পাপের ৬৬ বছর!

১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের দেশান্তরের শুরু
ফিলিস্তিনিদের ‘নাকবা’র ৬৬ বছর পূর্ণ হলো৷ আরবি শব্দ নাকবার অর্থ মহাবিপর্যয়৷ বলপূর্বক ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক পত্তন ও স্বাধীনতা ঘোষণা৷ ৬৬ বছর আগে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে তেলআবিবে জায়নবাদী নেতা বেন গুরিয়ান এই ঘোষণা দেন৷ তার পরদিন ১৫ মে আরব দেশগুলো একযোগে ইসরায়েল আক্রমণ করলেও শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে আমেরিকা-ব্রিটেনের অস্ত্র-সমর্থনপুষ্ট ইসরায়েলের কাছে৷ ১০ লাখের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন আরব দেশে আশ্রয় নেয়৷ সেই শরণার্থী জীবন চলছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে৷ আর ইসরায়েল দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ভূমি ও সম্পদ দখল করে নিচ্ছে, নিত্যনতুন ইহুদি বসতি স্থাপন করছে, ধ্বংস করে দিচ্ছে ফিলিস্তিনি আরবদের শত শত বছরের পুরোনো জনপদগুলো৷ ১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাসেলে প্রথম জায়নবাদী কংগ্রেসে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে এই রাষ্ট্র স্থাপনের প্রস্তাব করে৷ তখন ফিলিস্তিন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন৷ অটোমান সুলতান আবদুল হামিদ এই প্রস্তাব নাকচ করে দেন৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৭ সালে ফিলিস্তিন ও ট্রান্স জর্ডান ব্রিটিশদের দখলে যায়৷
ওই বছর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলফোর ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ব্রিটেনের সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার ঘোষণা করেন৷ ইউরোপ থেকে ক্রমেই ইহুদিরা গিয়ে আবাস গড়তে থাকে ফিলিস্তিনে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নেতৃত্বে ইউরোপজুড়ে ইহুদিনিধন শুরু হলে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের গমন বেড়ে যায়৷ ১৯৪৭ সালে নবগঠিত জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দুই ভাগ করে দুটি রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করে৷ ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কর্তৃত্বের অবসান ঘটায়, জায়নবাদীরা ঘোষণা দেয় স্বাধীন ইসরায়েল রাষ্ট্রের৷ ১৫ মে তাই নাকবা৷ এর পরের সাড়ে ছয় দশকের ইতিহাস একদিকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের শক্তিশালী, আগ্রাসী ও সম্প্রসারণশীল হওয়ার, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের নিগ্রহের, ভূমি হারানোর ও হত্যা-নিপীড়নের শিকার হওয়ার৷ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সর্বাত্মক সমর্থন-সহায়তায় ইসরায়েল ক্রমশ পরিণত হয়েছে এক দুর্ধর্ষ রাষ্ট্রে৷ অবশ্য অনেক উদারপন্থী ইহুদি ইসরায়েলের দখলদাির ও আগ্রাসনকে সমর্থন দেয় না, এমনকি কোনো কোনো গোঁড়া ইহুদি ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ইহুদিদের রাষ্ট্র হিসেবে মানে না৷ তবে তাদের কণ্ঠস্বর ঠাঁই পায় না পাশ্চাত্যের মূলধারার।

No comments

Powered by Blogger.