নগরে অনাগরিক বাস্তবতা

দ্বিখণ্ডিত সিটি করপোরেশন অখণ্ড সিটি করপোরেশনের অদক্ষতার উত্তরাধিকারই বহন করছে। সিটি করপোরেশনের যেসব সেবা দেওয়ার কথা, নাগরিক জীবনের এ রকম হাজারো সমস্যা নিয়ে সিটি করপোরেশন অতীতে যেমন চলছিল তেমনই চলছে। বলা হয়েছিল, সিটি করপোরেশনকে উত্তর-দক্ষিণে বিভক্ত করা হলে সেবা-সুবিধা বাড়বে। কার্যত কি তা বেড়েছে? বছরের পর বছর রাজধানী ঢাকার নাগরিক-সুবিধার বেলায় কোনো অগ্রগতি নেই। রাজধানীতে একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত গবেষণা বলছে, এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনগণ মনে করে যে নাগরিক সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামায় না সিটি করপোরেশন। গবেষণায় দুর্নীতিকেই করপোরেশনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শহর যেভাবে বাড়ছে, সেই হারে সিটি করপোরেশনের প্রকল্প উদ্যোগ ও সেবা-তৎপরতা বাড়ছে না। নগরবাসীর দাবি হচ্ছে গতিশীলতা। অথচ ঢাকা প্রায় স্থবির এক নগর। প্রাপ্তির মধ্যে আছে কেবল উড়ালসড়ক। রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থা গতিশীল করতে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি দূরদর্শী পরিকল্পনা। যোগাযোগ অবকাঠামো থেকে শুরু করে গণপরিবহনের ক্ষেত্রে ঢাকা এখনো মান্ধাতার আমলেই পড়ে আছে। অন্যদিকে উন্নয়ন-সংস্কার ইত্যাদি যা প্রধান সড়কেই বেশি হয়, অলিগলির অবস্থা তথৈবচ। বহু এলাকার রাস্তা প্রশস্ত করা দরকার, বহু এলাকার পানি ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার আধুনিকায়ন জরুরি। মনোযোগ দেওয়া উচিত নিরাপদ আবাসন, যোগাযোগ ও পানিনিষ্কাশনের দিকে। বর্ষাকাল আসছে, অথচ এই সময়টাই শহরের রাস্তাজুড়ে দেখা যায় খোঁড়াখুঁড়ি। এর পেছনে দুর্নীতি ও উদাসীনতা ছাড়া আর কী কারণ আছে?
রাজধানীতে অজস্র পার্ক ও খেলার মাঠ বেদখল বা পরিত্যক্ত হয়ে আছে। নগরকর্তাদের মনে রাখা উচিত, এই শহর শিশু-কিশোরদেরও এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ এখানে নেই। সিটি করপোরেশনকে অভিজাত এলাকার বাইরে তাকাতে হবে, সেখানকার পার্ক ও মাঠগুলোকে সংস্কার করে সবুজের সমারোহ আনতে হবে। পুরাতন বিমানবন্দর এলাকাকে নগর চত্বর করার প্রস্তাব নাগরিক মহলে রয়েছে। এ ব্যাপারেও তৎপর হতে হবে। একুশ শতকে নাগরিক জীবন মানে গতির স্বাধীনতা ও স্বাচ্ছন্দ্য। তিনটিরই বড় অভাব ঢাকা শহরে। নগরকর্তারা কি দৈনন্দিন কাজ ছাপিয়ে উঠে একুশ শতকের উপযোগী নগর নিয়ে চিন্তা করবেন?

No comments

Powered by Blogger.