আদালত অবমাননা: ৩ জামায়াত নেতার জেল-জরিমানা

ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বক্তব্য ও দেশে ‘গৃহযুদ্ধের’ হুমকি দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ৩ জামায়াত নেতাকে জেল-জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
৩ নেতার মধ্যে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপিকে ৩ মাস করে কারাদণ্ড ও ৩ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ সপ্তাহ করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহকারী সেক্রেটারি মো. সেলিম উদ্দিনকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ট্রাইব্যুনাল। রোববার সারা দিন সেলিম উদ্দিনকে ট্রাইব্যুনালে থাকতে হবে।

রোববার এ আদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

জামায়াতের ওই ৩ নেতাকে গত ২১ এপ্রিল আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন ট্রাইব্যুনাল। ৩ জনের মধ্যে সেলিম উদ্দিন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও অন্য দুই নেতাকে ট্রাইব্যুনালের আদেশের তিন মাস পরও গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেওয়া ও দেশে ‘গৃহযুদ্ধের’ হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের এ তিন নেতার বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে শো’কজ নোটিশ জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু বার বার সময় নিয়েও হাজির না হওয়ায় গত ৬ মার্চ জামায়াতের ওই ৩ নেতাকে ২১ মার্চের মধ্যে গ্রেফতার করে তাদের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ৭ মার্চ রাতে সেলিম উদ্দিন গ্রেফতার হয়ে ১০ মার্চ জামিন পান। তবে তিনি অন্য মামলায় কারাগারে আটক রয়েছেন।

২১ মার্চ সময় বাড়িয়ে অন্য দুই নেতা রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ এমপিকে ১০ এপ্রিলের মধ্যে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে ফের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১০ এপ্রিল এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, ওই দুই নেতা পলাতক। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ওই দিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ২১ এপ্রিলের মধ্যে জামায়াতের বাকি দুই নেতাকে গ্রেফতার অথবা এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের পুনরায় নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

২১ এপ্রিল শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল ৩ জনকেই আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত করে আদেশ দেন।

এদিকে কয়েক দফা সময় নিয়ে গত ২ জুন তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন মো. সেলিম উদ্দিন। ওই দিন আইনজীবীর মাধ্যমে বক্তব্যের লিখিত ব্যাখ্যায় ও ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। সেলিমের এ বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়ে ৩ নেতার আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে ৯ জুন আদেশ দানের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মতিঝিলে জামায়াতের এক সমাবেশে ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘‘দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবেন না।’’

সব কিছু হিসাব করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে হুশিঁয়ারি করে দেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘একটা রায়ই শেষ নয়। রায়ের পর রায়, এরপর বহু প্রতিক্রিয়া আছে। বিষয়টি হালকাভাবে দেখলে চলবে না। দেশকে ‘গৃহযুদ্ধ’ থেকে বাঁচাতে হলে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই।’’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে একই সমাবেশে হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, ‘‘স্কাইপে সংলাপের গোপন তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর এ ট্রাইব্যুনাল আর এক মুহূর্তও চলতে পারে না।’’

এছাড়া রফিকুল ইসলাম খান গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রেস ব্রিফিংয়ে একই ধরনের বক্তব্য দেন।

এ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এ সংবাদের সূত্র ধরে ৭ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে শো’কজ নোটিশ জারি করে সশরীরে হাজির হয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সুয়ামোটো (স্বত:প্রণোদিত) আদেশ দেন।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্রাইব্যুনাল জানান, ‘‘জামায়াত নেতারা ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধ ও ট্রাইব্যুনালকে বিভিন্ন হুমকি দেন। তারা ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে বিতর্কিত বক্তব্য দেন, যা আদালত অবমাননার শামিল।’’

No comments

Powered by Blogger.