মেডিকেল শিক্ষার্থীর লিভ টুগেদার অতঃপর...

মেডিকেলে পড়ুয়া মেয়ে কলেজ হোস্টেলে থাকতেন বলেই জানতেন তার মফস্বল শহরে থাকা বাবা-মা। প্রতি মাসে হোস্টেল খরচসহ অন্যান্য খরচ দিয়ে আসছিলেন নিয়মিতই। কিন্তু গতকাল ভোরে হঠাৎ জানতে পারেন মেয়ে মারা গেছে।
শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু হোস্টেলে নয়, রায়েরবাজারের সচিবের গলির এক বাসায়। মেয়ে সেখানে আরিফুল ইসলাম নামে এক যুবকের সঙ্গে লিভ টুগেদার করছিল। এই মেডিকেল ছাত্রীর নাম সাউদিয়া আক্তার মিথি (২৩)। সে জেডএইচ শিকদার উইমেন মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড হাসপাতাল) মর্গে পাঠায়। মিথির পিতা আবদুস সালাম বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ আরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে। হাজারীবাগ থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। প্রধান ও একমাত্র আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে কিভাবে মিথিকে হত্যা করা হয়েছে তা বেরিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, গত দুই মাস আগে মিথি ও আরিফ হাজারীবাগের সুলতানগঞ্জের ৩/৫ নম্বর সচিবের গলির বাসার ষষ্ঠ তলার একটি কক্ষ সাবলেট হিসেবে ভাড়া নেয়। ওই বাসার ভাড়াটিয়া নুসরাত সাথী জানান, মিথি ও আরিফ নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছিল। গত সোমবার থেকে মিথির সহপাঠী একই মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া রোমানা নাজনীন তার প্রেমিক আকিভ জাভেদ অনিকে স্বামী পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় রাত কাটায়। মঙ্গলবার রাতে তারা চারজন একসঙ্গে আড্ডাবাজি করে। একপর্যায়ে মিথি ও আরিফের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হলে তারা নিজেদের রুমে চলে যায়। এসময় আরিফ কক্ষে উচ্চ সাউন্ডে গান বাজাতে থাকে। রাত ২টার দিকে আরিফ তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জানায় মিথি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে তারা মিথির কক্ষে গিয়ে মেঝেতে শোয়ানো অবস্থায় তার মৃতদেহ দেখতে পান। এ সময় আরিফ বিভিন্ন রকম অসংলগ্ন কথা বলতে থাকে। এর আগে পাশের কক্ষ থেকে অনি ও রোমানা উঠেও মিথির মৃতদেহ দেখতে পায়। পরে ভোরে মিথির মোবাইল থেকে বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানানো হয়।
আবদুস সালাম জানান, ভোর চারটার দিকে সাথী পরিচয় দিয়ে মিথির মোবাইল থেকে এক মহিলা তার স্ত্রীকে ফোন দেন। ফোনে প্রথমে তাদের দ্রুত ঢাকায় আসতে বলা হয়। পরে আবার ফোন করে মিথির মৃত্যুর খবর দেয়া হয়। এ সময় তিনি মিথি হোস্টেল বাদ দিয়ে তার বাসায় কেন জিজ্ঞাসা করলে ওই মহিলা ফোনটি কেটে দেন। মিথি মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ২১২ নম্বর কক্ষে থাকতো। পরে তারা সকালে ঢাকায় এসে সাথীর বাসায় গিয়ে মিথির মৃতদেহ দেখতে পান। আবদুস সালাম বলেন, তার মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। মিথির শরীরেও একাধিক জখমের চিহ্ন ছিল। তিনি মেয়ের হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
আবুল হাশেম নামে এক স্বজন জানান, মিথির মতো মেয়ে স্বেচ্ছায় কারও সঙ্গে লিভ টুগেদার করতে পারে না। তাকে প্রেমের প্রলোভনে লিভ টুগেদারে বাধ্য করা হয়েছে। এজন্য মিথি বিষয়টি পরিবারের সঙ্গেও শেয়ার করতে পারেনি। তিনি বলেন, তিনিও মাঝেমধ্যে শিকদার মেডিকেলের হোস্টেলে গিয়ে মিথিকে টাকা-পয়সা দিয়ে আসতেন। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি মিথি হোস্টেলে না থেকে কারও সঙ্গে লিভ টুগেদার করছে। মিথির পিতার বন্ধু পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়র মিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক জানান, মিথির বাবা-মা দু’জনই সাঁথিয়া থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করেন। সাঁথিয়া পৌরসভাতেই তাদের বাড়ি। তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে মিথি সেজো। মিথির স্বজন ও সহপাঠী সূত্রে জানা গেছে, বছরখানেক আগে আরিফ নামে ওই যুবকের সঙ্গে মিথির মোবাইলে পরিচয় হয়। এরপর দু’জনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আরিফ নিজেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা পরিচয় দিলেও সে আসলে এসএসসি পাস। মিথিকে তার পিতা প্রতি মাসে টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচের জন্য প্রচুর টাকা দিতেন। এসব টাকার একটি অংশ মিথির কাছ থেকে কৌশলে আরিফ নিয়ে নিজের খরচ চালাতো। দুই মাস আগে তারা হাজারীবাগের ওই বাসায় একসঙ্গে থাকতে শুরু করে। আরিফের গ্রামের বাড়ি পাবনার ফরিদপুর উপজেলার দক্ষিণ থানা পাড়া এলাকায়। তার পিতার নাম শওকত আলম।

No comments

Powered by Blogger.