দুই নেত্রীর নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা by মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার

স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য এবং সব দলের অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুধীমহল ও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান আলোচনা সরকারের মেয়াদান্তে এসে জটিল আকার ধারণ করেছে। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের সাংবিধানিক ব্যবস্থা ১৯৯৬ সাল থেকে কাজ করে আসছিল এবং ওই ব্যবস্থাধীনে অনুষ্ঠিত সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে অবহেলাযোগ্য ত্র“টি-বিচ্যুতি থাকলেও তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। কিন্তু ২০০৭ সালে এক-এগারোর রাজনৈতিক সুনামির পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছদ্মাবরণে একটি সেনা সমর্থিত অসাংবিধানিক সরকার কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে দুই বছর ক্ষমতায় থেকে নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করলে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং মহাজোট সরকার গঠন করে। এ সরকার প্রথম থেকেই ভিশন টুয়েন্টি টুয়েন্টি-ওয়ান পলিসি নিয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে এ সরকার বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা না করে এবং নাগরিক সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ এবং এমিকাস কিউরিদের পরামর্শ উপেক্ষা করে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার দোহাই দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।
সংশোধিত নতুন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে গেলে ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে হয় না এবং নির্বাচনটিও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য হারাবে বলে প্রতীয়মান হয়। কারণ নতুন সংবিধান অনুযায়ী সংসদ বহাল রেখে, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা বহাল রেখে, সংসদ সদস্যরা স্বীয়পদে বহাল থেকে নির্বাচন করলে যে সে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয় না, সে বিষয়টি ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। এসব প্রসঙ্গ বিবেচনায় নিয়ে প্রধান বিরোধী দল নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন করে আসছে। এ লক্ষ্যে প্রথম দিকে হরতালের মতো কর্মসূচি ব্যবহৃত হলেও পরে বিরোধী দল জনসমর্থন পক্ষে রাখতে হরতাল বা সহিংস কর্মসূচি পরিহার করে অহিংস মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ প্রভৃতির মধ্য দিয়ে তাদের দাবির পক্ষে সফলভাবে জনমত তৈরি করে। নির্বাচন আসন্ন হওয়ার পর দৈনিক পত্রিকা থেকে শুরু করে অন্যান্য সংস্থা পরিচালিত বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, দেশের প্রায় শতকরা ৮০-৯০ ভাগ নাগরিক মনে করেন, দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন করলে সে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। তারা এও মনে করেন, সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির দেশে এখনও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। এ জন্য বেশিরভাগ নাগরিক নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। উল্লেখ্য, তাদের অনেকেই বিএনপিকে ভালোবেসে এ সমর্থন দেননি। বরং তারা সরকারি দলের প্রতি অবিশ্বাস এবং স্বচ্ছ ও অবাধ সংসদ নির্বাচনের স্বার্থেই এ সমর্থন প্রদান করেন।
এ রকম অবস্থায় নির্বাচন আসন্ন হওয়ায় সরকারদলীয় ব্যবস্থাধীনে স্বনিয়োজিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে সংসদ নির্বাচনের আয়োজনে কাজ শুরু করলে বিরোধী দল ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণে অসম্মতি জানিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক হয় ওঠে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখে। চীনের মতো দেশ, যে কখনও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতো না, সেই চীনও এবার বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সংকটে নিজেকে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করে। ফলে সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের নেতা ও সুশীল সমাজের সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন ফর্মুলা উপস্থাপিত হতে থাকে। তবে এসব ফর্মুলা সরকারি ও বিরোধী দলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি। এমতাবস্থায় নির্বাচন আরও সন্নিকটে এলে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা এ ব্যাপারে রূপরেখা প্রদান করলে তাদের প্রদত্ত রূপরেখা নিয়ে নাগরিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা হয়। সবচেয়ে ভালো হতো যদি সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস আগেই নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা প্রদান করে এ সম্পর্কে আলোচনার সূত্রপাত করা হতো। কিন্তু তা না করে ওই সময় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে’, ‘সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না’ প্রভৃতি রকমের বক্তব্য প্রদান অব্যাহত রেখে সময়ক্ষেপণ করেন।
নির্বাচনকালীন রূপরেখা প্রদানের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী গতানুগতিক ভঙ্গিমায় তার সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি প্রদান করে, বিরোধীদলীয় শাসনকালের দুর্নীতি-দুঃশাসনের বর্ণনা দিয়ে নিজ পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনকালীন সরকারের যে রূপরেখা উপস্থাপন করেন, সেখানে তিনি একটি সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব করে ওই সরকারের সদস্য হিসেবে বিরোধী দলের কাছে নাম আহ্বান করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী তার রূপরেখায় নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কে হবেন সে সম্পর্কে কোনো আলোকপাত না করায় প্রতীয়মান হয়, প্রধানমন্ত্রীই হবেন ওই অন্তর্বর্তীকালীন সর্বদলীয় সরকারের প্রধান। এ রকম একটি প্রস্তাব যে বিরোধী দল মেনে নেবে না, তা শুনেই বলে দেয়া যায়। কারণ বিরোধী দল এতদিন ধরে যে আন্দোলন করে আসছে তার মূল দাবিই হল নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। তাছাড়া বিরোধী দল প্রস্তাবিত সরকারে কতজন সদস্য দিতে পারবে, সে সম্পর্কেও আলোচ্য রূপরেখায় কোনো আলোকপাত করা হয়নি। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগও জামায়াত-জাপাকে পাশে নিয়ে একই প্রকৃতির আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বিচারপতি কেএম হাসান অনেক আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে আওয়ামী লীগ তাকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের প্রধান হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আর এখন যদি সরকারি দলের প্রধানকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে রাখা হয়, তাহলে বিএনপির পক্ষে সে প্রস্তাব কীভাবে মানা সম্ভব? তবে প্রধানমন্ত্রী উপস্থাপিত রূপরেখা গ্রহণ করা হোক বা না হোক, এ রূপরেখা সরকারি দলের কঠোর অবস্থানকে অনেকটাই নমনীয় পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে সরকারের ‘সংবিধানের বাইরে যাব না’, ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে’, ‘একচুলও নড়ব না’ প্রভৃতি বক্তব্য এ রূপরেখা প্রদানের মধ্য দিয়ে অসার প্রমাণিত হয়। কারণ এ রূপরেখাটি সংবিধানসম্মত নয়। নতুন সংবিধানে সর্বদলীয় সরকার বলে কিছু নেই। এখন প্রধানমন্ত্রীর রূপরেখা শুনে অনুধাবন করা যায় যে, সরকার সংবিধানের বাইরে আসতে সম্মত আছে। এদিক থেকে বিচার করে প্রস্তাবিত রূপরেখা বিরোধী দল কর্তৃক অগ্রাহ্য করা হলেও সরকারের কিছুটা নমনীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করে আলোচ্য রূপরেখার ইতিবাচকতা তুলে ধরা যায়।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর রূপরেখা প্রদানের মাত্র দু’দিন পরই বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনালীন সরকারের একটি ভিন্ন রূপরেখা প্রদান করেন। বিরোধীদলীয় নেতা রূপরেখা প্রদানের বক্তব্যে সরকারের দেশ পরিচালনার ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের চিত্র উপস্থাপন করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি শেয়ারবাজারের লুটপাট, হলমার্ক, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ড, বিচার ব্যবস্থার দুরবস্থা, আইন-শৃংখলার অবনতি এবং খুন-গুম বৃদ্ধির চিত্র উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া তিনি দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সহিংস আন্দোলন-কর্মসূচি না দেয়ার কথা বলেন। তিনি এ সরকারের আমলে হিন্দু-বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হলেও তার বিচার না হওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি ব্যক্তিগত আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণ না করার নীতি গ্রহণ করে প্রতিহিংসার রাজনীতিতে পরিবর্তন আনার সূচনা করার প্রতিশ্র“তি প্রদান করেন। বিএনপির আমলে সন্ত্রাস হলেও ওই সব সন্ত্রাস আওয়ামী আমলে সৃষ্ট সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। বিএনপি নেত্রী নিজেদের অতীত ভুলত্র“টি স্বীকার করে ভবিষ্যতে প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে যোগ্য ও দক্ষ লোকদের সমাবেশ ঘটিয়ে ঐকমত্যের সরকার গঠনের প্রতিশ্র“তি দেন। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা প্রদান করে বিরোধীদলীয় নেতা ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যথাক্রমে দশজন করে যে ২০ জন নিরপেক্ষ ব্যক্তি কাজ করেছিলেন, তাদের মধ্য থেকে সরকারি ও বিরোধী দলকে যথাক্রমে ৫ জন করে সদস্যের নাম প্রস্তাব করার প্রস্তাব দেন। এই ১০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার এবং সবাই মিলে আলোচনা করে একজন নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, সম্মানিত নাগরিককে এ সরকারের প্রধান করার প্রস্তাব বিরোধীদলীয় নেতার রূপরেখায় দেয়া হয়। এ ১১ জনের সরকারকে সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারে রূপান্তরিত করার সুযোগ রয়েছে বলে বিরোধীদলীয় নেতা উল্লেখ করেন। কাজেই তুলনামূলক বিচারে দুই নেত্রী প্রদত্ত রূপরেখার মধ্যে বিরোধীদলীয় নেতার রূপরেখাটি প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত রূপরেখার চেয়ে অধিকতর স্পষ্ট ও সুসংহত। কে প্রধান হবেন, কারা, কীভাবে এ সরকারের সদস্য হবেন, তাদের নির্বাচিত করা সম্ভব কি-না, সে সম্পর্কে এ রূপরেখায় সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। তবে এ প্রস্তাবেরও কিছু দুর্বলতা চিহ্নিত করা যায়। যেমন, উল্লিখিত দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে যদি ১০ জন আলোচ্য প্রস্তাবে সাড়া দিতে রাজি না হন, সে ক্ষেত্রে কীভাবে নিরপেক্ষ সদস্য চয়ন করা হবে সে সম্পর্কে এ প্রস্তাবে কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। তাছাড়া সরকারপ্রধান মনোনীত করার ক্ষেত্রে একমত হতে না পারলে করণীয় বিকল্প সম্পর্কেও এ প্রস্তাবে বক্তব্য নেই। প্রস্তাবটি বিরোধী দল সংসদেও উপস্থাপন করে। আলোচ্য প্রস্তাব গহণ ও বাস্তবায়ন করা হলে বিরোধীদলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ হয়ে যায়। নাগরিক সম্প্রদায়ও যে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে- এমনটি মনে করার কারণ না থাকলেও সরকারি দল থেকে অতি দ্রুত এ প্রস্তাবকে ‘পশ্চাতমুখী’, ‘ষড়যন্ত্রমূলক’, ‘এতে নতুন কিছু নেই’ বলে নাকচ করা হয়েছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ আলোচ্য রূপরেখা সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, ‘তার বক্তব্যে নতুন কিছু নেই। তারা আগে থেকে অসাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি করে আসছেন, আজকে তা নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। এটা সংবিধানসম্মত নয়, বহির্ভূত। এটার কোনো গ্রহণযোগ্যতা আছে বলে আমরা মনে করি না।’ তবে বিরোধীদলীয় নেতার আলোচ্য রূপরেখাকে ‘অসাংবিধানিক’ বললেও হাছান মাহমুদ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উপস্থাপিত সর্বদলীয় সরকারের রূপরেখাকে অসাংবিধানিক বলেননি।
এক দল আরেক দলের রূপরেখাকে যদি আলোচনা না করেই অযৌক্তিকভাবে সরাসরি নাকচ করে দেয়, তাহলে পরিস্থিতি নিশ্চিত সংঘাত ও রক্তপাতের দিকে যাবে, যা কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। এখন শোনা যাচ্ছে, সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলকে আলোচনার জন্য চিঠি দেয়া হবে। এর আগেও একবার এমন উদ্যোগ গ্রহণের কথা শোনা গিয়েছিল, যদিও তা পরে বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এখন নির্বাচন কাছাকাছি আসায় সরকারের যদি এ বিষয়ে বোধোদয় হয়, তা ভালো। তবে আলোচনা করলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না। সমস্যা সমাধানের সদিচ্ছা নিয়ে আলোচনা করলেই কেবল তা থেকে ফললাভ করা যেতে পারে। পরস্পরকে কোণঠাসা করে নিজে জয়ী হওয়ার মানসিকতা নিয়ে আলোচনায় বসলে তা হবে সময়ের অপচয় মাত্র। বিরোধীদলীয় নেতার সহিংস আন্দোলন-কর্মসূচি ঘোষণার পরিবর্তে নির্বাচনকালীন রূপরেখা প্রদানের পর সরকারকেই এখন পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। ইতিমধ্যে সরকারপ্রধান সংবিধান থেকে সরে এসে কিছুটা নমনীয় হয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন। এখন দেখার বিষয়, সরকারদলীয় নিপীড়ন বা বিরোধীদলীয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-কর্মসূচি ঘোষিত হওয়ার আগেই সরকার ও বিরোধী দল আরও কিছু ছাড় দিয়ে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করতে পারে কি-না।
ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.