অনলাইন থেকে : জ্যাসন বার্ক-নির্বাচনেই রাজনৈতিক শক্তির পরীক্ষা হবে

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশে রাজনীতি ও ইতিহাস অতি দ্রুত একে অপরকে প্রভাবিত করে মিশে যায়। সত্যিই, এ দুটি বিষয় কখনো আলাদা হয়নি। কয়েক দশক ধরে এ দেশের অস্থিরতা, দারিদ্র্য, জনসংখ্যার চাপ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় বর্তমানকে স্পষ্ট করে দেয়।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা তড়িঘড়ি করে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের ডোমিনিয়নগুলোকে ভারত এবং মুসলিম-অধ্যুষিত পাকিস্তানে বিভক্ত করে দেয়। পাকিস্তানের ছিল তখন দুটি অংশ। একটি উর্দুভাষী পশ্চিম পাকিস্তান, যার সীমান্ত রয়েছে আফগানিস্তানের সঙ্গে; আরেকটি ১৪০০ মাইল দূরে পূর্ব পাকিস্তান, যার সীমান্ত রয়েছে মিয়ানমারের সঙ্গে। এ দুটি অংশ কখনোই একত্র ছিল না। তারা ভিন্ন ভাষায় কথা বলত, ধর্মীয় ঐতিহ্য ছিল আলাদা, অনুসরণ করতও পৃথক নেতাদের।
কয়েক বছর উত্তেজনার পর ১৯৭১ সালে একটি নৃশংস যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশভাগ হয়ে যায়। স্থানীয় ইসলামিস্টদের সহায়তা এবং পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানোর পরও পশ্চিম পাকিস্তান পরাজিত হয়। ভারত তখন পূর্ব পাকিস্তানকে সহায়তা করে। পরবর্তী সময়ে বিতর্ক হলেও স্বাধীনতাযুদ্ধের ক্যারিশম্যাটিক নেতা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, যাঁর ছবি এখন বাংলাদেশের সব সরকারি অফিসে টাঙানো। বর্তমান সরকারে নেতৃত্বদানকারী সেক্যুলার হিসেবে সুপরিচিত এবং বামঘেঁষা আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিরোধী দল বিএনপি অধিক ধর্মপ্রবণ এবং অধিক ব্যবসামুখী। এ দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একজন সৈনিক, যিনি ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবকে হত্যার পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঘটনাক্রমে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনা শেখ মুজিবেরই কন্যা, যিনি স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতার গোটা হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়ার সময় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ঘটনাক্রমে শেখ মুজিবের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন এবং ১৯৮১ সালে তিনি নিজেও নিহত হন।
বাংলাদেশের ইসলামপন্থীরা নির্বাচনের দিক দিয়ে পেছনের দিকে, কিন্তু তার পরও তারা বেশ কয়েক গণ্ডা গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী আসনের ফলাফলকে পাল্টে দিতে পারে। এরা বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ। তারা কখনোই স্বীকার করেনি যে ৪২ বছর আগে তারা কোনো ভুল করেছিল। ১৯৭১ সালের ঘটনা তদন্তে গঠিত ট্রাইব্যুনাল সরকারের একটি ইতিবাচক রাজনীতি ছিল। শুধু যে এই বিচারের ফলে আওয়ামীবিরোধী সিনিয়র নেতারা অপসারিত হবেন- বিষয়টি তা নয়, এটি জনসমর্থনও পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের, বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়ের প্রবল আকাঙ্ক্ষা, যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচার হোক। বিএনপি দোসর হওয়ায় দলটি জনগণের কাছে খাটো হয়েছে।
কিন্তু দুই দলের সত্যিকারের শক্তি পরীক্ষার দিন সামনে। আগামী শীতে নির্ধারিত নির্বাচন সহিংসতাপূর্ণ হবে বলে মনে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ বলছে, যদিও ক্ষমতাসীনরা সাধারণত পরাজিত হয়, তার পরও তারা গ্রামাঞ্চলে শক্তিশালী এবং জয় তাদের পক্ষে আসতে পারে। আর বিএনপি এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে যুক্তি দিচ্ছে যে সম্প্রতি স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফলেই দেখা গেছে জয় তাদের পক্ষেই আসবে। মনে হয় না যে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের প্রধান দাবি নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সম্মত হবে।
বিএনপি বড় ধরনের প্রতিরোধ-বিক্ষোভের আয়োজন করবে- এ লক্ষ্য নিয়ে যে দেশ পরিচালনার আর অবস্থা থাকবে না। দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত শত্রুতা এতটাই তীব্র যে কোনো সমঝোতায় আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। দুই দলের সংশ্লিষ্টরাই স্বীকার করেন যে অবধারিত সংঘাতে বহু লোকই আহত হবে কেউ কেউ সম্ভবত নিহতও হবে। এ সপ্তাহের সংঘাত ছিল তারই একটি মহড়া।
লেখক : ব্রিটেনের গার্ডিয়ান ও অবজারভারের দক্ষিণ এশিয়া করেসপনডেন্ট। গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.