রয়টার্সের বিশ্লেষণ- কী করবে পশ্চিমা বিশ্ব?

ইউক্রেন ক্রিমিয়া এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার কাছে হারিয়েছে, এটা এখন পাশ্চাত্যের কাছে মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেন সংকটে ভূমিকা রাখার হাতে গোনা কয়েকটি কার্যকর পথই সামনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইউক্রেন নিয়ে গত শুক্রবার যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, তা স্পষ্টতই অবজ্ঞা করেছে রাশিয়া। ইউক্রেন সংকট নিয়ে রাশিয়ার পদক্ষেপ অন্তত বার্লিন দেয়াল পতনের পর সবচেয়ে মারাত্মক রুশ-পাশ্চাত্য সংকট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সামনের কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ হয়তো ভবিষ্যৎ ভূরাজনৈতিক মানচিত্রের আকৃতির একটা ধারণা দেবে।

পাশ্চাত্য সরাসরি সামরিক পদক্ষেপের দিকে গেলে পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে লড়াইয়ের ঝুঁকি তৈরি করবে।
ওবামা ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য বিশেষ করে নিজ দেশে বেশ কিছু দাবির মুখোমুখি হচ্ছেন। তবে ইউক্রেন সংকটে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ুক, এমনটা কেউ চাইছে না বললেই চলে। শনিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর বলেছে, তাদের সামরিক অবস্থান আগের মতোই রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
মার্কিন নেভাল ওয়্যার কলেজের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের শিক্ষক নিকোলাস জিভোসডেভ বলেন, ‘পাশ্চাত্যের জন্য এটা খুবই কঠিন একটা অবস্থান। ওবামা কার্যত একটা লাল সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। আর পুতিন তার মাঝখান দিয়ে গিয়েছেন।’
রুশ সেনারা গত তিন দিনে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেখানে ইউক্রেনের সামরিক ইউনিটগুলোও তারা ঘিরে রেখেছে। তবে তাঁরা দেশের পরিচয়সূচক চিহ্ন বহন করছে না।
সাবেক ও বর্তমান কিছু কর্মকর্তার মতে, এখন কোনো সংঘাতে না জড়ানো সবচেয়ে ভালো। কেননা, সেটা হলে মস্কো ইউক্রেনের শিল্পসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলও দখল করতে পারে। ওই এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দা রুশ ভাষাভাষী। এলাকাটি আকারে অনেক বড় এবং তা অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রুশ সেনাদল এখন ইউক্রেন সীমান্তবর্তী এলাকায় রণকৌশলগত খেলায় মাতোয়ারা। আর রুশপন্থীরা এরই মধ্যে পূর্ব এলাকার সরকারি ভবনগুলোতে রাশিয়ার পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনের নতুন সরকারের সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হচ্ছে। তবে সেখানে এখনো রুশ সামরিক পদক্ষেপের লক্ষণ দেখা যায়নি।
ওয়াশিংটন ও ন্যাটোভুক্ত প্রভাবশালী অন্য দেশগুলোকে এমন একটি উপায় বের করতে হবে, যাতে পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে সাবেক সোভিয়েত বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলো আশ্বস্ত হতে পারে, তাদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হবে।
ভুল পথে পা বাড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। গতানুগতিক সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে যাওয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করতে পারে। এ ছাড়া মস্কোর সংবেদনশীল সাইবার হামলার সক্ষমতা রয়েছে, যা তারা ইউক্রেন ও পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে।
একজন পশ্চিমা কূটনীতিক বলেন, ‘১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত আক্রমণের পর ইউরোপে এটাই সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি বলা যায়। রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক ঘাঁটিগুলোতে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা একটি শক্ত অবস্থানে রয়েছে।’
চেকোস্লোভাকিয়ায় পাশ্চাত্যের প্রতি উদারপন্থী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই অভিযান চালিয়েছিল সোভিয়েত সেনাবাহিনী। তখন দেশটি সহায়তার জন্য বারবার আহ্বান জানালেও ওয়াশিংটন ও তার মিত্ররা সোভিয়েত আক্রমণের নিন্দা জানানো ছাড়া তেমন ভূমিকা রাখেনি। চলমান ইউক্রেন সংকটেও তারা কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, সেটাই দেখার বিষয়। কেননা, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ইউক্রেনের আইনি কোনো বন্ধন নেই।

No comments

Powered by Blogger.