উপজেলা নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী বাছাইয়ের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার জন্য মন্ত্রী ও এমপিদের তাগিদ দিয়েছেন। তার ভাষায়, মন্ত্রী ও এমপিদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব মেনে নেওয়া হবে না। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলা পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি আরও মজবুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'খুব দ্রুত উপজেলা নির্বাচন হবে। দেরি করা যাবে না।' বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তারা বলেছেন, কিছুদিন আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। বিরোধী দলের সহিংস নৈরাজ্যজনক রাজনীতির ক্ষত এখনও শুকায়নি। তাই কিছুটা সময় নিয়ে দল গুছিয়ে উপজেলা নির্বাচনে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেছেন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করলে ঢাকাসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতো। সেটা না করায় বিপাকে পড়তে হয়েছে। তাই দ্রুত উপজেলা নির্বাচন করতে হবে। তিনি এ ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক সফর করে একক প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য দলের সাত সাংগঠনিক সম্পাদককে নির্দেশ দেন।
দলীয় প্রধানের এ নির্দেশ কার্যকর করতে সাংগঠনিক সম্পাদকরা দ্রুত দল গুছিয়ে নিতে তৃণমূল পর্যায়ে বর্ধিত সভা-সম্মেলন, সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়নের কর্মসূচি শুরু করবেন। দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর আগেই এসব কর্মসূচি শুরু হবে। এ ব্যাপারে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংলাপ নিয়ে মন্তব্য করায় দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ কয়েকজন নেতার সমালোচনা করেন। সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, কথা কম বলা ভালো। বেশি কথা বললে বিরোধী দলসহ বিদেশিরা সুযোগ পায়।
বৈঠকে তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন এবং নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করায় স্বাগত জানানো হয়েছে। কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুর রহমান সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনকারীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের পাশাপাশি নতুন মন্ত্রিসভাকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে সতর্ক থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একজন নেতা একই সঙ্গে মন্ত্রী হলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি আসে না। এবারকার মন্ত্রিসভা গঠনের সময় এ দিকটি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, অস্বাভাবিক পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। সভায় শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন দলের দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। সদ্যপ্রয়াত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঠাঁই নেই :দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগে যোগদানের জন্য দেনদরবার করছেন। তাদের জন্য দুঃসংবাদ, আওয়ামী লীগে তাদের যোগ দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্বতন্ত্র এমপিরা স্বতন্ত্র হিসেবেই থাকবেন। তাদের আওয়ামী লীগে ঠাঁই হবে না। অব্যাহতি :গতকালের বৈঠকে কার্যনির্বাহী সদস্য ড. আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ পদে আসার পর তিনি কখনোই কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হননি। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ড. হাছান মাহমুদ, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র বোস প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.