বলিউডের আলোচিত আত্মহত্যা by সিয়াম আনোয়ার

আলোর নিচে অন্ধকার- বলে বাংলায় একটা কথা আছে। যার কারণে বাইরের দিকটা আলোকিত হয়, কিন্তু নিজের ভিতরটাই রয়ে যায় আঁধারে ঢাকা।
বলিউড আলো যে শুধু চোখই ঝলসে দিতে পারে তা কিন্তু না, বলিউডেও আলো ফিকে হয়। গভীর আঁধারের ছোঁয়া আছে এ ভূবনেও।

যে মানুষগুলোর পর্দার কান্ডকীর্তি অন্যদের আনন্দ দেয়, কখনোবা দুঃখটাও ভোলায়; সে মানুষগুলোর জীবনের দুঃখের অংশটা কেমন?

গ্ল্যামার, খ্যাতি আর সম্পদ, স্বীকৃতি- কতটা সন্তুষ্ট করতে পারে একটা জীবনকে?

সোমবার রাতে আত্মহত্যা করেছেন বলিউড অভিনেত্রী জিয়া খান। স্বাভাবিকভাবেই বলিউড পাড়ায় শুরু হয় শোকের মাতম। অনুসন্ধান চলছে কেন, কী কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন ক্যারিয়ারের মাঝপথে থাকা এ অভিনেত্রী?

বলিউডে এমন আত্মহত্যার ঘটনা এটাই অবশ্য প্রথম নয়। ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে থাকাবস্থায়ও অনেকে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন।

এসব তারকাদের মধ্যে থেকে কয়েকজনের আত্মহুতির নানা কথা জানা যাক।

পারভীন ববি
সত্তর দশকের অভিনেত্রী পারভীন ছিলেন সুন্দরীদের একজন। সময়ের প্রেক্ষাপটে ছিলেন সমসাময়িক অন্যদের চেয়ে আধুনিক। পোশাক-পরিচ্ছদে চলা ফেরায় ছিলেন ‘সাহসী’। তখনকার আইটেম গানে ছিল নিয়মিত উপস্থিতি।

মাঝে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে করেছেন ‘মজবুর’, অমর-আকবর-অ্যান্টনি’র মত জনপ্রিয় ছবি। তবে আলোচনায় ছিলেন অন্য কারণে। মহেশ ভাটের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলিউড পাড়ার মুখরোচক গল্প। ‘প্রমাণ‘ও আছে। স্বয়ং মহেশ ভাটই পারভিনের সাথে সম্পর্কের গল্প নিয়ে তৈরী করছেন ‘উহে লামহে’। ছবিটি মুক্তি পেয়েছে ২০০৬ সালে। প্রেমের স্বীকৃতি বাস্তবে না দিলে পর্দার আশ্রয় নিয়ে ঠিকই দিলেন মহেশ ভাট।

শেষ জীবনে দারুণ কষ্টে ছিলেন পারভিন। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন। একসময় যুক্তরাষ্ট্রেও পাড়ি জমান শান্তির জন্য। ১৯৯২ সালে দেশে ফিরে এসে আবারো শুরু করেন পার্টিতে ঘুরাঘুরি। এখানে ওখানে অনেকের সঙ্গেও চললেন, থাকলেন, সময় কাটালেন।

কিন্তু কারো সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আর জড়ানো হয়নি। কে জানে হয়তো কেউই চায়নি ঘরনী করতে। যে মেয়েকে এমনিতেই পাওয়া যায়, তাকে আবার কষ্ট করে স্বীকৃতি দেয়ার কী দরকার! এসব দুশ্চিন্তার সঙ্গে যোগ হল বয়সের ছাপ।

আস্তে আস্তে মুটিয়ে গেলেন। মানসিকভাবে হলেন বিপর্যস্ত। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন। অদ্ভুত অদ্ভুত সব অভিযোগ নিয়ে যেতেন আদালতে। এভাবে খানিকটা নিরবে খানিকটা সরবে বেঁচে ছিলেন। একা থাকতেন মুম্বাইয়ের এক ফ্ল্যাটে।

২০০৫ সালের একদিন তার প্রতিবেশি পুলিশকে খবর দেন যে ববি তিনদিন ধরে দরজা খুলছেন না। এমনকি খাবারের জন্যও বের হচ্ছেন না। পুলিশ তার ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙ্গে সেখানে পারভিনের লাশ পান। ডাক্তারী রিপোর্টে জানা যায়,  কয়েকদিন আগেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

দিব্যা ভারতী
মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তার জীবনাবসান ঘটে। বলিউডে পাঁ রাখার বয়সও দুই বছর পূর্ণ হয়নি। বলিউডের ছবিতে শাহরুখের সাথে দিওয়ানা, দিল আসনা হ্যায়‘র মতো ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৯৩ সালে পেয়েছিলেন ফিল্মফেয়ার সেরা নবাগতার পুরস্কার। বিয়ে করেছিলেন প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াওয়ালাকে। সবই ছিল আনন্দের। কোথাও কোন ঝুট ঝামেলা নেই।

হঠাৎ দেখা গেল, ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল মুম্বাইয়ের পাঁচ তলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং থেকে পড়ে তার মৃত্যু। খুন নাকি এটা আত্মহত্যা এটি অবশ্য জানা যায়নি। যদিও ১৯৯৮ সালে পুলিশি তদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে- অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের কারণেই মৃত্যু হয়েছিল দিব্যা ভারতীর।

গুরু দত্ত
২০১০ সালে  সিএনএনের দৃষ্টিতে এশিয়ার সেরা ২৫ অভিনেতার একজন গুরু দত্ত। গুরু দত্ত বিয়ে করেছিলেন গীতা দত্তকে। বাজি, পিয়াসা, সাহেব বিবি আওর গুলাম, কাগজ কি ফুল এর মতো জনপ্রিয় ছবির অভিনেতা এবং প্রযোজক ছিলেন গুরু দত্ত। ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ, তবে শূন্য ছিল ব্যাক্তি জীবনের শান্তির ভান্ডার। সংসার জীবনে সুখী ছিলেন না।

নায়িকা ওয়াহিদা রেহমানের সঙ্গে প্রেম ছিল বলে জানা যায়। আর এ নিয়ে বাদানুবাদের ফলেই শেষ পর্যন্ত গীতার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি। তবে এরপর বোধহয় হুঁশ ফেরে গুরু দত্তের। স্ত্রী হারানোর বেদনায় অতিরিক্ত মদ্যপানে জড়িয়ে পড়েন।

দুইবার চেষ্টা করেছেন আত্মহত্যার। দু’বারই বেঁচে গিয়েছেন। তবে শেষমেষ ১৯৬৪ সালে তাকে মুম্বাইয়ের ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে মদ্যপান করতেন নিয়মিত। সেটাই ছিল মৃত্যুর ডাক্তারি কারণ।

সিল্ক স্মিতা
প্রায় ১৭ বছর ধরে অভিনয় করেছেন। বলিউড ইন্ডাষ্ট্রিতে টিকে থাকার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে কখনো কার্পণ্য করেননি। দক্ষিণ থেকে আসা এ নায়িকা অভিনয় করেছেন ৪৫০ এরও বেশি ছবিতে। খোলামেলা চরিত্রের জন্য ডাক পড়ত তার। প্রেমে পড়েছিলেন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে।

কিন্তু পারভিন ববির মত তার কপালেও স্থায়ী কিছু জোটেনি। প্রেমে ছিলেন ব্যর্থ। শত শত ছবিতে অভিনয় করেও কপর্দকশূণ্য দিনও যাপন করতে হল। ১৯৯৬ সালে তাই আত্মহত্যা করে বসেন। সিনেমায় আসা, প্রতিষ্ঠা হওয়া আর জীবন যাপনের জন্য এত বেশি আলোচিত ছিলেন যে তাকে নিয়ে ছবিও নির্মিত হয়েছে।

বলিউডের অন্যতম আলোচিত ছবি ‘ডার্টি পিকচার’ নির্মিত হয়েছে সিল্ক স্মিতার জীবনী নিয়েই। অভিনয়ের চেয়ে শরীর প্রদর্শনের জন্য পরিচিতি ছিল। চেন্নাইয়ের বাসভবনে পাওয়া যায় তার মৃতদেহ।

কুনাল সিং
২০০৮ সালে নিজের ফ্ল্যাটে ফাঁস দেয়া অবস্থায় পাওয়া যায় বলিউডের এই তরুণ অভিনেতাকে। কোন সুইসাইড নোট অবশ্য পাওয়া যায়নি। একই ফ্ল্যাটে থাকা লাভিনা ভাটিয়া নামের এক মেয়েকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পরে ছেড়ে দেয় কোন প্রমান না পাওয়ায়। তার উল্লেখযোগ্য ছবি ছিল ‘দিও হি দিল’। মৃত্যুর পেছনের আজও রহস্যাবৃত।

No comments

Powered by Blogger.