সরকারকে খালেদা জিয়ার দুই দিনের আলটিমেটাম- আজকালের মধ্যে আলোচনা না করলে ৬০ ঘণ্টার হরতাল

নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে আলোচনার জন্য ক্ষমতাসীন সরকারকে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার দুই দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এই দুই দিনের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে আগামী রোববার (২৭ অক্টোবর) ভোর থেকে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

আজ শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভায় এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। তবে কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘আলোচনার পাশাপাশি সংগ্রামও চলবে।’
দাবি না মানলে টানা ৬০ ঘণ্টার এ হরতাল সারা দেশে সর্বাত্মকভাবে পালিত হবে বলে ঘোষণা দেন বিরোধী দলের নেতা। সেই সঙ্গে তিনি সবাইকে রাজপথে নেমে আসারও আহ্বান জানান। হরতাল চলাকালেও যদি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মানা না হয়, তা হলে আবারও কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বিরোধী তিনি।
আজ বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে মঞ্চে ওঠেন খালেদা জিয়া। পাঁচটার মধ্যে সমাবেশ শেষ করার জন্য গতকাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অনুমতি দেয়। সাড়ে পাঁচটার আগেই সমাবেশ শেষ করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট। ঘোষণা দেওয়ার আগেই সমাবেশের সামনের সারি থেকে নেতা-কর্মীরা ‘হরতাল’, ‘হরতাল’ বলে কর্মসূচি ঘোষণার দাবি জানাতে থাকেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাঁদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘২৭ তারিখ থেকে সরকারের বৈধতা শেষ। আপনারা নিশ্চয়ই চান আমরা কর্মসূচি দিই। আগে বক্তব্য। পরে কর্মসূচি।’ তবে শেষ পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের দাবি মেনেই হরতালের ঘোষণা দেন তিনি।

হরতালের ঘোষণা দেওয়ার আগে বক্তব্যের শুরুতে বিরোধী দলের নেতা সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। এর মধ্যে ছিল কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র, পদ্মা সেতু, সোনালী ব্যাংক প্রভৃতি। সেই সঙ্গে ১৮-দলীয় জোটের এই নেতা ক্ষমতাসীন সরকার দেশে অঘোষিত বাকশাল কায়েম করেছে বলেও অভিযোগ করেন। তিনি সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়কের জন্য আপনারা লগি-বৈঠা দিয়ে বহু মানুষ হত্যা করেছেন। আপনাদের মুখে গণতন্ত্র ও জনগণের কথা শোভা পায় না।’ সরকার একটি গুম বাহিনী গঠন করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়া। সেই বাহিনীর নামও বিএনপির জানা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রানা প্লাজা ধস, ভবনের মালিক সোহেল রানা ও তাঁর সঙ্গে সাংসদ মুরাদ জংয়ের সখ্যের কথা তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। তিনি জনগণের কাছে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘রানা কার লোক? মুরাদ জং কার লোক?’ বিরোধী দলের নেতা বলেন, ‘ওই দিন জবরদস্তি করে শ্রমিকদের কারখানায় কাজ করানো হয়। তারপর তারা মারা যায়।’ এটাই সবচেয়ে বড় মানবাধিকারবিরোধী কাজ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খালেদা জিয়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘তাদের বলব, দেশকে ভালোবাসেন। দেশের প্রতি, সরকারের প্রতি দায়িত্ব পালন করেন। অন্যায়ভাবে কারও ওপর গুলি করবেন না।’
বক্তব্যের একপর্যায়ে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, তিনি সরকারি টাকায় জনসভা করে নৌকায় ভোট চান। তবে নৌকার তলা ফুটো হয়ে গেছে। খালেদা জিয়া সংবিধানে সামান্য সংশোধনী এনে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে তার দেওয়া প্রস্তাব মেনে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া কোনো পথ নেই। প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘যে গর্ত খুঁড়ছেন, তাতে পড়বেন আপনি। আমরা জনগণকে সিঁড়ি করে পেরিয়ে যাব।’

No comments

Powered by Blogger.