বিপদ কংগ্রেসের পিছু ছাড়ছে না

ভারতের লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই কংগ্রেসের সমস্যা ও সংকট বেড়ে চলেছে। নতুন করে যেসব সমস্যা কংগ্রেসের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে, তার একটি তৈরি করেছেন সহসভাপতি রাহুল গান্ধী। ১৯৮৪ সালের দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে তাঁর মন্তব্যের জেরে গতকাল বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের সদর দপ্তরের সামনে বহু বছর পর শিখদের বিরাট বিক্ষোভ দেখা গেল। ১০ বছরের সাংসদ জীবনে প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে রাহুল গান্ধী দিল্লি ও গুজরাট দাঙ্গার তুলনা টেনে বলেছিলেন, দিল্লির দাঙ্গা বন্ধে সরকার সচেষ্ট ছিল। কিন্তু গুজরাটে দাঙ্গায় রাজ্য সরকারের হাত ছিল। তিনি এও স্বীকার করেন, ১৯৮৪ সালের দিল্লির দাঙ্গায় সম্ভবত কয়েকজন কংগ্রেস নেতা জড়িত ছিলেন। তাঁদের আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে। রাহুলের এই বক্তব্য ও স্বীকারোক্তি রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, তেমনই শিখদের ক্ষুব্ধ করেছে। দিল্লির আম আদমি পার্টি (এএপি) সরকারের পক্ষ থেকে গত বুধবার উপরাজ্যপালের কাছে নতুন করে তদন্তের দাবি জানানো হয়। গতকাল কংগ্রেসের সদর দপ্তরের সামনে শত শত শিখ বিক্ষোভ করে। তারা দাঙ্গায় জড়িত কংগ্রেস নেতাদের নাম প্রকাশের দাবির পাশাপাশি বলে, তাদের বিরুদ্ধে কেন দল কোনো ব্যবস্থা নেয়নি,
তা জানাতে হবে। সাক্ষাৎকারে রাহুল কারও নাম উল্লেখ না করলেও অন্তত চারজনের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই নির্দিষ্ট অভিযোগ শোনা গেছে। এদের মধ্যে হরিকিষেণলাল ভগত মারা গেছেন, ধর্মদাস শাস্ত্রী আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। সজ্জন কুমার ও জগদীশ টাইটলার বেঁচে থাকলেও তাঁদের সাজা হয়নি। দলের পক্ষ থেকেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে শিখদের এই বিক্ষোভ কংগ্রেসের পক্ষে যতটা বিড়ম্বনার, ততটাই দুশ্চিন্তার। গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির হাত থাকতে পারে বলে রাহুল যে ইঙ্গিত করেছেন, কংগ্রেসের জোটসঙ্গী এনসিপি তাতে সায় দেয়নি। এনসিপি নেতা প্রফুল্ল প্যাটেল সরাসরি বুঝিয়ে দিয়েছেন, আদালত যখন মোদিকে দোষী সাব্যস্ত করেনি, তখন ওই বিষয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। এনসিপির এই বক্তব্য কংগ্রেসের পছন্দ না হওয়ারই কথা। তবে কংগ্রেসের দুশ্চিন্তার আরও কারণ আছে। অন্ধ্র ভেঙে তেলেঙ্গানা রাজ্য করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ওই রাজ্যের বিধানসভা গতকাল খারিজ করা কংগ্রেসশাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়ে দিল। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী কিরণ রাও খোলামেলা বিক্ষোভ দেখালেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, রাজ্যভাগের বিল পাস হলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।
লোকসভার বাজেট অধিবেশনে যাতে সংসদের অনুমোদন নেওয়া যায়, সে লক্ষ্যে গতকালই এই বিল নিয়ে বিধানসভার মত কেন্দ্রে পাঠানোর কথা। বিধানসভা বিল খারিজ করায় কংগ্রেস তো বটেই, রাষ্ট্রপতির ওপরও চাপ বাড়ল। রাজ্য ভাগ হোক বা না হোক, উভয় ক্ষেত্রেই কংগ্রেসের বিপদ। তবে তেলেঙ্গানা রাজ্য বাস্তবায়িত হলে অন্তত নতুন রাজ্যের ১৭টি লোকসভা আসনে কংগ্রেস জয় নিশ্চিত করতে পারবে। তবে নির্বাচনের আগে রাজ্য করতে না পারলে তেলেঙ্গানাতেও কংগ্রেসের বিপর্যয়ের সম্ভাবনা প্রবল। রাজ্যসভার মনোনয়ন নিয়েও কংগ্রেস বেশ দুশ্চিন্তায়। পশ্চিমবঙ্গে দলীয় প্রার্থী দিয়ে লড়াইয়ের ঝুঁকি না নেওয়ায় দলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আপস নিয়ে রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা আশঙ্কায় আছেন। আমেথির কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় সিংকে আসাম থেকে রাজ্যসভায় আনতে চায় কংগ্রেস। তাঁকে টিকিট না দিলে বিজেপি ও আম আদমি পার্টির জোড়া চ্যালেঞ্জের মুখে আমেথিতে রাহুলের জেতা কঠিন হতে পারে। এদিকে সঞ্জয়ের বিরোধিতায় আসামে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ফলে তাঁর নাম বুধবার ঘোষণা করা যায়নি। এ পর্যন্ত কোনো জরিপই কংগ্রেসের ভালো ফলের সম্ভাবনা দেখছে না। তার ওপর একের পর এক বিক্ষোভ দলটিকে জেরবার করে তুলেছে।

No comments

Powered by Blogger.