সিরিয়া ইস্যুতে পিছু হটেছে বৃটেন

মিত্রদের সমর্থন ছাড়া এখন যুক্তরাষ্ট্র একাই সিরিয়ায় হামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। বৃটিশ পার্লামেন্টে সিরিয়া ইস্যুতে ভোটাভুটিতে ওবামা মিত্র প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পরাজিত হওয়ার পর এ ধরনের চিন্তা করা হচ্ছে বলে হোয়াইট কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে।
তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিজের স্বার্থের কারণে সিরিয়াতে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র কেটলিন হেডেন এক বিবৃবিতে বলেছেন, বৃটিশ পার্লামেন্টে ভোটাভুটির পরেও যুক্তরাষ্ট্র বৃটেনের সঙ্গে শলাপরামর্শ চালিয়ে যাবে। হেডেন বলেন, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন এবং যেসব দেশ আন্তর্জাতিক নীতিমালা লঙ্ঘন করে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে তাদেরকে তারা জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে চান। সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের শাস্তি হিসেবে এর বিরুদ্ধে সব ধরনের শক্তি ব্যবহারের প্রশ্নে খসড়া প্রস্তাব নিয়েও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন সদস্য দেশগুলোও এখন দ্বিধায় পড়েছে। বৃটেনে ইতিহাসে প্রথম বারের মতো বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে এমপিদের তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা এক ঘরে হয়ে পড়ে। পার্লামেন্টে বিরোধিতার মুখে অবশেষে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে সিরিয়াতে মার্কিন হামলার সঙ্গে এখন আর একাত্বতা ঘোষণা করবেন না। সিরিয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের প্রস্তাব বৃটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউজ অব কমন্সের ভোটাভুটিতে নাকচ হয়ে গেছে। এ সংক্রান্ত সরকারি বিলটি বৃহস্পতিবার রাতে ১৩ ভোটে নাকচ হয়। এতে সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের বিপক্ষে ২৮৫ ভোট পড়ে, আর ক্যামেরনের প্রস্তাবকে সমর্থন দেন ২৭২ জন। বৃটিশ পার্লামেন্টে গ্রীষ্মকালীন ছুটির মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই বিশেষ অধিবেশনের ডাক দিয়েছিলেন। বিব্রতকর পরাজয়ের পর ক্যামেরন বলেন, সিরিয়ায় যা ঘটেছে তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া জরুরি ছিল বলে আমি মনে করি। তবে এটা স্পষ্ট যে বৃটিশ পার্লামেন্ট কোন ধরনের সামরিক অভিযান চায় না। সরকার পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানাবে। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে যুক্তরাজ্যের যোগ দেয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ডেভিড ক্যামেরনের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়া কঠিন হয়ে এলো বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১৭৮২ সালের পর ক্যামেরনই হলেন প্রথম বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী, যার সামরিক প্রস্তাব পার্লামেন্টের অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হলো। বৃটিশ পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন নাজেহাল হবার পর হোয়াইট বলেছে প্রেসিডেন্ট ওবামা দেশের স্বার্থেই সিরিয়াতে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জবাব দিতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে ওয়াশিংটন বৃটেনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবে। বৃটিশ পার্লামেন্টে সিরিয়া অভিযানের বিরুদ্ধে ভোটের ব্যাপারে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চুক হেগেল গতকাল বলেছেন ওয়াশিংটন বৃটেনের ভোটের বিষয়টিকে সম্মান জানাচ্ছে। ফিলিপাইন সফরে থাকা হেগেল বলেছেন প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে দায়দায়িত্ব রয়েছে। আমরা যে কোন রাষ্ট্রের এ প্রক্রিয়াকে সম্মান জানাই। তিনি বলেন বৃটেনের এ ধরনের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রেক্ষিতেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ওবামা প্রশাসনের লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কট্টরপন্থি ব্যক্তি সিরিয়াতে সামরিক অভিযানের ব্যাপারে সতর্কবাণী দিলেও জাতিসংঘের সমর্থন ছাড়াই সিরিয়া অভিযান চালানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে। ইরাক এবং আফগানিস্তান অভিযানে রূপরেখায় সহায়তাকারী সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড বলেছেন এ বিশেষ পরিস্থিতি অভিযানের ব্যাপারে আমাদের কি স্বার্থ রক্ষা হতে পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কোন স্বার্থ যদি থেকেই থাকে তাহলে ইরানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেশি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন লন্ডনে বৃহস্পতিবার ভোটাভুটির পর যুক্তরাষ্ট্র একাই সিরিয়ার অভিযানে অংশ নেবে। বৃটেনের পার্লামেন্টে বৃহস্পতিবার ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু সিরিয়া সঙ্কট প্রশ্নে কোন অগ্রগতি ছাড়াই সেটা শেষ হয়েছে। এদিকে ফ্রান্স এক ঘোষণায় বলেছে প্রেসিডেন্ট যদি কোন ধরনের সামরিক অভিযানে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সে লক্ষ্যে এর সশস্ত্র বাহিনীকে সতর্ক রাখা হয়েছে। চার মাসের কম সময়ের জন্য স্থায়ী কোন সামরিক অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্টের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয় না। চীনের পক্ষ থেকেও কোন পক্ষ অবলম্বন না করে সিরিয়া সরকারের প্রতি বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ তার বিরুদ্ধে আনা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে যে কোন ধরনের আগ্রাসন প্রতিহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়ার মাটিতে কোন মার্কিন সেনার অভিযান বা এর বিরুদ্ধে কোন ধরনের উড্ডয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে কোন ধরনের মার্কিন অভিযান হবে বেশ সীমিত আকারে এবং এর লক্ষ্য হবে কেবল রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য আসাসকে শাস্তি দেয়া। সিরিয়াতে সরকার পরিবর্তনকে এ অভিযানের লক্ষ্য বস্তু করা হবে না। এ জন্য পূর্বাঞ্চলীয় ভূমধ্যসাগরে অবস্থানকারি নেভি ডেস্ট্রয়ার থেকে টমাহক ক্রুজ মিসাইলের মাধ্যমে হামলা চালানোর সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।  
জার্মানি ও ফ্রান্সের হামলায় যোগ দেয়ার সম্ভাবনা নাকচ
সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর সামরিক অভিযানে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে জার্মানি ও ফ্রান্স। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ওয়েস্টারওয়েল্লে জার্মানির একটি প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, সিরিয়া অভিযানে যোগ দেয়ার কোন সম্ভাবনা জার্মানির নেই। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর অন্যতম প্রভাবশালী দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এ ধরনের সামরিক হামলার জন্য আমরা কখনও আহ্বানও জানাইনি অথবা এ ধরনের হামলার কথা বিবেচনাও করিনি। এর আগে, বৃহস্পতিবার তুমুল বিতর্কের পর সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত নাকচ হয়ে যায় যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে। হামলার সিদ্ধান্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র যুক্তরাজ্য সরে যাওয়ার পর সুর নরম করে ফ্রান্সও। শুক্রবার ফরাসি দৈনিক লা মাঁদ’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের কণ্ঠে নমনীয়তার ইঙ্গিতই পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে সিরিয়ায় অভিযানের বিষয়টি নাকচ হয়ে যাওয়ায় ফ্রান্স আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে না দাবি করলেও ওঁলাদে বলেছেন, সামরিক হস্তক্ষেপের সব পথই খোলা। তবে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে সরকারি বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া ছাড়া এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। এছাড়া, আগামী বুধবারের আগেই সম্ভাব্য হামলার সিদ্ধান্ত এখনও বাতিল করা হয়নি বলে জানান ওঁলাদে।

No comments

Powered by Blogger.