চারদিকে বিপদ, দুশ্চিন্তায় কংগ্রেস

ভারতীয় লোকসভার নির্বাচনের আগে কংগ্রেসকে বিপদ চারদিক থেকেই ঘিরে ধরছে। দলের অভ্যন্তরে আর বিরোধীদের কাছ থেকে যেমন বিপদ, তেমনই বিপদ সেই দলের কাছ থেকে—কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে যারা দিল্লি সরকারে টিকে রয়েছে। পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের প্রস্তাব নিয়ে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ এতই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, লোকসভার অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনও ভন্ডুল হলো। তেলেঙ্গানার বিরুদ্ধে এবং অখণ্ড অন্ধ্র প্রদেশের দাবিতে কংগ্রেসের সদস্যরা শুধু অধিবেশন মুলতবি রাখতেই বাধ্য করেনি, নিজের দলের সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবও পেশ করেছেন। অন্ধ্র প্রদেশের কংগ্রেস দলীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের পাশাপাশি অনাস্থা এনেছে তেলুগু দেশমও। তেলেঙ্গানা বিল চূড়ান্ত করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বিশেষ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বিলে পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনা করা হবে। তাতে রায়লসীমা ও অন্ধ্রের ক্ষোভ প্রশমিত হবে কি না, বলা কঠিন। অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যে লোকসভার আসনসংখ্যা ৪২। এর মধ্যে প্রস্তাবিত তেলেঙ্গানার ১০ জেলায় পড়ছে ১৭টি আসন। এত বছর ধরে টালবাহানার পর কংগ্রেস দলীয় সদস্যদের বাধার মুখে পৃথক তেলেঙ্গানার দাবি বাস্তবায়িত করতে না পারে, তা হলে ভোটে তার প্রতিফলন দেখা যেতে পারে। রাজ্যের কংগ্রেসদলীয় মুখ্যমন্ত্রী কিরণ কুমার রাও দিল্লিতে তাঁর দলের সরকারের বিরুদ্ধে ধরনা দিচ্ছেন, রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবি করছেন। এমনকি দাবি আদায় করতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই বিরোধিতার মুখে পৃথক তেলেঙ্গানার সমর্থকেরাও আশাহত হচ্ছেন।
ভোটের আগে সংসদের চলতি অধিবেশনে তেলেঙ্গানা বিল পাস করা না গেলে অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশে কংগ্রেসকে আম-ছালা দুই-ই হারাতে হতে পারে। বিজেপি ছোট রাজ্যের পক্ষে। তেলেঙ্গানায়ও তাদের সায় আছে। কিন্তু তারাও এখন বলছে, পৃথক রাজ্যের বিপক্ষের মানুষের দাবিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। নির্বাচনী রাজনীতিতে কংগ্রেসের যত ক্ষতি, বিজেপির ততই লাভ। তেলেঙ্গানা নিয়ে জেরবার কংগ্রেসের দুশ্চিন্তার বোঝা আরও বাড়িয়েছে তাদের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়া দিল্লির আম আদমি পার্টির (এএপি) সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার দিল্লি সরকারের দুটি সিদ্ধান্তের ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে। প্রথম সিদ্ধান্ত হলো, ১৯৮৪ সালের দিল্লি দাঙ্গার তদন্তের ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ বা বিচার্য বিষয় ঠিক করা। দিল্লি পুলিশের দায় কতটা ছিল, তাও খতিয়ে দেখা হবে। এক বছরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করতে হবে। গতকাল অকালি দল দিল্লিতে বিক্ষোভ করে। ১৯৮৪ সালে পাঞ্জাবের অমৃতসরে শিখ সম্প্রদায়ের পবিত্রতম তীর্থস্থান স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযানে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের সহায়তা চাওয়া নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। এএপি সরকারের দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত ২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমসের সময়কার দুর্নীতির তদন্তসংক্রান্ত। সব মিলিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় কংগ্রেস।

No comments

Powered by Blogger.