থাইল্যান্ডে সাংবিধানিক আদালতের রায়

ইংলাক সিনাওয়াত্রা
৩১ অক্টোবর, ২০১৩
পার্লামেন্টে দায়মুক্তি বিেলর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ৷ ১ নভেম্বর নিম্নকক্ষে বিল পাস৷ পরে আন্দোলনের মুখে উচ্চকেক্ষ বাতিল
৮ ডিসেম্বর, ২০১৩
বিরোধী এমপিদের গণহারে পদত্যাগ
৯ ডিসেম্বর, ২০১৩
আগাম নির্বাচনের ঘোষণা ইংলাকের
১৩ জানুয়ারি, ২০১৪
‘ব্যাংকক অচল’ কর্মসূচি শুরু
২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪
বিতর্কিত নির্বাচনে ভোট গ্রহণ
২১ মার্চ, ২০১৪
নির্বাচন বাতিল ঘোষণা আদালতের
৭ মে, ২০১৪
ইংলাক ও তাঁর মন্ত্রিসভার কয়েকজনকে অপসারণ সাংবিধানিক আদালতের
তথ্যসূত্র: এএফপি
ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে গতকাল বুধবার বরখাস্ত করেছেন সাংবিধানিক আদালত৷ তবে তাঁর সরকার টিকে আছে৷ আদালতের রায়ের পর নিওয়াত্তুমরং বুনসংপাইসানকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ আদালতের এই রায়ের ফলে থাইল্যান্ডে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় নতুন মাত্রা পেতে পারে৷ ইংলাকের পদত্যাগের দাবিতে ছয় মাস ধরে আন্দোলন করছে বিরোধীরা৷ আদালতের সিদ্ধান্তে তারা খুশি হলেও থাইল্যান্ডে সিনাওয়াত্রা পরিবারের প্রভাব মুছে ফেলতে দেশে সংস্কার বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে তারা রাস্তায় থাকার ঘোষণা দিয়েছে৷ আর ইংলাক বরখাস্ত হওয়ায় তাঁর সমর্থকেরা এবার আটঘাট বেঁধে রাস্তায় নামতে পারে৷ আদালতের রায়ের বিষয়টি মাথায় রেখে চলতি সপ্তাহের শেষে বড় ধরনের বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল ইংলাকের সমর্থকেরা৷ পূর্বনির্ধারিত সেই বিক্ষোভ তারা করবে বলে গতকাল ঘোষণা দিয়েছে৷ অবশ্য, ইংলাকের মামলায় সম্পৃক্ত নন, এমন মন্ত্রীরা দায়িত্বে বহাল থাকতে পারবেন বলে আদালত রায় দেওয়ায় এখনই ইংলাকের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘাত বাধার আশঙ্কা কম৷ গত বছরের অক্টোবরে ইংলাক সরকার একটি সাধারণ দায়মুক্তি বিল পার্লামেন্টে পাস করানোর চেষ্টা করলে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়৷ বিরোধীরা অভিযোগ করছে, ইংলাকের ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে নির্বাসিত অবস্থা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ওই বিল পাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল৷ ইংলাকবিরোধীরা রাজপথে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার পর তাঁকে অপসারণ করতে আইনি পথে হাঁটে৷ ২০১১ সালে থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান থাবিল প্লিয়েনশ্রিকে বদলি করেছিল ইংলাক সরকার৷ তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয় ইংলাকের একজন আত্মীয়কে৷ ওই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলা করা হয়৷ সাংবিধানিক আদালতের বিচারককেরা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্তে পেঁৗছান, থাবিলকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইংলাক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন৷
তাঁর আত্মীয় প্রিউপান দামাপোংকে ওই পদে আনতে এটি করা হয়েছিল৷ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত রুলিংয়ে আদালতের বিচারক শারুন ইনতাশান বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁর নিজের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য কাজ করেছেন...ওই স্থানান্তর দেশের স্বার্থে করা হয়নি৷’ থাবিলকে বদলির সিদ্ধান্ত যেসব মন্ত্রী অনুমোদন করেছিলেন, তাঁদেরও বরখাস্ত করেন আদালত৷ তবে ইংলাক গত মঙ্গলবার আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে কোনো ধরনের নীতিবহির্ভূত কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ গতকাল রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে ছিলেন না৷ রায়ের ব্যাপারে তাঁর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বক্তব্যও পাওয়া যায়নি৷ এমনকি রায়ের বিরুদ্ধে ইংলাক আপিল করবেন কি না, সেটাও স্পষ্ট নয়৷ আবার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত রুলিং দেওয়ায় দেশটিতে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হবে কি না, সেটি নিয়েও সংশয় ছিল৷ তবে ইংলাককে বরখাস্ত করার পরই তাঁর মন্ত্রিসভা নতুন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ঘোষণা দেয়৷ দেশটির একজন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ফংথেপ থেপকানজানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মন্ত্রিসভা নিওয়াত্তুমরং বুনসংপাইসানকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে৷’ আদালতের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ: থাই সাংবিধানিক আদালতের কাজ হচ্ছে দেশের সংবিধান লঙ্ঘনসংক্রান্ত মামলার দেখভাল করা৷ ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকসিনকে উৎখাতের পর ওই সংবিধান লেখা হয়৷ আদালতের রায়কে থাকসিন পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছে তাঁদের সমর্থকেরা৷ গতকাল রায় ঘোষণার পর ‘রেড শার্ট’ নেতা জতুপর্ন প্রোম্পান বলেন, ‘শত্রুরা যা করছে, তার সবই একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার জন্য...তবে আমাদের হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার কোনো কারণ নেই৷ আমরা আগের পরিকল্পনা মোতাবেক ১০ মে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করব৷’ তবে রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা৷ এএফপি ও রয়টার্স৷

No comments

Powered by Blogger.