পুরাবৃত্ত by নাজিব ওয়াদুদ

দূরে একটা ধুলোর ঘূর্ণি। পাক খেয়ে খেয়ে বিশাল অজগর যেন আসছে ধেয়ে। এই তাতানো গরমকালে সেটা নৈমিত্তিক ঘটনা। বিশেষ এ দুপুরের পর, বিকালের শুরুতে। এ সূর্যপীড়িত গ্রামে মাটি পুড়ে পুড়ে কয়লাটে। ধুলো মিহি, কিন্তু মুড়িভাজা বালুর মতো মরচে-রঙা। সামনে দিগন্তজোড়া ধু-ধু প্রান্তর। খালি। শস্যহীন। মরুভূমির মতো জল ও জীবনহীন। একটি-দুটি ন্যাড়া গাছ দাঁড়িয়ে এখানে সেখানে, কখনও যে এ মাটি ফলবতী ছিল তার সাক্ষ্য দিতে যেন আদালতের বারান্দায় সারা দিন ধরে অপেক্ষমাণ।
এসব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল যে মেয়েটি সে প্রকৃতপক্ষে দেখছিল না, ভাসমান দীপ্তিহীন চোখ মেলে তাকিয়ে ছিল মাত্র। তার বয়স অনুমান করা অসম্ভব। ন্যাড়া গাছগুলোর চেয়েও হালকা, সরু, পুষ্টিহীন তার দেহ। ক্ষুধায় অকালে বলিরেখা-পড়া সাবালকপ্রাপ্ত মুখ। প্রথমে সে ঘূর্ণিটাকে পাত্তা দেয়নি। এসব দেখে দেখে অভ্যস্ত সে। কিন্তু ঘূর্ণিটা কবিরাজের গাছামু শেকড় দেখে বশমানা সাপের মতো ক্রমশ ফণা সংকুচিত করে। নেতিয়ে পড়ে তার দেহ। এখন তার আকাশের চেয়ে মাটির প্রতি অধিক আগ্রহ। ক্রমে সে খেয়াজালের মতো ঝপাত করে মাটির ওপর আছড়ে পড়ে। তখন মনে হয় তার মধ্যে থেকে একটা প্রাণী মাথা তুলে দাঁড়ায়। হাঁটতে থাকে। ক্রমে ক্রমে, নিছক প্রাণী নয় কোনও, তাকে একেবারে দু-পেয়ে জন্তুর মতো দেখায়। যেন বা ধুলোরই মানুষ একটা। এ অকালে এই অভাবী খরাপীড়িত বিরান গ্রামে কোনো পরিব্রাজকের আগমন বিস্ময়ের ব্যাপার। হয়তো বা অসম্ভবও। তবু সে তো পরিব্রাজক না হয়ে যায় না। কেন না এ গ্রাম থেকে লোক শুধু যাচ্ছেই। সত্যিকার কথা, পালাচ্ছে। যেতে যেতে গ্রামখানি শূন্য এখন। এতদিন একটি লোকও ফেরেনি এ গ্রামে। শুধুই গেছে। ফেরার কোনো কারণও ঘটেনি। তাহলে কে সে মানুষটি ফিরে আসছে আজ? সেটা সম্ভব নয়। তাহলে সে পরিব্রাজক না হয়ে যায় না। কেন যেন এক অলিক সম্ভাবনায় মেয়েটির শুকনো পচা মাটির মতো কালচে চোখ-মুখ উজ্জ্বল হওয়ার চেষ্টা করে।
সে বসে আছে আমগাছের নিচে। আসলে হেলান দিয়ে রয়েছে গাছের গোড়ায়। কারণ স্বাভাবিকভাবে বসে থাকার মতো শক্তি তার দেহে নেই। গাছটাকেও ঠিক আর গাছ বলা চলে না। তার পত্র-পল্লবগুলো যেন খুবলে খুবলে ছিঁড়ে নিয়ে গেছে হিংস্র দৈত্যের দল। এ জ্যৈষ্ঠ মাসে তার শুকনো প্রশাখায় এখনও কয়েকটা ফলের ভ্রুণ কালো কয়লার মতো সেঁটে রয়েছে। মেয়েটি ঝরে পড়া সে রকমই একটা ভ্রুণ চিবিয়ে রস সিঞ্চনের প্রয়াস করছে। আমের কড়ালি শুকিয়ে খড়মড়ে। মাসহীন। রসহীন। তেতো। কয়লার মতোই বিস্বাদ। বা স্বাদহীন। লোকটিকে দেখে মেয়েটি সে কথাও ভুলে যায়।
সে পালাতে পারেনি। কারণ সে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। জ্বর এতটাই তীব্র ছিল যে তার কোনো হুশ ছিল না। অনাহারী শরীর তার জ্বালা সইতে পারছিল না। তার বুড়ো বাপ, কিংবা সৎ-মা, কিংবা ভাইবোনরাও অনাহারে বিধ্বস্ত ও জর্জরিত। মৃত্যু-আতংক সবাইকে গ্রাস করেছিল। কেউ কারও ভার নিতে সমর্থ ছিল না। কেয়ামতের ময়দানে নাকি এরকম হবে। স্বামী স্ত্রীকে চিনবে না। বাপ-মা সন্তানকে দেখে পালিয়ে যাবে। সেদিনের ভয়াবহতা হবে এমনি প্রটণ্ড ও অমানবিক। নিজেকে বাঁচানোর চিন্তায় দিশাহারা হয়ে থাকবে সবাই। তাদেরও এমন অবস্থাই হয়েছিল। কেউ কারও দায়িত্ব নেয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। তাদের মনে মৃত্যুভয় বাসা বেঁধেছিল।
সেটাই স্বাভাবিক। কেন না, এ অবস্থা শুধু এ গ্রামেরই নয়। অন্যসব গ্রাম থেকেও একই রকম খবর আসছিল। তিন বছর আগে যে এত বড় যুদ্ধ হয়ে গেল, আর ঘন-ঘোর বর্ষা ও প্লাবন, তখনও এমন অবস্থা হয়নি। গ্রামগুলো যেন দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত। দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে উত্তপ্ত সূর্যের তাপে। হতাশ মানুষগুলো সব কদুর লতার মতো নেতিয়ে পড়তে লাগল মাটির ওপর। গ্রামের ক্ষেতে ফসল নেই, পুকুরে-খালে পানি নেই, যেন সবার এখন শান্তভাবে মরে যাওয়ার সময়। যেমন মানুষের দুরবস্থা, তেমনই জীবজন্তু, গাছপালারও।
লোকটি এখন অনেকখানি কাছে। মেয়েটিকে লক্ষ্য করে সে এবং কৃশকায়া এ বালিকার মুখোমুখি হবে বলে রাস্তা থেকে নেমে আসে। মেয়েটি শান্ত হয়ে বসে আছে। আসলে তার অশান্ত হওয়ার মতো শক্তিই নেই। যে কোনো একটা ইঁদুর এসেও তাকে কুরে-কুরে খেয়ে ফেলতে পারে।
লোকটি নীরবে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ তাকে নিরীক্ষণ করে। তারপর দ্রুত তার কাছে গিয়ে রসাল ফলের
একটা টুকরো এগিয়ে ধরে। মেয়েটি একই সঙ্গে হাঁ করে এবং হাত বাড়ায়। লোকটি ক্ষণিকের জন্য বিভ্রান্ত হলেও ফলের টুকরোটি সরাসরি তার মুখেই তুলে দেয়। মেয়েটি ধীরে ধীরে সেটি চিবোতে শুরু করে। তার খাওয়া দেখে মনে হয় না সে ক্ষুধার্ত বা অনাহারী। কিন্তু তা তো হতেই পারে না। আসলে ক্ষুধায়-পিপাসায় তার সব বোধই হয়তো বা অবশ হয়ে গেছে। টুকরোটুকু খেতে গিয়ে অপরিসীম পরিশ্রমে সে যেন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আরও এলিয়ে পড়ে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সে তার চোখ উন্মিলন করে। তাকায় লোকটির দিকে। হাত বাড়ায়। লোকটি তার মুখে আর এক টুকরো ফল তুলে দেয়। মেয়েটি এবার একটু নড়ে-চড়ে, মেরুদণ্ড সোজা করে বসে। তার মাড়ি দুটো দ্রুত কাজ করে। তার বোধ ফিরে আসছে। সে খাবারের স্বাদ পাচ্ছে। শরীরে রস পাচ্ছে। এবার গোটা একটা বিস্কুট এগিয়ে দেয় লোকটি। সেটাকে প্রায় গোগ্রাসে চিবিয়ে গিলে ফেলে মেয়েটি। তারপর বোতল থেকে কয়েক ঢোক পানি। আরও চায়। কিন্তু এবার কঠোর হয় লোকটি। - অ্যাখুন আর না। পরে।
মেয়েটি কষ্ট পায়, কিন্তু ক্ষুব্ধ হয় না। সেরকম মনের জোর তার নেই। শরীরও অচল-প্রায়। সে আবার গাছের গুঁড়ির সঙ্গে হেলান দেয়। খাওয়ার পরিশ্রমে সে ক্লান্ত।
চারপাশে তাকায় লোকটি। বাড়ি-ঘরগুলো কুটিরের মতো। কিন্তু কোনো মানুষের সাড়া-শব্দ নেই। এমনকি কোনো গৃহপালিত জন্তু-জানোয়ারও নেই। গাছপালা পাতাশূন্য, মরা ডালপালা বিকালের রোদে পুড়ছে। ফসলের চারাগুলো শুকিয়ে পোড়া আবর্জনার মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কঠিন মাটির ওপর, যেন অনাহারী গ্রামের প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর সংকেত দিচ্ছে। আগন্তুকের মুখ গম্ভীর হয়ে ওঠে। তারপর, আশ্চর্যজনক উদাসীনতার সঙ্গে পায়ের নিচে কাত হয়ে পড়ে থাকা একটি চারা আমগাছের পাতা ভেঙে নেয়। কোমরে মুছে মুখে পুরে দেয়। চিবুতে থাকে। এতটুকু রসও যদি থাকে! একটুখানি চিবিয়ে থুক করে ফেলে দেয় সে।
যেন একটা আগুনের ঝড় বয়ে গেছে এ গ্রামের ওপর দিয়ে। লোকটি মনে মনে একটু ভয় পায়। গত কয়েক মাস থেকে সে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরছে। সদ্য-স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সব গ্রামই অভাবী। কিন্তু এ গ্রামের মতো আর দেখেনি সে। দুর্ভিক্ষ ও খরা একসঙ্গে তার গলা টিপে ধরেছে।
এদিক-ওদিক তাকিয়ে সে বলে, কেউ নাই? একই সঙ্গে বিস্মিত, বিভ্রান্ত ও উৎফুল্ল তার কণ্ঠ।
মেয়েটি তার মাথাটা একটু এপাশ-ওপাশ করে। অর্থাৎ নেই।
বিকালের রোদ পড়ে আসছে।
আজকের রাতটা এখানেই কাটাবে, ভাবে আগন্তুক।
মেয়েটি এখন রসবতী হয়ে উঠছে। দেখা যাচ্ছে সে পূর্ণ যুবতি। বয়স ঊনিশ-কুড়ির কম হবে না। উজ্জ্বল শ্যামলা রং, কলাপাতার মতো হলদেটে সবুজ। এ কয়দিনের খাওয়া-বিশ্রামেই তার দেহবর্ণের খোলতাই ফেটে বেরুতে লেগেছে। নিষ্পাপ মায়াময় মুখ। চোখ দুটো যেন সব সময় টলটল করে। কৃতজ্ঞতার পানি যখন-তখন ছলছলিয়ে ওঠে।
লোকটি তাকে এ বাড়িতে এনে তুলেছে। আর কেউ নেই এখানে। সে সকালে বেরিয়ে যায়, ফেরে দুপুরের পর। বিকালে বেরিয়ে আবার ফেরে সেই গভীর রাতে। খাবার আসে বাইরে থেকে।
প্রথম দিনই লোকটি বলেছে, এটা হল শহর এলাকা। খুব খারাপ জায়গা। কাউকে বিশ্বাস নাই। বাইরে যাবে না, উঁকি-ঝুঁকি দেবে না। কারও সঙ্গে কথা বলবে না।
তার সাবধানবাণী শুনে একটা ওয়াজের কথা মনে পড়ে মেয়েটির। সেই ওয়াজ মাহফিলে মৌলভি সাহেব বলেছিলেন, পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে মসজিদ, আর সবচেয়ে খারাপ জায়গা বাজার। মিলে যায় লোকটির কথা মৌলভি সাহেবের ওয়াজের সঙ্গে। এটা তো বাজারই। সুতরাং খারাপ জায়গা। লোকটার কথা সত্যি বলে মেনে নিয়েছে সে। এ বাড়িতে তার মাসখানিক হয়ে গেল। একটি দিনের জন্য, একবারও, সে বাড়ির বাহির হয়নি। হবেই বা কেমন করে। এখানকার কিছুই চেনে না সে। কোনো মানুষজনও পরিচিত নয়। আর তাকে থাকতে হয় তালাবদ্ধ ঘরে। বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাইরে থেকে ঘরে তালা মেরে যায় লোকটি। অভাব নেই খাবারের, পরনের কাপড়ের, এমনকি নিরাপত্তারও।
মেয়েটি কথা বলতে ভয় পায়। যখন ভয় কাটিয়ে ওঠে তখন কেবল একটা কথাই সে বলতে পারে- আমি বাড়িত যাব।
লোকটি কোনো উত্তর করে না।
লোকটি প্রতিদিন অনেক রাতে বাড়ি ফেরে। প্রায় দিনই খেয়ে আসে বাইরে থেকে। একটা-দুটো কথা বলে-কি-বলে-না, ঘুমিয়ে পড়ে। আবার সকালে বেরিয়ে যায়।
একদিন দুপুরের পর তাকে বেরোতে বলে লোকটা। -রেডি হও।
কিছু প্রসাধনসামগ্রী এগিয়ে দেয় তার দিকে। -এইগুলা সুন্দর করে মাখো।
কোনো প্রশ্ন না করে দ্রুত তৈরি হয় সে। কেবল একবার অনুচ্চস্বরে বলে- আমি বাড়িত যাব।
একটা রিকশায় ওঠে ওরা। পাশাপাশি বসতে হয়। আড়ষ্ট হয়ে বসে থাকে মেয়েটি। কোনো কথা বলে না। লোকটিও কথা বলে খুব কম। কিন্তু আজ মাঝে-মাঝে মুখ খোলে। শহরের এটা-ওটা দেখিয়ে দেয়। যেন ওকে শহর চেনাচ্ছে। মেয়েটি অবাক হয়ে দেখে বটে। কিন্তু তার মন বসে না।
লোকটার যেন কী হয়েছে। কোথায় চলেছে কে জানে! রিকশায় শুধু ঘুরছে। -কুন ঠায়ে যাব ছার? রিকশাওয়ালার প্রশ্নে একেকবার একেক জায়গার কথা বলে। এই ছোট্ট শহরটার অনেকখানিই ঘোরা হয়ে যায় তাদের। রিকশাওয়ালা শেষ পর্যন্ত ভাবে, হাওয়া খেতে বেরিয়েছে ওরা। কিন্তু সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে একনাগাড়ে রিকশা টেনে। -ছার, একাট্টুক চা-পানি খাবেন না? আমার খুব তিস্সি লাইগিছে। লোকটার যেন হুশ ফেরে। এবার একটা হোটেল দেখে দাঁড়াতে বলে। সিঙ্গাড়া, মিষ্টি, শেষে চা খায়। লোকটা ভাবে, এইটুকুর প্রয়োজন ছিল। এখন কেমন তরতাজা লাগছে। অবশেষে সন্ধ্যের আগে ঘরে ফেরে ওরা।
সেদিন আর বের হয় না সে। নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে ভাবে কেবল। -এই কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। কী করে এ কাজ করব আমি, বলো? একটা বোকা-সোকা, সরল-সোজা, অসহায় নিষ্পাপ মেয়েকে নিয়ে এ কাজ করা আমার উচিত হবে? ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে লোকটা।
বেশ রাত হয়। তখন তাকে খেতে ডাকে মেয়েটি।
-ঘুমাওনি তুমি?
-আপনের খাওয়া হয়নি যে।
-তুমি খেয়েছ?
-না।
অবাক হয় সে। কিন্তু কিছু বলে না। নিশ্চুপ খেয়ে ওঠে।
অনেক রাতে তার ভাবনা শেষ হয়। তখন পাশের ঘরে গিয়ে মেয়েটিকে ডাকে। নিশ্চিন্তে গভীর ঘুমে নেতিয়ে ছিল মেয়েটি। ধড়ফড় করে উঠে কাঁপতে থাকে। সেদিকে খেয়াল নেই লোকটির। সে বলে, কাল ভোর-ভোর রেডি থাকবে। তোমাকে তোমার বাড়ি নিয়ে যাব।
কী কালঘুমে যে ধরেছিল তাকে, ধুম-ধাড়াক্কায় যখন ঘুম ভাঙে তখন অনেক বেলা হয়ে গেছে। দরোজা খুলতেই হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে আগন্তুক তিন যুবক।
-তোরা?
তার গলায় একটা ছুরি চেপে ধরে একজন। -শালা! মাল কই? ট্যাকা হজম কিন্তু মালের খবর নাই, আঁ?
-টাকা দিয়ে দেব।
-এইরেশ্শালা, ট্যাকা লিয়ে কী কইরব আমরা, আঁ? আমরা মাল চাই। কাইল্ তোর মাল লিয়ে যাওয়ার কথা না? যাইস্নি ক্যান?
কাল বেরিয়েছিল নিয়ে যাবে বলে কিন্তু পারেনি। সেকথা বলার ফুরসত পায় না সে। তাকে বাঁধার চেষ্টা করে ওরা। হইচই শুনে মেয়েটি ততক্ষণে হাজির।
-এই, এডিই সেই মাল নাকি?
ধর শালিকে! তাকে ধরতে যায় একজন।
দ্রুত পেছন ফিরে হেঁশেলে ঢোকে মেয়েটি। হাতে নেয় ইয়া বড় বটিটা। পাল্টা তাড়া করে। ছুরিওয়ালা লোকটা ছুটে আসে। তার পাঁজরে এক ঘা বসিয়ে দেয় মেয়েটি। সে একটা বিস্মিত হাঁ দেখিয়ে নেতিয়ে পড়ে। অন্য দুজন ছুটে আসে। কিন্তু মেয়েটির রণমূর্তি দেখে পিছটান দেয়।
মাথার ওপর তাতানো রোদ, মাঠময় শীতল ভেজা বাতাসের ঝুলঝাপ্পি। মাসখানিক আগে যে ধুলোর ঘূর্ণিময় রোদ-পোড়া মরচেময় মাটি রেখে গিয়েছিল, সেখানে এখন সোঁদাল গন্ধ। নাড়া গাছগুলো সবুজ পাতার মেলা। মাঠময় সবুজ ঘাসের জাজিম। তার মধ্যে চরে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল। হাল-বলদ নিয়ে কাজে ব্যস্ত কৃষকের দল। একটা আমগাছের নিচে দাঁড়ায় ওরা। তার পাতাগুলো এখন কী সবুজ!
যুবকটির হাত দুটি টেনে নেয় যুবতি। তার চোখে চোখ রেখে হাসে। যুবক অপলক তাকিয়ে থাকে তার দিকে। আবার হাসে মেয়েটি। অপার রহস্য তার চোখে-মুখে। ছেলেটি বলে, কী! মেয়েটি হাতের ইশারায় দূরে তার গ্রাম দেখায়।
ছেলেটি একবার পেছনে তাকায়, তারপর দিগন্তের দিকে, দেখে- দূরে, বহু দূরে, মাঠের পারে আকাশ মিলেছে মাটির সঙ্গে।
মেয়েটি দ্রুত পা চালায়, যেন হাঁটে না- নাচতে নাচতে উড়ে চলে। তাই দেখে না হেসে পারে না ছেলেটি।

No comments

Powered by Blogger.