অর্থনীতির গতি ফেরানো

অর্থনীতির গতিময়তা যে শ্লথ হয়ে পড়েছে, তা বেশ অনেক দিন ধরেই বোঝা যাচ্ছিল। বিশেষ করে গত কয়েক মাসে হরতাল-অবরোধের নামে সহিংসতা যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, তাতে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসে। ফলে অর্থনীতি গতিময়তা হারিয়ে ফেলে। এসব বিবেচনা থেকেই একাধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে যাবে বলে পূর্বাভাস দেয়। সর্বশেষ পূর্বাভাসটি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, যেখানে বলা হয়েছে প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। মোট কথা, প্রবৃদ্ধির হার যে ৬ শতাংশের নিচে নেমে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট। তার মানে দেশ আবার নিম্ন প্রবৃদ্ধির বলয়ে প্রবেশ করেছে। সরকারের নীতি ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতায় বিগত দুই বছরে প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগত নিম্নগামী হয়েছে। আর সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক সহিংসতায় পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। এভাবে গত এক দশকে গড় প্রবৃদ্ধির হার যেখানে প্রায় সোয়া ৬ শতাংশ ছিল, সেই ধারা থেকেও পতন ঘটছে। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রশ্নবিদ্ধ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর নতুন সরকার ইতিমধ্যে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। আবার নির্বাচন বর্জনকারী বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিও আপাতত কোনো হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দেয়নি। ফলে সাময়িকভাবে হলেও জনজীবনে স্বস্তি ভাব ফিরে এসেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবার স্বাভাবিক সময়ের মতো সচল হয়ে উঠছে। যৌক্তিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে যে এই সচল হয়ে ওঠা কত দিন বজায় থাকবে। অন্যভাবে বললে, অর্থনীতিতে গতিময়তা কত দ্রুত ফিরে আসবে?
উত্তর খুব সহজ নয়। কেননা, এর সঙ্গে কয়েকটি বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যা আগে বোঝা দরকার। তবে সর্বাগ্রে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, যা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রথমত সরকারের, দ্বিতীয়ত বিরোধী দলের, বিশেষ করে বিএনপির। রাজনৈতিক সহিংসতায় ব্যবসা-বাণিজ্যের যে ক্ষতি, তার সবচেয়ে বড় প্রভাবটা পড়েছে কর্মসংস্থানের ওপর। ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বিগত তিন মাসে নতুন করে কর্মসংস্থান তো হয়ইনি, বরং ছোট-বড় বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান লোক ছাঁটাই করেছে। অর্থাৎ দেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন খুব ধীর থাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে যে কাজের সুযোগ তৈরি হয়, তা-ও হয়নি। পাশাপাশি সরকারের কূটনৈতিক অদক্ষতায় মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমের বাজারও সংকুচিত হচ্ছে। ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে জনশক্তি রপ্তানি তিন লাখের মতো কমেছে। সুতরাং, কর্মসংস্থানই এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা ইতিমধ্যেই ব্যবসার ক্ষতি পূরণের জন্য সরকারের কাছে কিছু প্রণোদনা-সুবিধা চেয়েছেন, যার মধ্যে আছে করের ছাড় এবং ঋণ পরিশোধের ছাড়। সাময়িকভাবে কিছু ছাড় দেওয়া প্রয়োজন হলেও এই ছাড় বা প্রণোদনা এমনভাবে প্রদান করতে হবে যেন তা অর্থবহ হয়, যারা প্রকৃতই ক্ষতিগ্রস্ত, শুধু তারাই যেন পায়।

No comments

Powered by Blogger.