অনেক হয়েছে, এবার বন্ধ করতে আইন চাই- রাজনৈতিক কাজে শিশুদের ব্যবহার

একজনের নির্বাচন বিজয়, তা-ও আবার প্রতিদ্বন্দ্বীহীন; কেবল আনুগত্যের যোগ্যতায়। দলের কাছে, জয়ী ব্যক্তিদের কাছে এসব অবশ্যই উদ্যাপনের মতো বিষয়। কিন্তু তাতে স্কুলের শিশুদের ব্যবহার করা কেন?
বহু বছর ধরে এ রকম উৎকট দেখানোপনা চলছে, যা কেবল অনৈতিক নয়, বেআইনিও।
সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে সাংসদ হয়েছেন আওয়ামী লীগের হাসিবুর রহমান। এদিকে ধর্মমন্ত্রীকে সরকারি দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা যে সংবর্ধনা দিয়েছেন, তা দিগ্বিজয়ী আকবর বা আলেকজান্ডারদেরই মানায়। তাঁরা এলাকায় আসবেন বলে দলের পক্ষ থেকে উচ্ছ্বসিত সংবর্ধনা হতেই পারে। কিন্তু যে শিশুরা রাজনীতি বোঝে না, কারও বিজয়ের শোভাবর্ধনের চাকরি করে না; তাদের কেন রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা? একদলের ককটেলে শিশুরা আহত হবে, অন্য দল রাজনৈতিক আয়োজনে শিশুদের ব্যবহার করবে, এটা কেমন ধরনের রাজনীতি?
উন্নত সংস্কৃতিতে শিশুদের পূর্ণ ব্যক্তিমানুষের মর্যাদা দেওয়া হয়। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে সম্মান দেখানো হয়। তাদের প্রহার বা ব্যবহার দুটোই সেসব দেশে নিষিদ্ধ। এবং এর জন্য সব ক্ষেত্রে আইনও করা লাগে না, সংস্কৃতির ভেতর থেকেই মানুষ এটা শেখে এবং পালন করে। অথচ আমাদের দেশে যাঁরা নাকি হবেন পথপ্রদর্শক, তাঁরাই শিশুদের জয়-পরাজয়ের লড়াইয়ে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেন। কখনো তাদের বাসভর্তি করে জনসভায় নেওয়া হয়, কখনো তাদের রাস্তার দুই পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বিশেষ কাউকে হাত নাড়িয়ে সংবর্ধনা দিতে হবে বলে। যারা রাজনীতির কিছুই বোঝে না, তাদের এমন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনের নির্দেশনা থাকা উচিত।
বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের ‘রাজকীয়’ তথা জমিদারসুলভ চর্চা চলছে। অনেক নেতা ও সাংসদ আছেন যাঁরা নিজেদের নির্বাচনী এলাকার জনপ্রতিনিধি ভাবেন না, জনগণের সেবক মনে করেন না, মনে করেন ‘রাজা’। বাকিরা কি তাহলে তাঁদের প্রজা? এই মানসিকতা কেবল অগণতান্ত্রিকই নয়, স্বেচ্ছাচারীও। আর কোনো সংবর্ধনায় যেন শিশুদের ব্যবহার করা না হয়। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ চাই।

No comments

Powered by Blogger.