অনিশ্চিত সংলাপ- সবাইকে মূল্য দিতে হবে

নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপের সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সংলাপের ব্যাপারে বিরোধী দল যতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল ততটাই দূরত্ব সৃষ্টি করছে।
জাতিসঙ্ঘ সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দল সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বিরোধী দলের সাথে যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় আলোচনা হতে পারে। এরপর বিরোধী দলের কাছে আলোচনার জন্য চিঠি দেয়া হচ্ছে, এমন আভাসও দেয়া হয়। জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতাসহ অপরাপর রাজনৈতিক দল ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন। আলোচনা শুরু হচ্ছে এমনটাই আশাবাদ প্রকাশ করেন।

জাতিসঙ্ঘ সহকারী মহাসচিবের ঢাকা ত্যাগের সাথে সাথে সংলাপের আবহ বদলাতে থাকে। বিরোধী দলের নেতারা সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহী হলেও প্রধানমন্ত্রী সংসদে এসে আলোচনার সেই পুরনো কথাই আবার বলেছেন। ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন। একইভাবে বিরোধী দলের প্রতি সরকারের কঠোর মনোভাবেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি। একের পর এক আবেদন নিবেদন করে বিরোধী দল রাজধানীতে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আরো একজন সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দুই দলের মধ্যে সংলাপ হবে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই।

প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলকে সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে যে কৌশল নিয়েছে, তা পুরোপুরিভাবে সফল হয়েছে। এমন এক সময় সংলাপের প্রস্তাব দেয়া হয়, যখন সাভারে ভবনধসে এক হাজারের বেশি শ্রমিকের মৃত্যু ও বিরোধী দলের লাগাতার কর্মসূচির কারণে সরকার বেশ বেকায়দায় পড়েছিল। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকেও সরকারের ওপর আলোচনার জন্য  চাপ ছিল। এখন বর্ষা মওসুম ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলের পক্ষে কঠোর কোনো আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। কিন্তু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ধরপাকড় পুরোদমে চালানো যাবে। এই সময়ের মধ্যে সরকার একক নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলতে পারে। এ অবস্থায় বিরোধী দলের সাথে আদৌ সংলাপ হবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

কার্যত ক্ষমতাসীন দলের অনড় অবস্থানের কারণে রাজনৈতিক সমাঝোতার পথ এখন রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। হয়তো শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলের অস্তিত্ব নির্ভর করবে রাজপথের আন্দোলনের ওপর। সাময়িকভাবে সরকার কৌশলে বিরোধী দলকে মোকাবেলায় সফল হলেও এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। দেশ দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়বে। সঙ্ঘাত ও হানাহানি বাড়বে। যার খেসারত দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সে জন্য সরকারের উচিত এখনই বিরোধী দলের সাথে আলোচনা শুরু করা। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসতে না পারলে দেশে রক্তাক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। দুই পক্ষকেই চরম মূল্য দিতে হতে পারে। কারণ কেউই জোর করে ক্ষমতায় দীর্ঘস্থায়ী হতে পারবে না। এ দেশের ইতিহাস তা স্বীকার করে না।

No comments

Powered by Blogger.