মতৈক্যের সরকার গঠনে চাপ

বাগদাদে গতকাল জন কেরি ও নুরি আল মালিকি
সুন্নি জঙ্গিদের হামলার মুখে ইরাকের সরকারি বাহিনী যখন কোণঠাসা তখন দেশটির শিয়া প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকিকে বৃহত্তর অংশীদারত্বমূলক সরকারের জন্য চাপ দিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি৷ গতকাল সোমবার বাগদাদে মালিকির সঙ্গে বৈঠক করেন কেরি৷vএদিকে, কয়েক দিনের লড়াইয়ের পর জঙ্গিরা গতকাল দেশের উত্তরাঞ্চলের তেল আফার শহর ও বিমানবন্দর দখল করে নিয়েছে৷ এর আগে পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় পুরোটা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে৷ ইরাকের সঙ্গে ইরান ও জর্ডানের সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণও এখন তাদের হাতে৷ খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির৷ ইরাকের এই পরিস্থিতিতে গতকাল জর্ডান থেকে বাগদাদে পৌঁছান জন কেরি৷ নিরাপত্তার কারণে তাঁর এই সফর নিয়ে গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর৷ বাগদাদে প্রধানমন্ত্রী মালিকিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেরি৷ বৈঠকের আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জেন সাকি জানান, জঙ্গিদের মোকািবলায় ইরাক সরকারকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করবেন কেরি৷ একই সঙ্গে যত শিগগির সম্ভব একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের জন্য ইরাকের নেতাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানাবেন৷ যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, মধ্যপন্থী সুন্নিদের চটিয়ে পরিস্থিতিকে আরও ভয়ানক করে তুলেছে প্রধানমন্ত্রী মালিকির নেতৃত্বধীন সরকার৷ এই সুন্নিরা একসময় আল-কায়েদার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে৷ কিন্তু এখন তারা ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্টের (আইএসআইএল) বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সরকারি বাহিনী বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে৷ এ অবস্থায় মালিিককে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলার ঝুঁকি নিতে চাইছে না ওয়াশিংটন৷ কিন্তু পর্দার পেছন তাঁকে সেই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করছে মার্কিন প্রশাসন৷
গতকাল বাগদাদে মালিকির সঙ্গে কেরির বৈঠকের সময় দুজনের মধ্যে কথাবার্তা খুব কমই হয়৷ বৈঠকের সময় ওই কক্ষে অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন৷ একপর্যায়ে কেরি একজন কর্মকর্তার দিকে তাকিয়ে জানতে চান, ‘কেমন আছেন?’ গত রোববার ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি অভিযোগ করেন, ওয়াশিংটন আবার নতুন করে ইরাকের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে৷ তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কেরি৷ এদিকে যখন কেরি বাগদাদে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত তখন ইরাকের উত্তরাঞ্চলের তেল আফার শহর ও বিমানবন্দর জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কয়েক দিন ধরে সেখানে সরকারি বাহিনী ও জঙ্গিদের মধ্যে তুমুল লড়াই হচ্ছিল। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তেল আফার শহরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তেল আফার শহর ও বিমানবন্দর এখন পুরোপুরি জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে৷’ শহরের বাসিন্দারা জানান, জঙ্গিদের হামলার মুখে সরকারি বাহিনী পিছু হটেছে৷ তবে প্রধানমন্ত্রী মালিকির নিরাপত্তা মুখপাত্র লে. জেনারেল কাশেম আতা টেলিভিশনে জানান, শহরটিতে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী৷ তবে তিনি এ কথাও বলেন, ‘এমনকি আমরা যদি তেল আফার বা অন্যান্য শহর থেকে বাহিনী সরিয়ে নিই তাহলে সেটার অর্থ এই নয়, আমরা পরাজিত হয়েছি৷’ এর আগে শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত আরও চারটি শহর দখল করেছিল জঙ্গিরা। সব মিলিয়ে এখন ইরাকের পাঁচটি প্রদেশের অধিকাংশ অঞ্চল জঙ্গিদের দখলে৷ তাদের অব্যাহত হামলার মুখে পিছু হটছে সরকারি বাহিনী৷ এতে গৃহহীন হয়ে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ৷ এ অবস্থায় সরকার ও জঙ্গিদের মধ্যে ইরাক বিভক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ ইরাকে গত এপ্রিলে নির্বাচন হয়েছে৷ এখন নতুন সরকার গঠন করার কথা৷ ওই নির্বাচনে মালিকির পক্ষের লোকজনই বেশির ভাগ আসনে জিতেছে৷ কিন্তু সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে তাদের এখন জোটের শরিক বাড়ানো প্রয়োজন৷ কেরি রোববার বলেন, বাগদাদের ক্ষমতায় কারা থাকবে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বলার কিছু নেই৷ কিন্তু সরকারে দেশটির শিয়া, সুন্নি, কুর্দিসহ সব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করে ওয়াশিংটন৷

No comments

Powered by Blogger.