মোদি, মমতা ও তৃতীয় ফ্রন্ট

নরেন্দ্র মোদি -মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের লক্ষ্যে ভারতের অকংগ্রেসি অবিজেপি ১১টি দল যেদিন লোকসভায় তাদের জোটবদ্ধতার কথা ঘোষণা করছে, ঠিক সেই দিনই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি তৃণমূল কংগ্রেসকে কাছে টানতে এক নয়া ফর্মুলার কথা ঘোষণা করলেন৷ দিল্লি দখলের উদ্দেশে কলকাতায় তাঁর প্রথম জনসভায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রতি মোদির আহ্বান, ‘রাজ্যে পরিবর্তনের জন্য আপনারা মমতাদেবীকে পছন্দ করেছেন, কেন্দ্রে পরিবর্তনের জন্য আপনারা আমার ওপরে ভরসা রাখুন৷ রাজ্যে তৃণমূল, কেন্দ্রে বিজেপি, আপনাদের দুহাতেই লাড্ডু থাকবে৷’ ভোটের পর কেন্দ্রে সরকার গঠনে তৃণমূল কংগ্রেসের মন জয়ের চেষ্টাই শুধু নয়, সেই উদ্দেশ্যে নরেন্দ্র মোদি একেবারে খোলামেলা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির প্রতি ‘অবিচারের’ প্রসঙ্গও টেনে আনলেন৷ বললেন, কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্র দু-দুবার প্রণববাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেয়নি৷ তৃতীয় ফন্ট গঠনের উদ্দেশ্যে চার বাম দলসহ মোট ১১টি দল গতকাল বুধবার সংসদ ভবনে বৈঠক করে অধিবেশন চলাকালে তাদের কর্মসূচি ঠিক করে৷ বৈঠক শেষে জনতা (সংযুক্ত) দলের শারদ যাদব, সিপিআইএমের সীতারাম ইয়েচুরি, জনতা দল (এস)-এর সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া প্রমুখ সাংবাদিকদের বলেন, আপাতত তাঁরা সংসদীয় অধিবেশনে বিভিন্ন ইস্যুতে জোটবদ্ধ হয়ে সরকারের বিরোধিতা করবেন৷ তার পর বিভিন্ন রাজ্যে জনসভা করবেন যার মূল লক্ষ্য কেন্দ্রে তৃতীয় ফ্রন্টের সরকার গঠন৷ সে জন্য ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি হবে৷
তৃতীয় ফ্রন্টের নেতারা যে সময় দিল্লিতে তাঁদের কর্মসূচি ঘোষণা করছেন, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই কলকাতা ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজেপির বিশাল জনসভায় নরেন্দ্র মোদি ও দলের সভাপতি রাজনাথ সিং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন পাওয়ার সব রকম চেষ্টা করে গেলেন৷ রাজ্যের ঋণের বোঝা লাঘব করার যে দাবি মমতাদেবী এত দিন ধরে জানিয়ে আসছেন, তাঁকে নায্য অভিহিত করে রাজনাথ বললেন, কেন্দ্রের উচিত এই দাবি মেনে নেওয়া৷ এই মন্তব্যের রাজনৈতিক বার্তা এটাই যে, ক্ষমতায় এলে বিজেপি এই দাবি মেনে নেবে৷ রাজনাথের পরেই মমতার উদ্দেশে মোদির রাজনৈতিক বার্তা, ‘আপনি রাজ্য সামলান, আমি দেশ সামলাব৷’ জনতাকে তিনি বলেন, ‘আপনারা রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে মমতাদেবীর জবাবদিহি চাইবেন, আর দেশের উন্নতির জন্য আমার৷’ পাশাপাশি মোদি তৃতীয় ফ্রন্টের প্রধান উদ্যোক্তা বামপন্থীদের কটাক্ষ করে বলেন, ওঁরা দেশের পশ্চিমে যেতে পারেননি বলে দেশের এই অঞ্চল সমৃদ্ধ হয়েছে। পূর্বাঞ্চলে থেকে বারোটা বাজিয়েছে৷’ ভারতের এই মুূহূর্তের রাজনীতি ভোট-পরবর্তী জোটবদ্ধতাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে৷ বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নেতৃত্বের তীব্র মমতা-বিরোধিতা সত্ত্বেও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কলকাতায় প্রকাশ্যে এনডিএর সাবেক শরিক মমতাকে সেই বার্তা দিয়ে গেলেন৷ ঝুলন্ত সংসদে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভরশীল জেনেই তাঁর প্রতি গান্ধী পরিবারের অবিচারের উল্লেখ মোদি সচেতনভাবেই করেছেন৷ বাঙালির মন জিততে চেয়েছেন তিনি৷ ১৯৮৪ ও ২০০৪ সালে গান্ধী পরিবার চাইলে প্রণব মুখার্জিকে প্রধানমন্ত্রী করতে পারত, কিন্তু করেনি, মোদির এই মন্তব্য রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করে দিল৷

No comments

Powered by Blogger.