কাজের জবাবদিহি কোথায়?

'রাজধানীর অনেক সড়ক এক বছরও টিকল না' শিরোনামে শনিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি উদ্বেগজনক। ঢাকা শহরে গত বছর যেসব রাস্তার কাজ হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগের অবস্থা বেহাল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যে কোনো সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির শর্ত থাকে। রাজধানীর সড়ক সংস্কার প্রধানত বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নেই হচ্ছে। অথচ দেখা যাচ্ছে, এক বছর না পেরোতেই সংস্কারকৃত অনেক সড়কের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। তাই এগুলো পুনরায় সংস্কারের জন্য তালিকাভুক্ত করতে হয়েছে। কিন্তু যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছিল তাদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি। এতে সড়ক বা গণপূর্ত কাজে নয়ছয় করার অসাধু প্রবণতা ভালোভাবেই টিকে থাকছে। টেন্ডারে বর্ণিত শর্ত অনুযায়ী কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে কি-না, সেটা নিশ্চিত করার আধুনিক পদ্ধতি এখনও অনুসরণ করার ব্যবস্থা হয়নি। সেই পুরনো পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতেই কাজের মান পরখ করা হচ্ছে। যেহেতু এসব কাজের অধিকাংশের সঙ্গেই রাজনৈতিক ক্ষমতাশ্রয়ীরা যুক্ত থাকেন, তাই তারা শর্ত ভঙ্গ করেও পার পেয়ে যাওয়ার আশা করতে পারেন। কিন্তু যদি নিম্নমানের কাজের জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা কার্যকর করা হতো এবং কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নামে-বেনামে একই ধরনের ও একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হতো, তাহলে কেউ শর্ত ভাঙার চিন্তা সহজে করতে পারত না। রাজধানীর সড়ক সংস্কারের তহবিল জোগানদার যেহেতু প্রধানত বিশ্বব্যাংক, তাই কর্তৃপক্ষের কাজের মান নিশ্চিত করা উচিত ছিল। এ ব্যাপারে এখনও সতর্ক না হলে এ ক্ষেত্রে বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ বা হ্রাস পাওয়া অসম্ভব নয়। কর্তৃপক্ষের উচিত এসব কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় প্রায় সাড়ে পাঁচশ' সড়ক মেরামতের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭২টি সড়ক গত বছর মেরামত করা হয়। মেরামতকৃত সড়কগুলো কেন পুনরায় মেরামতের তালিকায় সে ব্যাপারে সদুত্তর হয়তো কর্তৃপক্ষ দিতে পারবে না। এসব সড়কের কাজ যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পেয়েছিল এবং নগর কর্তৃপক্ষের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এগুলো তদারকির দায়িত্বে ছিলেন তাদের কারও কারও সঙ্গে অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক থাকা অস্বাভাবিক নয়। বছর না ঘুরতেই যেসব সড়কের পুনরায় সংস্কারের প্রয়োজন পড়ল সেগুলোর কাজের মান পরীক্ষা করে দেখা উচিত। দায়ী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে নিম্নমানের কাজ করে চিরাচরিত অর্থ নয়ছয় করার অপসংস্কৃতি বদলে দেওয়া যায়।

No comments

Powered by Blogger.