জাতীয় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে

বাংলাদেশের নয় কোটির বেশি পূর্ণবয়স্ক নাগরিকের পরিচয়সহ প্রাথমিক তথ্যাবলিসংবলিত জাতীয় তথ্যভান্ডারের মালিকানা কার্যত বেহাত হয়ে আছে। কিন্তু এটা নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যত মাথাব্যথা নেই। এটা যে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত অত্যন্ত গুরুতর একটি বিষয়—এ উপলব্ধিই সম্ভবত তাদের নেই। নইলে এটা কী করে সম্ভব হতে পারে যে ভোটার তথ্যভান্ডারের নিরাপত্তা চাবি বা পার্সওয়ার্ড খোদ নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই? আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেমস ফর অ্যানহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিয়া) নামে এক প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আর ‘টাইগার আইটি’ নামের একটি বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে জাতীয় ভোটার তথ্যভান্ডার! প্রকল্পের কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের স্থায়ী কর্মকর্তা নন, আর টাইগার আইটি তো নিতান্তই এক বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এটা কীভাবে হতে পারে যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন অনুবিভাগ এদের হাতে জাতীয় ভোটার তথ্যভান্ডারের পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে? আর এটাই বা কীভাবে হতে পারে যে অন্যদের পাসওয়ার্ড দিয়ে নির্বাচন কমিশন নিজের কাছে পাসওয়ার্ড রাখার প্রয়োজন বোধ করবে না? ২০১০ সালের এক চুক্তির ভিত্তিতে ভোটার তথ্যভান্ডারের কিছু কারিগরি অবকাঠামোগত কাজের প্রয়োজনে টাইগার আইটি নামের প্রতিষ্ঠানটিকে ভোটার তথ্যভান্ডারের পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাদের ২০১২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ভোটার তথ্যভান্ডার নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করার কথা; কিন্তু দুই বছর পেরোতে চলল, এখনো তারা তা হস্তান্তর করেনি। আইডিয়া প্রকল্পের অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে টাইগার আইটি প্রতিষ্ঠানটির সম্পর্ক আছে বলে খবরে প্রকাশ।
অর্থাৎ এই দুই পক্ষ মিলে ভোটার তথ্যভান্ডারের পাসওয়ার্ড কুক্ষিগত করে রেখেছে, নির্বাচন কমিশন যা উদ্ধারের তাগিদ বোধ করেনি। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক একটা ব্যাপার। এ দেশের জাতীয় ভোটার তথ্যভান্ডার শুধু বেহাত নয়, সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়ে গেছে। পুরো তথ্যভান্ডারটি চুরি হয়ে যেতে পারে; ওই পাসওয়ার্ডই তৃতীয় কোনো পক্ষের হাতে চলে যেতে পারে, তখন পুরো তথ্যভান্ডারটি সম্পূর্ণভাবে মুছেও দিতে পারে কেউ। তেমনটি ঘটলে নতুন করে তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার বিপুল ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ কাজ চাপবে জাতির মাথায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই তথ্যভান্ডার ব্যবহার করে; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এটা কাজে লাগাতে পারে। সর্বোপরি এ রকম জাতীয় তথ্যভান্ডার পৃথিবীর সব দেশে জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয় অতি উচ্চ মানের কারিগরি প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সাহায্যে। আমাদের দেশে এ ব্যাপারে এমন অবহেলা অত্যন্ত বিপর্যয়কর হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের উচিত আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে প্রকল্পের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জাতীয় ভোটার তথ্যভান্ডারের পাসওয়ার্ড নিয়ে তা পরিবর্তন করা এবং শুধু নিজেদের কাছেই তা সংরক্ষণ করা।

No comments

Powered by Blogger.