচিত নাগরিক তাহির-উল-কাদরি৷ গতকাল সোমবার তাঁর আগমন উপলক্ষে উত্তপ্ত ছিল রাজধানী ইসলামাবাদসহ বিভিন্ন শহর৷ ইসলামাবাদ বিমানবন্দরের বাইরে কাদরির সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়েছে৷ খবর এএফপির৷ কানাডায় বসবাসরত আলোচিত এই পাকিস্তানি গত বছরের জানুয়ারিতে ইসলামাবাদে অবস্থান ধর্মঘট করেছিলেন। তখন হাজার হাজার লোক তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। ওই সময় ক্ষমতায় ছিল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)৷ এখন ক্ষমতায় নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন)৷ সেনাবাহিনী এখন দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে৷
এমন এক সংবেদনশীল সময়ে কাদরির আগমন নওয়াজ সরকারকে বেশ চাপে ফেলতে পারে৷ চলতি মাসের শুরুতে কাদরি পাকিস্তানে আসার ঘোষণা দিলে সরকার কঠোর অবস্থান নেওয়া শুরু করে৷ গত সপ্তাহে লাহোরে পুলিশের সঙ্গে তাঁর সমর্থকদের সংঘর্ষে নয়জন নিহত হয়৷ কাদরির আগমন উপলক্ষে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরের বাইরে গত রোববার রাত থেকেই তাঁর বিপুলসংখ্যক সমর্থক জড়ো হয়৷ বিমানবন্দরমুখী সড়ক বন্ধ করে এবং আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা নিয়েও সরকার তাঁর সমর্থকদের আটকাতে পারেনি। সমর্থকেরা ‘কাদরি দীর্ঘজীবী হোন’ এবং ‘বিপ্লব, বিপ্লব, ইসলামি বিপ্লব’ বলে স্লোগান দিতে থাকে৷ টেলিভিশনের ভিডিওফুটেজে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরের বাইরে কাদরির সমর্থকদের লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়৷ একপর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ কাদরিকে বহনকারী উড়োজাহাজটি শেষ পর্যন্ত ইসলামাবাদে অবতরণ করতে দেওয়া হয়নি৷ পরে সেটি অবতরণ করে লাহোরে৷ পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, উড়োজাহাজ ও এর যাত্রীদের ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে’ ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ লাহোর বিমানবন্দরে কাদরি প্রথমে উড়োজাহাজ থেকে নামতে অস্বীকৃতি জানান৷ তিনি মুঠোফোনে এক্সপ্রেস টিভিকে বলেন, ‘আমি চাই, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুক
 সামরিক বাহিনী আমাকে নিরাপত্তা দিলে, আমি যেকোনো স্থানে যেতে ইচ্ছুক৷’ অবশ্য একপর্যায়ে তিনি উড়োজাহাজ থেকে নেমে বিমানবন্দরের লাউঞ্জে অবস্থানরত সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন৷ পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফের আমলের আইনপ্রণেতা কাদরি ধর্মীয় দিক থেকে মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত৷ পাকিস্তানে তাঁর উল্লেখযোগ্য সমর্থক রয়েছে৷ তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, পাকিস্তানের প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীও কাদরি সমর্থক৷ তাঁকে ব্যবহার করে সামরিক বাহিনী দেশের বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে চাপে রাখতে চায়৷ কাদরি পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক মনে করেন৷ তিনি দীর্ঘদিন ধরেই এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বিদায় করতে দেশে আরব বসন্তের আদলে বিপ্লব ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন৷ গত বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের চার মাস আগে ইসলামাবাদে কাদরি যে অবস্থান ধর্মঘট করেছিলেন, তা চার দিন স্থায়ী হয়৷ ওই সময় কাদরিকে পাকিস্তানের ‘রাজনৈতিক ড্রোন’ আখ্যা দিয়েছিলেন কোনো কোনো বিশ্লেষক৷

No comments

Powered by Blogger.