‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে নিবন্ধনের সুযোগ নেই: মিয়ানমার

মিয়ানমারে আজ রোববার থেকে আদমশুমারি শুরু হচ্ছে। এর আগে সরকার গতকাল শনিবার জানিয়ে দিয়েছে, সংখ্যালঘু মুসলিমদের ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। মিয়ানমারে তিন দশকের মধ্যে প্রথম এই আদমশুমারি জাতিগতভাবে বিভাজিত দেশটিতে আগ্রহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠারও জন্ম দিয়েছে। অনেকেই সরকারের এ পদক্ষেপকে সন্দেহের চোখে দেখছে। ১২ দিন আদমশুমারির কাজ চলবে। আদমশুমারি সফল করতে মিয়ানমারের উত্তরের পাহাড়ি এলাকা থেকে শুরু করে সহিংসতাপ্রবণ সীমান্তবর্তী জঙ্গল এলাকা ও দক্ষিণের ক্রান্তীয় এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হাজার হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জনসংখ্যার সঠিক হিসাব মেলানোর পাশাপাশি যেসব বিষয়ে সঠিক তথ্য না থাকার কারণে নীতিনির্ধারকেরা প্রায়ই সমস্যার সম্মুখীন হন, এই আদমশুমারির মাধ্যমে সেসব বিষয় স্পষ্ট করা হবে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) মিয়ানমারের এই আদমশুমারি বাস্তবায়ন করছে। জাতিসংঘ আশ্বস্ত করেছিল, সরকার সব জনগোষ্ঠীকে এতে অন্তর্ভুক্ত করবে। তবে আদমশুমারির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতির পথ প্রশস্ত হবে, এমন আশঙ্কা থেকে রাখাইনের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা আদমশুমারি বর্জনের ঘোষণা দেয়। এরপরই সরকার ‘রোহিঙ্গা’ নামে কাউকে নিবন্ধিত না করার ঘোষণা দিল। ইয়াঙ্গুনে সরকারের একজন মুখপাত্র ইয়ে হটুট সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো পরিবার যদি তাদের “রোহিঙ্গা” হিসেবে পরিচয় দিতে চায়, তবে আমরা তাদের নিবন্ধন করব না। তবে কেউ চাইলে নিজেদের “বাঙালি” হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে।’
মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ বেশির ভাগ রোহিঙ্গাকেই প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখে থাকে। এদিকে এই আদমশুমারি নিয়ে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে সহিংস ঘটনা ঘটছে। এর কারণ হচ্ছে, আদমশুমারির জন্য যেসব প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উদ্বেগ। অন্যান্য প্রশ্নের সঙ্গে কোনো আন্দোলন বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, সেই তথ্যও দিতে হচ্ছে তাদের। এতে করে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট হওয়া লোকজনের মধ্যে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। ঝুঁকি গবেষণাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ম্যাপলক্রফটের গবেষক ড্যানিয়েল গ্রে বলেন, ‘সংস্কার বাস্তবায়ন ও সাধারণ ক্ষমা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারী ও রাজনৈতিক কর্মীরা বিধিবহির্ভূত আটকসহ নানা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীই এগুলো করছে। নাগরিকদের ব্যাপারে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহে সরকারের এ পদক্ষেপ উদ্বেগের কারণ বটে।’ হামলার শিকার ত্রাণকর্মীদের রাখাইন ত্যাগ: রাখাইনের রাজধানী সিত্তে শহরে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ইউএনএফপি) কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার হামলা চালায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সতর্কতামূলক গুলি ছুড়লে ১১ বছর বয়সী একটি মেয়ে গুলিতে নিহত হয়। এ ঘটনার পর আরও সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কায় বিদেশি ত্রাণকর্মীরা গত শুক্রবার রাখাইন ছেড়ে চলে যান। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.