তুরস্কে ২৪৫ শ্রমিকের মৃত্যু

তুরস্কের মানিসা প্রদেশে কয়লা খনিতে স্বজনের মৃত্যুর
খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই নারী। এএফপি
তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলীয় মানিসা প্রদেশের সোমা এলাকার একটি কয়লাখনিতে গত মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় কমপক্ষে ২৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ এখনো আটকা আছেন কয়েক শ কর্মী৷ তাঁদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে৷ এ ঘটনার পর তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে৷ এদিকে, প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গতকাল বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে ক্ষুব্ধ লোকজন তাঁর গাড়ি আটকে রেখে বিক্ষোভ করে৷
এ ছাড়া আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলে বিক্ষুব্ধ লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের৷ তুরস্কের জ্বালানিমন্ত্রী তানের ইলদিজ বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা, ভয়াবহ খনি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে৷ এটা এমন একটা দুর্ঘটনার দিকে মোড় নিতে চলেছে, যেখানে তুরস্ককে তার ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হতে পারে৷’ মন্ত্রী তানের ইলদিজ গতকাল জানান, মানিসা প্রদেশের সোমা এলাকার সোমা কোমুর নামের বেসরকারি কয়লা খনিটিতে মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর থেকে এ পর্যন্ত ২৪৫ জন শ্রমিককে মৃত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে৷ তবে ঠিক কতজন এখনো ওই খনির ভেতরে আটকা আছেন, তা নিশ্চিত করে বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি৷ তবে এর আগে বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছিল, খনির ভেতরে ৭৮৭ জন কর্মী ছিলেন৷ তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এএফএডি জানিয়েছে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৯৩ জনকে ওই খনি থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ৮৫ জনই আহত৷ তুরস্কে খনি দুর্ঘটনা বিরল নয়, বিশেষ করে বেসরকারি খনিগুলোতে মাঝেমধ্যেই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে৷ এর আগে তুরস্কে সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯২ সালে৷
তখন জঙ্গুলডাক প্রদেশের একটি খনিতে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৬৩ জন কর্মীর প্রাণহানি ঘটেছিল৷ মঙ্গলবার বিস্ফোরণটি ঘটে গ্রিনিচ মান সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে৷ ত্রুটিপূর্ণ একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার থেকে এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়৷ একটি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, খনিটিতে অন্তত দুটি পকেট ছিল৷ এর মধ্যে একটি উন্মুক্ত থাকায় উদ্ধারকর্মীরা আটকে পড়া কর্মীদের কাছে যেতে সক্ষম হন৷ দ্বিতীয়টি বন্ধ থাকায় সেদিকে যাওয়া যায়নি৷ উদ্ধার তৎপরতায় ৪০০ জনের বেশি কর্মী যোগ দিয়েছেন৷ তবে আগুন ও বিষাক্ত কার্বন মনো-অক্সাইড গ্যাসের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে৷ জীবিত উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের বেশির ভাগই কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন৷ নিঃশ্বাসের সঙ্গে ধুলাবালু শরীরে ঢুকে পড়ায় তাঁদের এ অবস্থা হয়েছে৷ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ও প্রবেশপথ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার নিচে এখনো যাঁরা আটকা আছেন, তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতে উদ্ধারকর্মীরা পাম্পের সাহায্যে পরিষ্কার বাতাস পেঁৗছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন৷ কর্মীদের কাছে গ্যাস মাস্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তবে এগুলোর সাহায্যে তাঁরা কতক্ষণ টিকতে পারবেন, তা স্পষ্ট নয়৷ ইস্তাম্বুলে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়৷ খনি দুর্ঘটনার পর তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আলবেনিয়া সফর ও প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল চীন সফর বাতিল করেছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে তিনদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়৷ এএফপি ও রয়টার্স৷

No comments

Powered by Blogger.