আন্দোলনে নামছে গার্মেন্ট শ্রমিকরা by মেহেদী হাসান পিয়াস

নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার টাকার দাবিতে ফের বৃহত্তর আন্দোলনে নামছে গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠনগুলো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের পর শ্রমিকদের নামে
দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং ব্যাপক হারে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে সংগঠনগুলো বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার কথা চিন্তা করছে।

গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও আশেপাশের বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে মামলা দিয়ে শ্রমিকদের ব্যাপক হারে ছাঁটাই করা হচ্ছে।

এ নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ কাজ করছে। যেকোনো সময় আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে এসব শিল্পাঞ্চল।

শ্রমিক নেতারা বলছেন, শ্রমিকদের অব্যাহত আন্দোলনে সরকার এরই মধ্যে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করলেও গার্মেন্ট মালিকদের চাপের কারণেই অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার শ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে না। আর ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার না দেওয়ার কারণেই বেআইনিভাবে নামমাত্র পাওনা দিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে।  

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে উৎপাদনের আগে পিসরেট নির্ধারণ, আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ ধারা অনুসারে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করা ছাড়াও নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার টাকা ও সকল গ্রেডে আনুপাতিকহারে মজুরি নির্ধারণ নিশ্চিত করতেই বৃহত্তর আন্দোলনের কথা ভাবছেন এসব সংগঠনের নেতারা।

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরী সভাপতি সাদেকুল রহমান শামীম বাংলানিউজকে বলেন, “সম্প্রতি মজুরির দাবিতে ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনে পুলিশ, ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন ও গার্মেন্ট মালিকদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের হামলায় অনেক গার্মেন্ট শ্রমিক আহত হয়েছেন। আন্দোলন দমন করতেই এখন শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ছাঁটাই করার কৌশল গ্রহণ করেছে মালিক পক্ষ।”

তিনি জানান, গত ২৪ মে থেকে এ পর্যন্ত সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানা থেকে পাঁচ শতাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে।

এর মধ্যে আইডিয়ালস গ্রুপের ফ্যাশনস ফোরাম, সোনিয়া গার্মেন্ট লিমিটেড, সাফা সোয়েটার, সাদাদীয়, নেচারাল ডেনিম, সেতারা গার্মেন্ট লিমিটেড থেকে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সংখ্যা বেশি। সাভার-আশুলিয়া ছাড়াও গাজীপুর, তেজগাঁও এলাকায় এখনো শ্রমিক ছাঁটাই অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, “কোনো কোনো এলাকায় শ্রমিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোর কার্যালয়ে হামলা চালাচ্ছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা। শনিবার বিকেলে আশুলিয়ার ছয়তলা এলাকার বটতলায় গার্মেন্ট ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।

তাছাড়া মামলা-হামলা ও কথায় কথায় ছাঁটাইয়ের কারণে চাকরি নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। এভাবে একের পর এক আঘাত এলে শ্রমিকরা চুপ করে বসে থাকবে না।” এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেন নি।

এদিকে গার্মেন্ট শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম পথিক বাংলানিউজকে বলেন, “রানা প্লাজা ধসে আহত-নিহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা এবং প‍ুর্নবাসনের ব্যবস্থাসহ নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার টাকা, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, শ্রম আইন সংশোধন, শ্রমিকদের দমন-পীড়ন-নির্যাতন-ছাঁটাই-বরখাস্ত বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ, বিজিএমইএ অভিমুখে পদযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হব।”

ব্যাপকহারে শ্রমিক ছাঁটাই, শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন এবং নিম্নতম মজুরির দাবির যৌক্তিকতা বিষয়ে জানতে চাইলে গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বাংলানিউজকে বলেন, “বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গার্মেন্ট  শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করা এ শিল্পের জন্যই জরুরি হয়ে পড়েছে।

আগামী সপ্তাহে বোর্ডের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সব ধরনের কারখানার শ্রমিক, মালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করব।”

No comments

Powered by Blogger.