গোলাম আযমের সঙ্গে জড়িয়ে জামায়াতের ভাগ্য by সাজেদুল হক

সরকারি বক্তব্যেই তৈরি হয়েছে বিভ্রম। যদিও বিভ্রম কেন তৈরি করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন এবং দলটির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলা একেবারেই আলাদা। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিবেচনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয় হাইকোর্টে। এ রায়ের বিরুদ্ধে দলটির দায়ের করা আপিল এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। এ মামলার সঙ্গে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধ মামলার কোন সম্পর্ক না থাকলেও আরেকটি মামলার সঙ্গে জামায়াতের ভাগ্য বহুলাংশেই জড়িয়ে গেছে। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের ফাঁসি চেয়ে আপিল বিভাগে গত ১২ই আগস্ট আপিল দায়ের করে সরকার। ওই আপিলে দল হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধের আবেদনও জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে জামায়াতের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা চাওয়া হয়েছে। গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ে জামায়াতকে একটি ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের আলোকে জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়েছে সরকার। সংবিধানের এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তির হাজিরা কিংবা কোন দলিলপত্র উদ্ঘাটন বা দাখিল করিবার আদেশসহ আপিল বিভাগের নিকট বিচারাধীন যে কোন মামলা বা বিষয়ে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচারের জন্য যেরূপ প্রয়োজনীয় হতে পারে, উক্ত বিভাগ সেরূপ নির্দেশ, আদেশ, ডিক্রি বা রিট জারি করিতে পারিবেন।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হকের বক্তব্যের জামায়াতের বিচারের ইস্যুটি সম্প্রতি নতুন করে সামনে এসেছে। জামায়াতের বিচার এবং আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সরকারকে আপিল দায়েরের সুযোগ দিতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনে সংশোধন আনা হয়। তখন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে অপরাধী সংগঠনেরও বিচারের ব্যবস্থা করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে প্রসিকিউশনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেয়। যদিও সম্প্রতি আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, ট্রাইব্যুনালস আইনে জামায়াতের বিচার সম্ভব নয়। এজন্য আইন সংশোধন করতে হবে। কারণ আইনে সংগঠনের শাস্তি কি হবে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর চারদিকে তোলপাড় তৈরি হয়। সরকার ও জামায়াতের সমঝোতার গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানান। তিনিও মত দেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে একসঙ্গে দুই মামলা চলতে পারে না। তবে আইন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিবন্ধন মামলার সঙ্গে জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলা চলতে কোনই আইনি বাধা নেই। বরং গোলাম আযমের মামলায় সরকার পক্ষের করা আবেদনের সঙ্গে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধ মামলার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। এ মামলাতেই জামায়াত নিষিদ্ধের মতো ইস্যুতে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আপিল বিভাগে বর্তমানে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল শুনানি চলছে। জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলটির আরেক নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদ- এরইমধ্যে কার্যকর হয়েছে। গোলাম আযমের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের পাশাপাশি তিনিও খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করেছেন। মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল নিষ্পত্তির পর গোলাম আযমের আপিল শুনানি হতে পারে। জামায়াত নিষিদ্ধের মতো ইস্যুর চূড়ান্ত সুরাহা হতে পারে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেই।

No comments

Powered by Blogger.