সরকারকে অবৈধ বলা সংবিধানসম্মত নয় by মাহমুদ মেনন

বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া এবার বললেন, ২৭ অক্টোবরের পর সরকার পুরোপুরি অবৈধ হয়ে পড়বে। ২৫ অক্টোবর ১৮ দলের সমাবেশে দাঁড়িয়ে একথা উচ্চারণ করেন তিনি।
এর আগে ২৪ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের একটি কর্মসূচিতে খালেদা জিয়া বলেছিলেন ওইদিনই ছিলো সরকারের শেষ দিন। এরপর থেকে সরকার অবৈধ। তবে খালেদা জিয়ার এইসব বক্তব্যের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

সংবিধান ঘেঁটে দেখা গেছে  খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য সংবিধান সম্মত নয় এবং তা সংসদীয় রীতি বহির্ভূত।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৭ (৩) এবং ৫৮ (৪) অনুচ্ছেদে নির্দিষ্টভাবে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের নির্বাচনকালে বৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার নিশ্চয়তা রয়েছে। ৫৭ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই অযোগ্য করিবে না।’ একইভাবে ৫৮ (৪) অনুচ্ছেদে মন্ত্রীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘... তাঁহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাঁহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন।’

এতেই স্পষ্ট প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা সংবিধানসম্মতভাবেই তাদের অবস্থানে বহাল থাকবেন।

তবে আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সংসদের চলতি অধিবেশন চালানোর সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন যে ৯০ দিন সময় পাওয়ার কথা তা থেকে ১২ দিন কমে যাবে।

আর সংসদ যে এই অধিবেশনের পরেই ভেঙ্গে যাচ্ছে তা-ও এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এটি নির্ভর করে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের ওপর। নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। সংবিধান মোতাবেকই এই সংসদ ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকতে পারে, যদি তার আগে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙ্গে না দেন।

সংবিধানের ৭২ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভাঙ্গিয়া না দিয়া থাকিলে প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসর অতিবাহিত হইলে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবে।’

সংসদ পরিচালনার এই রীতি বিশ্বের দেশে দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান বলছে ‘গভর্নর জেনারেল আগে ভেঙে না দিলে প্রতিনিধি পরিষদের প্রথম বৈঠক থেকে তিন বছরের মাথায় পরিষদ ভেঙে যাবে।` কানাডার সংবিধানেরও একটি পদ্ধতি। সেখানে মেয়াদ ৫ বছরের।

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বক্তব্যগুলো দিচ্ছেন রাজনৈতিক ময়দানে অথবা কর্মসূচিতে। প্রথম বক্তৃতায় তিনি ২৪ অক্টোবরের পর সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেন এবং দ্বিতীয় বক্তৃতায় ২৭ অক্টোবরের পর পুরোপুরি অবৈধ হয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়ে পুলিশকেও সরকারের কোনো আদেশ না মানার আহ্বান জানান। এসব বক্তৃতায় তিনি ঠিক কীভাবে কিংবা কোন সাংবিধানিক কারণে সরকার অবৈধ হচ্ছে তার ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না।

২৭ অক্টোবরের একটি ব্যাখ্যা থাকতে পারে, এই দিন থেকে ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত ৯০ দিন সময় থাকে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফার ‘ক’ উপ-দফায় বলা হয়েছে মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাবার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে সেটি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। এক্ষেত্রে সরকার অবৈধ হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকছে না। কারণ সংসদ অবৈধ না হলে সরকারের অবৈধ হওয়ার প্রশ্ন আসে না।

যদিও ২৫ অক্টোবরের বক্তৃতায় খালেদা জিয়া আরও দুই দিন সময় দিয়েছেন সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য। এবং বলেছেন, ২৭ অক্টোবরের পর তিনি, তার দল কিংবা তার জোট সরকারের একটি কথাও আর মানবে না। এর মাধ্যমে তিনিই অন্তত আরও দুই দিনের জন্য সরকারের বৈধতা দিলেন।

এরই মধ্যে টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছেন বিরোধী নেত্রী। তবে তার সঙ্গে সঙ্গে সংলাপের সুযোগটিও জিইয়ে রেখেছেন। বলেছেন, দুই দিন সময় দেওয়া হলো সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। এ অবস্থায় সরকার সংলাপের উদ্যোগ নিলে সরকারকে বৈধতা দিয়েই হয়তো বিরোধী নেতাকে সংলাপে বসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.