জেনেভায় জাতিসংঘ ব্যর্থ

জেনেভায় সিরীয় শান্তি আলোচনায় অচলাবস্থা নিরসনে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ। দেশটিতে ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে সরকার পক্ষ ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার পর মূলত মঙ্গলবার সম্মেলন ব্যাহত হয়। সিরিয়ার অবরুদ্ধ হোমস নগরীতে ত্রাণ সরবরাহ করা নিয়েও আলোচনা এগোয়নি। মঙ্গলবার সকালে টতুর্থ দিনের মত শান্তি সম্মেলন শুরু হয়। বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক হট্টগোল হয়। এরপর জাতিসংঘের মধ্যস্থতাকারী লাখদার ব্রাহিমি এদিন বিকেলের নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করে তা বুধবার সকালে আহবান করেন। তিনি বুধবারের সকালের বৈঠক সন্তোষজনক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ব্রাহিমি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেউ চলে যাচ্ছে না। আমরা এখনও গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্জন করতে পারিনি। তবে এখনও আলোচনা চলছে এবং ভাল কিছু হবে আশা করছি।’ সিরিয়ার সরকার বিরোধী আলোচকদের সদস্য রিমা ফ্লেইহান বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেন, সরকার পক্ষ মানবিক সহায়তা ও অন্তর্র্বতী সরকার কোন বিষয়েই আলোচনায় সহায়তা করছে না বিধায় ব্রাহিমি সম্মেলন মুলতবি করেছেন।
তিনি বলেন, বিরোধীরা সিরিয়ার রূপকল্পসহ একটি অন্তর্র্বতীকালীন পরিকল্পনা প্রাথমিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে সরকার কোন আলোচনায় করতে রাজী না। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একটি পরিকল্পনা দিয়েছি। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার কিছুই বলেনি এবং সব ধরণের আলোচনা প্রত্যাখান করেছে।’ মঙ্গলবার সকালের অধিবেশনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রতিনিধিরা ওয়াশিংটনকে নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাশের জন্য বিবৃতি উপস্থাপন করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, সিরিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছে পুনরায় অস্ত্র সরবরাহ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সিদ্ধান্ত সংলাপের মাধ্যমে সিরিয়ায় যেকোন রাজনৈতিক সমাধান ব্যাহত করার সরাসরি প্রচেষ্টা হিসেবে আমরা মনে করি। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি খবরের উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস গোপনে সিরিয়ার মধ্যপন্থী বিদ্রোহীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহের জন্য অর্থ অনুমোদন দিয়েছে। সিরিয়ার উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফয়সাল মাকদাদ বলেন, শান্তি প্রক্রিয়ার সফলতায় ওয়াশিংটনের আগ্রহ নেই। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র এডগার ভাসকুয়েজ ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের সহায়তার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আসাদ সরকারের বর্বরতা আজ সিরিয়ায় সহিংস চরমপন্থার প্রধান উৎস।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য লড়াইরত রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের সহায়তা করছে।
সিরিয়া বিষয়ক আলোচনায় ইরানের উপস্থিতি জরুরি : ব্রাহিমি
জাতিসংঘ ও আরব লীগের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি লাখদার ব্রাহিমি বলেছেন, জেনেভা শান্তি সম্মেলনে ইরানের উপস্থিতি একটি ফল বের করে আনতে সহায়ক হত। সিরিয়ার মধ্যস্থতাকারীরা ভবিষ্যতে এ সংক্রান্ত যে কোনো আলোচনায় ইরানকে আমন্ত্রণ জানাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ইরানের উপস্থিতি ছাড়াই জেনেভা-২ সম্মেলন শুরু হওয়ার ছয় দিনের মাথায় মঙ্গলবার রাতে নিজের এ উপলব্ধির কথা জানান। গত ছয় দিনের জেনেভা বৈঠকে কোনো ধরনের অগ্রগতি হয়নি বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মহাসচিব জেনেভা-২ সম্মেলনে ইরানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত ফলাফলবিহীন জেনেভা-২ আলোচনায় মঙ্গলবার সিরিয়ার তথ্যমন্ত্রী ওমরান আল-যোবি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো সমস্যা সমাধানে বিশেষ করে সিরিয়া সংকট সমাধানে ইরানের অংশগ্রহণ জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.