এমপির সহযোগীদের দায়ী করে বিহারিদের স্মারকলিপি

মিরপুরের কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পে হামলা, সংঘর্ষ ও ১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ীদের বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে বিহারিরা। স্মারকলিপিতে তারা বলেছে, পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী পল্লবী থানা যুবলীগের এক নেতার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী কুর্মিটোলা বিহারি পল্লীতে অতর্কিত হামলা চালায়। পল্লীর জায়গা দখল করতেই প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে এ হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার না করে নিরীহ বিহারিদের গ্রেফতার করছে।
স্মারকলিপি দেয়ার সময় স্বরষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিহারিদের আশ্বস্ত করে বলেন, তদন্ত করে যাদের নাম আসবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দাদের ওপর কোনো প্রকার পুলিশি হয়রানি হবে না। বিহারিদের পাসপোর্ট বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাসপোর্ট পেতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার বেনজির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বুধবার পঞ্চম দিনের মতো বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে বিহারিরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শতাধিক নারী-পুরুষ কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পসংলগ্ন কালসী-ডিওএইচএস সংযোগ সড়ক বাঁশ দিয়ে অবরোধ করেন। ফলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্মারকলিপি দেয়ার আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা। তাদের সঙ্গে অংশ নেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা। এদিকে একই দাবিতে বিকালে সিপিবি ও বাসদ মানববন্ধন করে।
উর্দু স্পিকিং পিপলস ইয়ুথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের ব্যানারে ওই মানববন্ধনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান বলেন, স্বাধীন দেশে এভাবে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ন্যক্কারজনক। ঘুমন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারল আবার পুলিশ তাদের ওপরেই গুলি চালাল। এর পেছনে কোনো রহস্য আছে। সঠিক তদন্ত করে নেপথ্যের নায়কদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানান তিনি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, স্বাধীন দেশে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। উর্দু স্পিকিং পিপলস ইয়ুথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্ট (ইউএসপিওয়াইআরএম) মহাসচিব মোঃ সাইদ আলী বাবলু বলেন, জায়গা দখল করতেই আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি সাদাকাত খান ফাক্কুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদা বেগম হিরা, সাংবাদিক আবু সাইদ খান প্রমুখ।
কুর্মিটোলা ক্যাম্পে বিক্ষোভ : বুধবার কুর্মিটোলা ক্যাম্পের বাসিন্দারা রাস্তায় শুয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভে অংশ নেয়া রওশন আরা যুগান্তরকে বলেন, ‘গারিব হোনা বহুত গুনাহ হ্যায়রে বাপু, বেবিকি মাকান (বেবির ঘর) জ্বলগেয়া, কেইসে দুনিয়া অ্যাগায়া, ইয়ে দুনিয়া গারিব কিলিয়ে নেহি। হামারা জুলুম (অপরাধ) ক্যায়াহে? কিঁউ হামরা আদমীকো আগমে জ্বলা দিয়া, পুলিশ পাকড়াও কারকে লেগায়া।’
পল্লবী থানার ওসি জিয়াউজ্জামান জানান, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে এন্টি পারসোনেল কার (এপিসি) জলকামানসহ অতিরিক্ত নিরাপত্তা পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। যে কোনো অরাজকতা বন্ধে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। শবেবরাতের রাতে আতশবাজি ফাটানোকে কেন্দ্র করে শনিবার কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একই পরিবারের ৯ জনসহ ১০ জন মারা যান।
সিপিবি ও বাসদের মানববন্ধন : বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বিহারি ক্যাম্পে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বিহারির নতুন প্রজন্ম এই বাংলাদেশের নাগরিক। অথচ তাদের পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে না। তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। স্বাধীন দেশের সবাই সমান অধিকার পাওয়ার দাবিদার। বাসদের সাধারণ সম্পদাক খলিকুজ্জামান বলেন, যাদের ওপর হামলা হয়েছে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে তারা এখন এ দেশের মানুষ।

কালশীর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করলেন খালেদা

কালশীর বিহারি ক্যাম্পের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত অপরাদীদের শাস্তির দাবি জানালেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে মিরপুরে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত বিহারি পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ দাবি জানান।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, গণতন্ত্র নির্বাসিত হয়ে দেশে আজ জঙ্গি শাসন চলছে। তিনি বলেন, সারাদেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে। বিচারকরা দলীয় সিদ্ধান্তে অপরাধীদের শাস্তি দিচ্ছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের গুণ্ডাপান্ডা ও খুনের আসামিরা জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে।
এসময় ।
তিনি মিরপুরে বিহারি ক্যাম্পে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের স্বজনদেরকে অনুদান প্রদান করেন। এদের মধ্যে ইয়াসিনের পরিবারকে ২ লাখ, মো. আজহারের পরিবারকে ১ লাখ এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্তদের একত্রে ৩ লাখ টাকা দেন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন রাজধানীর পল্লবীর কালশিতে আতশবাজি পোড়ানোকে কেন্দ্র করে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ক্যাম্পের (বিহারি ক্যাম্পে) বাসিন্দাদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিহারি ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে একই পরিবারের সাতজনসহ ৯ জন নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এ সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিতে মারা  যান আরো একজন।
এসময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস ও তরিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.