যে কোন মূল্যে নির্বাচন by ওয়েছ খছরু ও চেরাগ আলী

যে কোন মূল্যে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রীর সাধ্য নেই নির্বাচন বানচাল করার।
সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ডুবন্ত নৌকায় কেউ উঠবে না- বিরোধী নেত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, নৌকা কখনও ডুবে না। ডুববেও না। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকালে সিলেটের গোলাপগঞ্জের এমসি একাডেমি মাঠে বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, বিরোধীদলী নেতা নতুনধারার রাজনীতি বলতে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের ধারা ফের চালু করার কথা বলছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র চায়। এ জন্যই এবার ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিকে উৎখাত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল দিনভর সিলেটে সফরকালে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সকাল ১০টায় তিনি সিলেটে পৌঁছে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। পরে তিনি সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭তম পদাতিক ডিভিশনের উদ্বোধন করেন।
বিকাল চারটায় হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রী জালালাবাদ সেনানিবাস থেকে সিলেটের গোলাপগঞ্জের সমাবেশ স্থলে পৌঁছান। তার আগেই কানায় কানায় ভরে উঠে এমসি একাডেমির মাঠ। পরে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চান। এ সময় তিনি বলেন, আমরা কাজ চাই। দেশের উন্নয়ন করতে চাই। আর এ উন্নয়নের সুযোগ অতীতে করে দিয়েছেন আপনারা। আগামীতে ভোট দিয়েও ক্ষমতায় বসান। উন্নয়ন উপহার দেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত নির্বাচনের সময় কথা দিয়েছিলাম ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবো। এবার ক্ষমতায় এসে বিচার শুরু করেছি। এখন রায় হচ্ছে। এ সময় বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান না। যতোই তিনি ষড়যন্ত্র করেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশন মেরুদণ্ডহীন বিরোধীদলীয় নেতার এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। আর সেই সার্চ কমিটির বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতাও গিয়েছিলেন। এটা প্রমাণ হয় সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সব সময় নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়- এটা আবারও প্রমাণিত হলো। এর ব্যাখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিগত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। তাহলে কি বিরোধীদলীয় নেতা এ পাঁচ নির্বাচন কারচুপির মাধ্যমে জয়লাভ করেছে- প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা দুপুরের আগে ঘুম থেকে ওঠেন না। কিন্তু ওই দিন তিনি সকাল সাড়ে ৮টায় ঘুম থেকে উঠে চলে গিয়েছিলেন। আর এখন বিডিআর বিদ্রোহের যতো বিচার হচ্ছে তাতে বিএনপি ও জামায়াতের আইনজীবীরা আসামির পক্ষে লড়ছেন। এতে প্রমাণ হয় কারা এ বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত। দেশে খাদ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ নানা খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে এখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। নতুনভাবে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। ডিগ্রি পর্যন্ত বই মিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের উৎপাদন ৯ হাজার মেঘাওয়াট-এ উন্নীত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময়ের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, কথা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো। গড়েছি। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখন ঘরে বসে তরুণরা আয় করছে। মোবাইল ফোন থ্রিজি চালু করা হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে পাসের হার বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সিলেটের এ সমাবেশে বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশে বলেন, ‘উনার তো বেয়াইয়ের বাড়ি সিলেটে। তারেক রহমানের শশুরবাড়ি। এ কারণে বিগত সরকারের সময় সিলেটে বেশি খাম্বা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা বিদ্যুৎ দিতে পারেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ দিয়েছে। তিনি বলেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় দেশে বোমা হামলা হয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া মারা গেছেন। সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছে। সারা দেশের ৬৩ জেলায় গ্রেনেড হামলা হয়েছে। সর্বশেষ ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এসবের পেছনে তারেক রহমান ও সাবেক চার মন্ত্রী জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।
খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে কেমন শান্তি দেবেন- প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি ক্ষমতায় এলে দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতি বাড়ে। হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করা হয়েছে। এতিমের টাকাও লুটপাট করা হয়েছে।’ এ কারণে বাংলার মানুষ আর ওদের দেখতে চায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা কখনও পালায় না। বরং যখনই গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তখনই আওয়ামী লীগ হাল ধরেছে। তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা ভোট চান না। দেশে গণতন্ত্র চান না। অর্জিত গণতন্ত্রকে উল্টো ধ্বংস করছেন। আগামী নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সব সময় ভোট চাই। গণতন্ত্র ও সংবিধান মতে ভোট চাইছি বলে মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করছি।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ ও তিনটি বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের ঘোষণা দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, আবার ক্ষমতায় এলে এমসি একাডেমিকে সরকারিকরণের প্রস্তাবটি বিবেচনায় রাখবে। তবে, গ্যাস সংযোগের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
সমাবেশে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, শেখ হাসিনা দরদ দিয়ে ও দেশের সম্পদের সঠিক ব্যবহার করে সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। এ কারণে দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। ৫ বছরে কেউ জঙ্গিবাদ দেখেনি। তিনি বলেন, দেশের গতি বজায় রাখতে দেশের মানুষ যোগ্যদেরই ভোট দেবে।
দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, নির্বাচনে অংশ না নেয়া বিরোধীদলীয় নেতার অধিকার। কিন্তু নির্বাচন হতে দেবেন না- এটা অপরাধ। আর জনগণের অধিকারে আঘাত করে বিরোধীদলীয় নেতা নিজেই নিজের শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি সংবিধানও লঙ্ঘন করেছেন বলে মন্তব্য করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিনের পরিচালনায় সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান উপস্থিত থাকলেও তারা বক্তব্য রাখেননি। সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট সৈয়দ আবু নসর, কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, হাফিজ আহমদ মজুমদার, এডভোকেট আবু জাহির, ইমরান আহমদ, মাহমুদ-উস সামাদ সামাদ চৌধুরী কয়েস, সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, গোলাপগঞ্জ পৌর মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু, ভাইস চেয়ারম্যান হুমায়ূন ইসলাম কামাল ও নাজিরা বেগম শিলা, বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাসিন মনিয়া, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খান, গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল জব্বার চৌধুরী, আবদুল ছালিক চেয়ারম্যান, বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান রুমা চক্রবর্তী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সুব্রত পুরকায়স্থ বক্তব্য রাখেন।

যাত্রা শুরু নতুন পদাতিক ডিভিশনের
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরও একটি পদাতিক ডিভিশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন রূপকল্প, ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের পথে একটি নতুন মাইলফলক উন্মোচিত হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার জালালাবাদ সেনানিবাসে ডিভিশনের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে নবগঠিত ৩৬০ পদাতিক ব্রিগেড এবং ৩২ ও ৩৩ বাংলাদেশ পদাতিক রেজিমেন্টের পতাকাও উত্তোলন করা হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৩৬০ পদাতিক ব্রিগেডের পতাকা এবং জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া যথাক্রমে ৩২ ও ৩৩ বাংলাদেশ পদাতিক রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলন করেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত দরবারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আলোকে নতুন পদাতিক, আর্মার, আর্টিলারি, বিমান প্রতিরক্ষা ও প্রকৌশল ইউনিট গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর সেনাবাহিনীর উন্নয়নে সকল বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং একটি পদাতিক ব্রিগেডসহ ২টি পদাতিক ব্যাটালিয়ন চালু করা হচ্ছে। ‘উন্নয়নের এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে  উল্লেখ করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য খুব শিগগিরই আরও দুটি পদাতিক ইউনিট ও একটি প্রকৌশল নির্মাণ ব্যাটালিয়ন নিয়ে একটি নতুন কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.