তারা বাঁকা পথে হাঁটছে- সাক্ষাৎকারে কাজী জাফর আহমদ by নিয়াজ মাহমুদ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ বলেছেন, বিএনপিকে বাদ দিয়ে অসাংবিধানিক পন্থায় কেউ ক্ষমতায় এলে তাতেও সমর্থন দিতে পারে আওয়ামী লীগ। বুঝেশুনেই তারা এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।
এতে সবার আগে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারা। তাদের ওপর আঘাত আসবে সর্বপ্রথম। কারণ তৃতীয় পক্ষ ক্ষমতায় এলে প্রথমে ক্ষমতাত্যাগী দলকেই আঘাত করবে। আর তাই আওয়ামী লীগ এমন কোন সিদ্ধান্ত নিলে এটি হবে ভুল সিদ্ধান্ত। এতে রাজনৈতিকভাবে আত্মহত্যা করতে পারে দলটি। ২৫শে অক্টোবর-পরবর্তী পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে গুলশানের বাসায় মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কাজী জাফর আহমদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে আওয়ামী লীগের একগুঁয়েমি, অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে দেশে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তারা বাঁকা পথে হাঁটছে। ২৫শে অক্টোবর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। শাসক দলের এটা ভুল সিদ্ধান্ত। সংঘাত অনিবার্য। রক্তপাত হবে। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতেই হবে। ১৯৭১ সালের পর এ পর্যন্ত একই সরকার এ দেশে দু’বার ক্ষমতায় আসেনি। এ অবস্থায় সরকারকে ভয়াবহ পরিস্থিতি, এমনকি গৃহযুদ্ধের মোকাবিলা করতে হতে পারে। তিনি বলেন, অতীতে বিরোধী দলের কর্মসূচি প্রতিহত করতে গিয়ে শাসক দলের জন্য অনেক খারাপ পরিণতি হয়েছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আমরাও ক্ষমতায় ছিলাম, অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি। তিনি বলেন, আগে তারা বলেছিল, ২৪শে অক্টোবর পর্যন্ত সংসদ চলবে। আর এখন বলছে, ২৪শে জানুয়ারি পর্যন্ত সংসদ বহাল থাকবে। জাতীয় সংসদ বহাল রেখে ৩০০ আসনে আরেকটি নির্বাচন অবাস্তব ও নজিরবিহীন ঘটনা। এটা হওয়া উচিত নয়। হয়তো তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রিসভা প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেবে সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য। বিধি অনুযায়ী এ সুযোগ তারা পাবেন। এ পথ অনেক আঁকাবাঁকা। আমার আশঙ্কা, মুসলিম লীগের করুণ পরিণতির দিকে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। মওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এক নয়।
কাজী জাফর বলেন, এ দেশে আর একতরফা নির্বাচন সম্ভব হবে না। সিটি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কর্মীদের মনোবল ভেঙে গেছে। পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে তারা যদি একতরফা নির্বাচন করতে চায় তা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না। ভবিষ্যতে কোন সরকার, কারা ক্ষমতায় আসবে তা হিসাব কষেই প্রশাসন কাজ করে। আমরাও সরকারে ছিলাম। ছিলাম প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সচিবালয় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চিত্র অনেকটা বদলে গেছে। প্রধান বিরোধী দল মরণপণ লড়াই করবে। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি একতরফা ও ব্যর্থ নির্বাচন হয়েছে। ওই পরিস্থিতি আর এখন এক নয়, গুণগত পার্থক্য আছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কি হবে- এ প্রশ্নে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাফর আহমদ বলেন, আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এশাদ ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, সকল বিরোধী দল বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। তিনি শেষ বয়সে কোলাবরেটর হতে চান না। তা ছাড়া হারু পার্টির সঙ্গে কেউ থাকতে চায় না। তিনি বলেন, আমরা কার্যত মহাজোটে নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছিল। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে প্রেসিডেন্ট পদ দেয়া হবে। শুধু নির্বাচনী জোট নয়, রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনায়ও অংশীদার হবে জাতীয় পার্টি। কোন কথাই রাখেনি আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের সময় ৪৭টি আসন দিয়ে আবার ১৭টি আসনে আমাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাদের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। আমার আসন, বেগম রওশন এশাদ-এর আসনেও প্রার্থী দেয় আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আত্মঘাতী ও জেদি সিদ্ধান্তে দেশের আজ এ অবস্থা।

No comments

Powered by Blogger.