ফ্রাঙ্কফুট বইমেলার সুযোগ কাজে লাগাতে চায় ইন্দোনেশিয়া

জনসংখ্যার দিক থেকে ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। তবে সে তুলনায় বিশ্ব সাহিত্যের পরিসরে এ দেশটির তেমন কোনো অংশ নেই। খুব বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এমন ইন্দোনেশীয় সাহিত্যের পরিমাণ খুবই অনুল্লেখ্য। দেশের ভেতরেও সাংস্কৃতিক পরিসরে সাহিত্যের প্রতিপত্তি তেমন কিছু জোরালো নয়। এই যখন অবস্থা, তখন আগামী ২০১৫ সালের মেলায় গেস্ট অব অনর হিসেবে বাছাই করেছে ফ্রাঙ্কফুট বইমেলা কর্তৃপক্ষ। জার্মানিতে বিশ্বের এ অন্যতম প্রধান বইমেলায় এমন সম্মানীয় অতিথি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছে ইন্দোনেশীয় সাহিত্য জগৎ।
দেশটির বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত নিবন্ধের থেকে এটা তের করা যাচ্ছে যে, ফ্রাঙ্কফুট বইমেলায় পাওয়া এ সম্মানকে কাজে লাগানোর ওপর জোর দিচ্ছে সবাই। একটি কাজেই সবার আগ্রহ বেশি। তা হচ্ছে, এ সুযোগে বিশ্ব সাহিত্যের পরিসরে যথাসম্ভব জায়গা করে নেয়া। এ লক্ষ্যে ইন্দোনেশীয় সাহিত্যের অনুবাদের ওপর জোর দিচ্ছেন রচয়িতারা। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় দেশীয় সাহিত্য অনুবাদের লক্ষ্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে পত্রিকাগুলো।
যেমন গত বুধবার জাকার্তা গ্লোবে এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, দেশীয় সাহিত্যকে সরকার দীর্ঘকাল ধরেই অবহেলা করে আসছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠ্যক্রমে সাহিত্যের প্রায় না থাকা অবস্থা এর প্রমাণ। রচয়িতা বা তাদের কাজের প্রতি সমঝদারির মনোভাবও কখনও দেখায়নি সরকারগুলো। এ ব্যাপারে কোনো সরকারি কর্মদ্যোগ না থাকায় বিশ্বের অন্যান্য ভাষায় দূরে থাকা, নিজেদের চমৎকার কাজগুলো ইংরেজি ভাষায়ও অনুবাদের সুযোগ পাননি ইন্দোনেশিয় সাহিত্যিকরা।
আ নিউ চ্যাপ্টার ফর ইন্দোনেশীয় লিটারেচার শীর্ষক নিবন্ধে আরও বলা হয়, লেখক ও প্রকাশকরাই বরং ইন্দোনেশিয়ার সাহিত্যের ঐতিহ্যকে লালন করে আসছেন। তবে বিশ্ব সাহিত্যে পরিচিত হতে হলে সেটুকু যথেষ্ট নয় বলেই মনে করে সংশ্লিষ্টরা। ফলে তাদের আশা, বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এ বইমেলায় পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাবে সরকার। অন্তত জার্মান ও ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা হবে ইন্দোনেশীয় সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কাজগুলো। তাদের বক্তব্য এতে করে দ্বিতীয় যে উপকারটি হবে তা হবে নিজেদের ঘরে। দেশের ভেতরে লেখকদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা বাড়বে।
খুন করলেন রুশ কাব্যপ্রেমী
সাহিত্যের ভাষা হিসেবে গদ্য না কাব্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ? এ নিয়ে শুরু হওয়া তর্ক শেষতক শেষ হল বন্ধুর হাতে বন্ধুর খুন হওয়ার মধ্য দিয়ে। ঘটনাটি ঘটেছে ২০ জানুয়ারি রাশিয়ায়। গত বুধবার এ খবর দিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম আরটি। খবরে বলা হয়, উরাল অঞ্চলে ভার্দলভস্ক অঞ্চলে এ ঘটনা ঘটে। সেদিন রাতে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে বন্ধুকে ছুরিকাঘাত করেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক, যিনি সাহিত্যের ভাষা হিসেবে কাব্যকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার পক্ষে।
এই সাহিত্যিক খুনটি ঘটার রাতে ইরবিট শহরে বন্ধুগৃহে অতিথি হয়েছিলেন ৫২ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষক। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব, অপর বন্ধুটির বয়স ৬৭, যিনি সাহিত্য-ভাষা হিসেবে গদ্যকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার পক্ষে ছিলেন। রাতে কিছুটা পানাভ্যাস করেন দুই বন্ধু। এরই মধ্যে জনসংস্কৃতিতে কাব্য বনাম গদ্যের জায়গা নিয়ে তর্ক গড়ায় বহুদূর। শহরটির এক প্রসিকিউটর বিবৃতিতে জানান, কিছু সময়ের মধ্যেই সাহিত্যিক তর্কটি আর সাধারণ ১০টা ঝগড়ার পথেই এগোয়। একপর্যায়ে কাব্যপ্রেমী খুন করে গদ্যপ্রেমীকে। এরপরই পালিয়ে যান তিনি। পরে অপর এক বন্ধুর গ্রামস্থ গৃহ থেকেই আটক করা হয় অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষককে। প্রসিকিউটররা বলছেন, অপরাধ প্রমাণ হলে ১৫ বছর মেয়াদে কারাবাসের সাজা হতে পারে তার। সাহিত্য রুচিকে কেন্দ্র করে এমন নিষ্ঠুর খুনাখুনি রাশিয়ায় মোটামুটি পরিচিত। গত বছরের সেপ্টেম্বরেও এমন এক ঘটনা ঘটে দেশটিতে। দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের চিন্তা ও দর্শন নিয়ে তর্কের একপর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়ায় দুই পক্ষ। এরপর চলে দেশীয় বন্দুকের গোলাগুলি। অবশ্য ওই ঘটনায় কেউ মারা যাননি।
হ মোহাম্মদ আরজু

No comments

Powered by Blogger.